টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা ও বাংলাদেশ আমাদের করণীয়
>৯ ফেব্রুয়ারি ২০১৬, প্রথম আলো ও স্ট্যান্ডার্ড চার্টার্ড ব্যাংকের আয়োজনে ‘টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা ও বাংলাদেশ: আমাদের করণীয়’ শীর্ষক গোলটেবিল বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। অনুষ্ঠানে উপস্থিত আলোচকদের বক্তব্য সংক্ষিপ্ত আকারে এই ক্রোড়পত্রে প্রকাশ হলো।

এমডিজি থেকে এসডিজির পরিসর অনেক বড়। বাংলাদেশ এমডিজি অর্জনে সাফল্য দেখিয়েছে। সবাই পরিকল্পিতভাবে কাজ করলে এসডিজি অর্জনও সম্ভব হবে। তবে এত বিশাল কাজ সম্পন্ন করতে হলে রাষ্ট্রের সর্বোচ্চ পর্যায় থেকে শুরু করে স্থানীয় পর্যায় পর্যন্ত সমন্বিতভাবে কাজ করতে হবে।
এসডিজিতে ১৭টি লক্ষ্য, ১৬৯টি টার্গেট রয়েছে।
এসডিজি প্রণয়নে বিভিন্ন স্টেকহোল্ডারের প্রায় ৯০ লাখ মানুষের মতামত নেওয়া হয়েছে।
জনগণ এখন আর কেবল উপকারভোগী নয়, তারা দেশের অংশীদার। যেকোনো কাজ তাদের সম্পৃক্ত করে করতে হবে।
সিএসআরের কার্যকর ব্যবহার নিশ্চিত করা প্রয়োজন। এসডিজি অর্জনে সিএসআর গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে পারে।
এসডিজিতে বাইরের অর্থায়ন হওয়ার সম্ভাবনা খুবই কম। নিজস্ব অর্থায়নের বিষয় গুরুত্বের সঙ্গে ভাবতে হবে।
আলোচনায় সুপারিশ
তরুণ-তরুণীদের কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করতে হবে। প্রতিবছর তাঁদের একটি অংশ বেকার থেকে যাচ্ছে
তথ্য–উপাত্ত সঠিক না হলে কোনো সিদ্ধান্ত ফলপ্রসূ হবে না। তথ্য–উপাত্ত সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠানের অারও দক্ষতা বাড়ানো প্রয়োজন
তরুণ–তরুণীদের কারিগরি শিক্ষায় অনেক বেশি গুরুত্ব দিতে হবে
এখনো ৬০ শতাংশ নারীর বিয়ে হয় ১৮ বছরের নিচে
তরুণ-তরুণীদের সিদ্ধান্ত গ্রহণ, কর্মসংস্থানের সুযোগ ও অন্যান্য অধিকার নিশ্চিত করা প্রয়োজন
এসডিজি ও সপ্তম পঞ্চবার্ষিকী পরিকল্পনাকে সমন্বয় করে আমাদের এগোতে হবে
আলোচনা
আব্দুল কাইয়ুম: আজকের আলোচনা টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা (এসডিজি) ২০৩০ নিয়ে। ২০১৬ সালের জানুয়ারি থেকে এর কার্যক্রম শুরু। এখানে লক্ষ্যমাত্রা আছে ১৭টি। টার্গেট আছে ১৬৯টি। বাংলাদেশ এমডিজিতে (মিলেনিয়াম উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা) সাফল্য অর্জন করেছে। এরই ধারাবাহিকতায় এসডিজিতেও সাফল্য অর্জন করবে।
বিভিন্ন স্টেকহোল্ডারের ৯০ লাখ মানুষের মতামত নিয়ে এটি চূড়ান্ত করা হয়েছে। বাংলাদেশ এসব প্রক্রিয়ার মধ্যে ছিল। বাংলাদেশ ইতিমধ্যে দারিদ্র্য, স্বাস্থ্য, পুষ্টি, লিঙ্গবৈষম্য, নারীর ক্ষমতায়ন, জলবায়ু পরিবর্তন—এসব ক্ষেত্রে কাজ করেছে।
এসডিজির বিষয়গুলো সপ্তম পঞ্চবার্ষিকী পরিকল্পনায় অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। সরকারসহ সবার সম্মিলিত প্রচেষ্টায় আমাদের এসডিজির সাফল্য অর্জন করতে হবে। আলোচনায় এসব বিষয় আসবে। এখন আলোচনা করবেন আবরার এ আনোয়ার

আবরার এ আনোয়ার: স্ট্যান্ডার্ড চার্টার্ড ব্যাংক জাতিসংঘের ‘প্রজেক্ট এভরিওয়ানের’ সঙ্গে সম্পৃক্ত ছিল। প্রজেক্ট এভরিওয়ানের লক্ষ্য হলো, জাতিসংঘের ১৭টি এসডিজি অর্জনে মানুষকে সচেতন করা। সবাই সচেতন হলে ২০৩০ সালের মধ্যে চরম দারিদ্র্য দূর করা, সুস্বাস্থ্য নিশ্চিত করা, বৈষম্য দূর করা ও জলবায়ুর ক্ষতিকর প্রভাব থেকে মুক্ত করা সম্ভব হবে।
এসব বাস্তবায়নের একটি ক্ষুদ্র প্রয়াস হলো আজকের এ উদ্যোগ। আমাদের নীতি হলো, যে দেশে থাকি, সে দেশের ভালো উদ্যোগের সঙ্গে থাকা। সে দেশের সাধারণ মানুষের ভালো হয় এমন কিছু করতে চেষ্টা করা। এ কাজে সবার সহযোগিতা আশা করি।
১৭টি এসডিজির মধ্যে রয়েছে দারিদ্র্য বিমোচন ও ক্ষুধামুক্তি, খাদ্যনিরাপত্তা ও উন্নত পুষ্টির লক্ষ্য অর্জন, টেকসই কৃষিব্যবস্থা, স্বাস্থ্যকর জীবনযাপন নিশ্চিত করা, সব বয়সের সবার কল্যাণে কাজ করে যাওয়া, অন্তর্ভুক্তি ও সমতাভিত্তিক মানসম্মত শিক্ষা নিশ্চিত করা, আজীবন শিক্ষার সুযোগ তৈরি করা, লিঙ্গসমতা অর্জন, নারীর ক্ষমতায়ন ইত্যাদি।
শিল্প, অবকাঠামো, চলতি মূলধনসহ বিভিন্ন খাতে আমরা বিনিয়োগ করে এ দেশের উন্নয়নে অবদান রাখছি।
এনার্জি খাতে ৩০ শতাংশ, ব্যবসা খাতে ১৪ শতাংশ বিনিয়োগ আমাদের। এখন আমরা এসডিজিতে অবদান রাখতে চাই। গতকালই ব্র্যাকের সঙ্গে দুটো প্রকল্প চালু করেছি। একটা হলো চট্টগ্রামে অর্থ শিক্ষা প্রকল্প, অন্যটি সদ্য বিলুপ্ত ছিটমহলের অধিবাসীদের জন্য জীবিকার ব্যবস্থা করা। এর ফলে দরিদ্র মানুষের জীবনমানের উন্নয়ন ঘটবে।
টেকসই অর্থায়ন খুবই গুরুত্বপূর্ণ, এ জন্য বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্দেশনায় আমরা কাজ করি। এ দেশের মানুষ ও মানুষের উন্নয়নের সঙ্গে থাকতে পেরে আমরা আনন্দিত। ব্যাংকিং খাত ছাড়াও আমরা এ দেশের মানুষের সামাজিক উন্নয়নে অবদান রাখতে চাই।
স্ট্যান্ডার্ড চার্টার্ড ব্যাংকের সবচেয়ে বড় প্রকল্প হলো, ‘সিইং ইজ বিলিভিং’-এর মাধ্যমে প্রতিবছর লক্ষাধিক মানুষ তাদের দৃষ্টিশক্তি ফিরে পায়। আমরা এইচআইভি এইডস বিষয়ে মানুষকে সচেতন করি। শিক্ষা, সংস্কৃতি ও ক্রীড়াক্ষেত্রে সহযোগিতা করি।
এই দেশের মানুষের কল্যাণে আমাদের সহযোগিতা অব্যাহত থাকবে। সবাই মিলে একসঙ্গে কাজ করলে বাংলাদেশ আরও এগিয়ে যাবে বলে আশা করি।

কাজী খলীকুজ্জমান আহমদ: এসডিজি অর্জন করতে হলে রাষ্ট্রের সর্বোচ্চ পর্যায় থেকে শুরু করে স্থানীয় পর্যায় পর্যন্ত সমন্বিতভাবে কাজ করতে হবে। ২০১৫ সালের ৩১ ডিসেম্বর এমডিজি শেষ হয়েছে। এমডিজি ছিল সহায়তানির্ভর। সে জন্য বাংলাদেশ ছাড়া অনেক দেশই লক্ষ্যমাত্রা অর্জন করতে পারেনি।
এবারের লক্ষ্যমাত্রাগুলো খুব দর্শনভিত্তিক। এর মধ্যে বলা আছে মানুষের স্বাধীনতা, সাম্য ও মানবাধিকারের কথা। এতে দেশ ও দেশের অভ্যন্তরে মানুষে মানুষে সাম্য, ন্যায়বিচার, আইনের শাসন ও সহমর্মিতার কথা বলা আছে। কাউকে বাদ না দিয়ে সবাইকে অন্তর্ভুক্ত করে এগিয়ে যেতে হবে।
এসডিজিতে সবকিছু বিস্তারিত বলা আছে। এর ওপর ভিত্তি করে আমাদের এগিয়ে যেতে হবে। এটি বাস্তবায়নে সবার সংশ্লিষ্টতা থাকতে হবে। রাষ্ট্রের বড় ধরনের অঙ্গীকার থাকতে হবে। বাংলাদেশের সে অঙ্গীকার আছে। নীতি, কৌশল ও প্রাতিষ্ঠানিক সমন্বয় থাকতে হবে।
কারোর সহায়তায় নয়, নিজের শক্তিতে এসডিজির কাজগুলো করতে হবে। দারিদ্র্যের বিষয়টি সব সময় গুরুত্ব পেয়েছে। এমডিজিতে এটা ছিল। এসডিজিতেও আছে। তবে এবার অতিদারিদ্র্যসহ বহুমাত্রিক দারিদ্র্যের কথা বলা হয়েছে।
কিন্তু ২০৩০ সালের মধ্যে অতিদারিদ্র্য নির্মূল করতে হবে। অক্সফামের গবেষণায় চরমভাবে বৈষম্যের বিষয় এসেছে। পৃথিবীর অর্ধেক সম্পদ এখন ১ শতাংশ মানুষের কাছে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে ১ শতাংশ মানুষের কাছে তাদের ৪০ শতাংশ সম্পদ আছে। বাংলাদেশে বৈষম্য অবশ্য এত প্রকট না। সব,কর্মকাণ্ডের সঙ্গে মানুষকে যুক্ত করতে হবে।
পিকেএসএফ একসময় ক্ষুদ্রঋণ প্রতিষ্ঠান ছিল। এখন এটা মোটেই ক্ষুদ্রঋণ প্রতিষ্ঠান নয়। শিক্ষা, স্বাস্থ্য, জীবনমান, কর্মসংস্থান, প্রশিক্ষণ ইত্যাদি ক্ষেত্রে আমরা ঋণ দিই।
১০ হাজার টাকা থেকে ১০ লাখ পর্যন্ত যার যতটুকু প্রয়োজন, তাকে ততটুকু ঋণ দেওয়া হয়। আমরা টাকা দিয়ে ছেড়ে দিই না। প্রশিক্ষণ, প্রযুক্তি ও বাজারজাত করতে সহায়তা করে থাকি।
২৭৩টি এনজিওর সঙ্গে কাজ করি। দেশের প্রতিটি উপজেলায় আমাদের কার্যক্রম আছে। ১৫০টি ইউনিয়নে প্রায় ৫০ লাখ মানুষকে স্বাস্থ্য-শিক্ষা খাতে সহযোগিতা করি। আমরা খুব সমন্বিতভাবে কাজ করি। আমাদের সহযোগিতা নিয়ে মানুষ উন্নতি করছে।

মুহাম্মদ মুনির হোসেন: জনগণ এখন আর কেবল উপকারভোগী নয়। তারা দেশের অংশীদার। যা কিছু করতে হবে, তাদের সম্পৃক্ত করে করতে হবে। এখন দেশে পাঁচ কোটি যুবক। ২০৪১ সালে দেশের জনসংখ্যা হবে ২১ কোটি। তখন যুবকদের সংখ্যা কমে যাবে।
এখনই দেশে সবচেয়ে বেশি তরুণ জনসংখ্যা। যুবকদের জন্য বিনিয়োগ করতে হলে এখনই শ্রেষ্ঠ সময়। এসডিজি অর্জন করতে হলে যুবকদের গুরুত্ব দিতে হবে। আজ যার বয়স ১০ বছর, ২০৩০ সালে তিনি হবেন ২৫ বছরের তরুণ-তরুণী। ২০৩০ সালে তাঁর স্বাস্থ্য, শিক্ষা, পরিবেেশর জন্য এখনই ব্যাপক বিনিয়োগ করতে হবে। আমাদের এমডিজির সব কাজ শেষ হয়নি। সেটাও মাথায় রাখতে হবে।
গত ৩০-৪০ বছরে শিক্ষার গুণগত, পরিমাণগত অনেক পরিবর্তন হয়েছে। কিন্তু কার্যকর শিক্ষা কোথায়? সাধারণ শিক্ষা দিয়ে কি সবার কর্মসংস্থান হবে? তাহলে কারিগরি শিক্ষা কি পর্যাপ্ত আছে? আবার কারিগরি শিক্ষায় কি মেয়েরা আসছে? না এলে বাধা কোথায়? এসব অনেক কিছু ভাবতে হবে। তা না হলে আমারা এসডিজি অর্জন করতে পারব না।
তরুণ-তরুণীদের কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করতে হবে। প্রতিবছর তাঁদের একটি অংশ বেকার থেকে যাচ্ছে। কোনো পরিকল্পনাই কার্যকর হবে না, যদি সঠিক তথ্য-উপাত্ত না থাকে। দেশে যেসব প্রতিষ্ঠান তথ্য-উপাত্ত নিয়ে কাজ করে, তাদের দক্ষতা বাড়ানোর সুযোগ রয়েছে বলে মনে করি।
সময়মতো সঠিক তথ্য-উপাত্ত পেলে যেকোনো পরিকল্পনা অনেক বেশি কার্যকর হবে। আমরা সব সময় সমন্বয়ের কথা বলি। কিন্তু বাস্তবে প্রায় সব কাজে সমন্বয়হীনতা থাকে। ব্যাংকগুলো সিএসআরের জন্য বাংলাদেশ ব্যাংকের মাধ্যমে সমন্বিতভাবে কাজ করলে এর অংশীদারেরা অনেক বেশি উপকৃত হবে।
এসডিজি বাস্তবায়নের জন্য বাইরে থেকে অর্থ আসবে না। নিজস্ব অর্থায়নে এগুলো করতে হবে। তাই কাজগুলো যদি সমন্বিত ও পরিকল্পিতভাবে করা না হয়, তাহলে অর্থ ব্যয় করেও সর্বোচ্চ সুবিধা পাওয়া যাবে না।

শান্তনু গুপ্ত: ইউনিসেফ এসডিজিতে শিশুদের জন্য করণীয়কে গুরুত্ব দেয়। আমরা সরকার ও সংশ্লিষ্ট সবাইকে নিয়ে কাজ করি। এসডিজি বাস্তবায়নে শিশু ও তরুণদের ভূমিকা রয়েছে। ইউনিসেফ এসব শিশু ও তরুণের জন্য কাজ করে।
এসডিজিতে মানুষকে খুব গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। আর আমরা এই মানুষ নিয়েই কাজ করি। এমডিজি থেকে এসডিজির কাজের পরিসর ব্যাপক। এখানে বাংলাদেশের জন্য গুরুত্বপূর্ণ কিছু কাজ রয়েছে। যেমন অতিদারিদ্র্য কমানো, বৈষম্য দূর করা, জলবায়ুর পরিবর্তন মোকাবিলা করা ইত্যাদি।
জলবায়ুর পরিবর্তন নারী, শিশুসহ সব শ্রেণির মানুষকে ক্ষতিগ্রস্ত করে। তাই এটার মোকাবিলা করা গুরুত্বপূর্ণ চ্যালেঞ্জ। এসডিজির পরিকল্পনাগুলো কীভাবে বাস্তবায়ন হবে, সেটা একটা বড় ইস্যু। এর জন্য বিশ্ব অংশীদারি প্রয়োজন। সামর্থ্য ও সক্ষমতা বাড়ানো প্রয়োজন। এসব জায়গায় ইউনিসেফ সহযোগিতা করবে।
আপনারা জানেন ইউনিসেফ অনেক দিন ধরে বাংলাদেশের জন্য কাজ করে যাচ্ছে। ভবিষ্যতেও কাজ অব্যাহত থাকবে। এসডিজি বাস্তবায়নের জন্য প্রচুর সম্পদের প্রয়োজন হবে। এ সম্পদ কোথা থেকে কীভাবে আসবে, এ বিষয়টি বাংলাদেশকে গুরুত্বের সঙ্গে ভাবতে হবে।
তবে সবার সম্মিলিত প্রচেষ্টা থাকলে বাংলাদেশ এমডিজির মতো এসডিজিতেও সাফল্য অর্জন করবে।

মনোজ কুমার বিশ্বাস: ব্যাংক দুই দিক থেকে এসডিজির কাজকে এগিয়ে নিতে পারে। ঋণপ্রবাহ বৃদ্ধি ও সিএসআরের মাধ্যমে। ২০১৪ সালের ২২ ডিসেম্বর সিএসআরের অর্থ ব্যয় করার জন্য আমরা একটি নির্দেশনা দিয়েছি।
সিএসআরের অর্থ ব্যয় করার জন্য একটা নীতিমালা করা হয়েছে। নীতিমালা থাকার জন্যই বিদেশি ব্যাংকগুলোও সিএসআরের অর্থ ব্যয় করতে পারছে। এর আগে যার যার ইচ্ছেমতো এ অর্থ ব্যয় করত। এখন কেউ আর তাদের ইচ্ছেমতো ব্যয় করতে পারে না।
এসডিজি বাস্তবায়নে সরকারি ও বেসরকারি প্রতিষ্ঠান একসঙ্গে কাজ করবে। এ উদ্যোগের সঙ্গে ব্যাংকিং খাত কীভাবে যুক্ত থাকবে, সে বিষয়টি আমাদের ভেবে দেখতে হবে।
আমরা দলিত, তৃতীয় লিঙ্গ, পথশিশু, সুবিধাবঞ্চিত মানুষদের জন্য কাজ করছি। বাংলাদেশ ব্যাংকের একটা নীতি রয়েছে, কোনো মানুষই ব্যাংকিং সুবিধার বাইরে থাকবে না। এসডিজিতে জেন্ডার সমতার কথা বলা হয়েছে। জেন্ডার সমতার জন্য আমরা কাজ করছি। এমনকি বাংলাদেশ ব্যাংকের অভ্যন্তরেও আমরা এ ব্যাপারে কাজ করছি।
আমরা যেকোনো বিষয়ে নারীদের অগ্রাধিকার দিয়ে থাকি। নারীদের সুবিধাপ্রাপ্তির বিষয় বাংলাদেশ ব্যাংক গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচনা করে। জলবায়ু পরিবর্তনের জন্য যে ক্ষয়ক্ষতি হয়, তা মোকাবিলার জন্য পরিবেশবান্ধব অর্থায়নের জন্য বাংলাদেশ ব্যাংক কাজ করেছ। অন্যান্য ব্যাংকও যাতে পরিবেশবান্ধব খাতে অর্থ বিনিয়োগ করে, বাংলাদেশ ব্যাংকের পক্ষ থেকে সেটা বলা আছে। সিএসআরের অর্থ ব্যয়ের ক্ষেত্রে বলা হয়েছে ৩০ শতাংশ শিক্ষা, ২০ শতাংশ স্বাস্থ্য, ১০ শতাংশ জলবায়ু পরিবর্তন—এই ৬০ শতাংশ বাধ্যতামূলক। ৪০ শতাংশ ব্যাংক দরিদ্র মানুষের জীবনমান উন্নয়নের জন্য ব্যয় করে থাকে। আপনারা দেখেছেন, ছিটমহলবাসীর উন্নয়নের জন্য ব্যাংকগুলো কীভাবে ঝাঁপিয়ে পড়েছিল। এসডিজি বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে সিএসআর একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে।
সাতক্ষীরা জেলায় বিশুদ্ধ পানির প্রচণ্ড অভাব। সেখানে বিশুদ্ধ পানির ব্যবস্থা করার জন্য বাংলাদেশ ব্যাংকসহ অনেক ব্যাংক দায়িত্ব নিয়েছে। আমরা বিভিন্নভাবে দেশের উন্নয়নে কাজ করছি, যা এসডিজি অর্জনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে।

ফারাহ্ কবির: ২০১৫ সালের একটা ঐতিহাসিক গুরুত্ব থাকবে। কারণ, ২০১৫ সালে দুর্যোগ মোকাবিলার জন্য ১৫ বছরের একটা পরিকল্পনা করা হয়েছে।
এসডিজির জন্য সামনে আরও ১৫ বছর পরিকল্পনার মাধ্যমে কাজ করার সুযোগ হলো। দারিদ্র্যকে এখন বহুমাত্রিকভাবে সামনে আনা হচ্ছে। আমাদের মধ্যে এসব ক্ষেত্রে কাজ করার জন্য চেতনা ও জাগরণ রয়েছে। সে জন্যই আমরা এ বিষয় আলোচনা করি। জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে ক্ষয়ক্ষতি মোকাবিলার জন্য সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়, পরিকল্পনা মন্ত্রণালয় কে কী করছে, চুক্তিতে কী আছে, এসব বিষয় নিয়ে আমরা কথা বলেছি। কারণ, আমরা বারবার বলছি যে সবাইকে একসঙ্গে কাজ করতে হবে। দেশের নারীদের অধিকার এখনো নিশ্চিত হয়নি। তাঁরা সহিংসতার শিকার হন। এখনো ৬০ শতাংশ নারীর বিয়ে হয় ১৮ বছরের নিচে। তাহলে আমাদের কোথায় বেশি গুরুত্ব দিতে হবে?
আমরা তরুণ-তরুণীদের সঙ্গে কথা বলি। তাঁরা সিদ্ধান্ত গ্রহণ, কর্মসংস্থানের সুযোগ ও অন্যান্য অধিকার চান। তরুণী বয়সের একজন মেয়ের কাছে তো কোনো কিছু জানতেই চাওয়া হয় না। তাহলে এসডিজি এসব মেয়ের জন্য কীভাবে কাজ করবে?
যাদের ১৩ থেকে ১৮ বছর বয়সের মধ্যে অনাকাঙ্ক্ষিত বিয়ে হয়েছে, তাদের কি আমরা ভুলে যাব? তাদের শিক্ষা, স্বাস্থ্য ও সিদ্ধান্ত গ্রহণের বিষয় আমরা কীভাবে ভাবব? এসব বিষয় না ভাবলে বা তাদের জন্য কোনো কাজ না করলে এসডিজির উন্নয়ন বাধাগ্রস্ত হতে পারে।
দেশের ২৫ শতাংশ মানুষ দারিদ্র্যসীমার নিচে বাস করে। তাদের মধ্যে কৃষক, ভূমিহীন, দলিতসহ বিভিন্ন শ্রেণিপেশার মানুষ আছে। এদের বিষয়ে অনেক বেশি আলোচনা হওয়া দরকার।
এসডিজি বাস্তবায়নে বিশাল পরিমাণ বাজেট লাগবে। উন্নত দেশগুলো এ অর্থ দেবে না। তাদের অনেক সমস্যা রয়েছে। এসডিজি বাস্তবায়নে নিজস্ব অর্থায়নের ওপর জোর দিতে হবে।
এসডিজি ও সপ্তম পঞ্চবার্ষিকী পরিকল্পনাকে সমন্বয় করে আমাদের এগোতে হবে। এক গবেষণায় দেখা গেছে, ২০০৮ থেকে ২০১৪ সাল পর্যন্ত ৪০ লাখ মানুষ বসতবাড়ি থেকে উচ্ছেদ হয়েছে। তাদের কথা কয়জন ভাবছে? সব বিষয়কে সমান গুরুত্ব দিয়ে যদি কাজ করতে না পারি, তাহলে আমাদের উন্নয়ন বাধাগ্রস্ত হবে।

আসিফ সালেহ: আমাদের অনেক অর্জন আছে। আমরা সমস্যার কথা বলতে বলতে অর্জনের কথা ভুলে যাই। এসডিজিতে ১৭টি লক্ষ্য। ১৬৯টি টার্গেট। এটি একটি বিশাল ক্ষেত্র। এর মধ্যে প্রায় সবকিছু অন্তর্ভুক্ত হয়েছে। এটা অর্জন করতে পারলে যেকোনো দেশ সামনের দিকে এগিয়ে যাবে। এমডিজির পরিসর কম ছিল। এটা ছিল অর্জনযোগ্য। ব্র্যাকের পক্ষ থেকে এসডিজি নিয়ে আলোচনা করেছি। এখান থেকে আটটি অগ্রাধিকার বেছে নিয়েছি। বিষয়টি বাংলাদেশের বাস্তবতায় দেখতে হবে। এই দেশের বিশাল একটা জনগোষ্ঠী তরুণ। এটা একদিকে বড় রকমের সুযোগ। একই সঙ্গে হুমকিও হতে পারে, যদি এই তরুণ জনগোষ্ঠীকে কাজে লাগানো না যায়।
একটা সমস্যা হলো, আমাদের জনসংখ্যা বাড়ছে। কিন্তু সম্পদের পরিমাণ কমছে। আমাদের গ্যাস, পানি ও পর্যাপ্ত বিদ্যুতের সংকট রয়েছে। আরেকটা সমস্যা হচ্ছে, দেশে দ্রুত নগরায়ণ হচ্ছে। আর নগর গড়ে উঠছে অপরিকল্পিতভাবে। ফলে নগরে বৈষম্য ও দারিদ্র্য বৃদ্ধি পাচ্ছে।
আমাদের উন্নয়ন হয়েছে। কিন্তু উন্নয়নের সুযোগ সবাই পাইনি। নারীদের অর্থনৈতিক ক্ষমতায়ন হয়েছে। কিন্তু সামাজিক ক্ষমতায়ন তেমনভাবে হয়নি।
ইন্টারনেট বলি, মোবাইল বলি—দেখতে দেখতে প্রযুক্তির ক্ষেত্রে একটা বিপ্লব ঘটে গেছে। দেশের উন্নয়নের জন্য এটা একটা ইতিবাচক দিক। মানুষের যে অর্থনৈতিক উন্নয়ন ঘটেছে, সেটা বোঝা যায় ক্রয়ক্ষমতা দেখলে।
আমরা সবকিছু বিবেচনা করে আটটি অগ্রাধিকারকে বেছে নিয়েছি। এক. বিশাল তরুণসমাজের কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি। আগামী কয়েক বছরে আমরা পাঁচ লাখ যুবসমাজকে প্রশিক্ষণ দেব। তাদের জন্য কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করব। দুই. শহর পরিকল্পনা ও এর দারিদ্র্য দূর করা। তিন. জলবায়ু পরিবর্তনে ক্ষতিগ্রস্ত ব্যক্তিদের সহায়তা দেওয়া। চার. অতিদারিদ্র্য দূরীকরণ। পাঁচ. নারীর ক্ষমতায়ন। ছয়. মানসম্মত শিক্ষা। সাত. স্বাস্থ্যসেবা। আট. আর্থিক অন্তর্ভুক্তি। যেমন বিদেশগামী মানুষদের আমরা ঋণ দেওয়ার ব্যবস্থা করেছি।

হোসেন জিল্লুর রহমান: এক অর্থে এসডিজি এমডিজির ফলোআপ। কিন্তু কিছু পার্থক্য আছে। ২০০০ সালে এমডিজি তৈরি হয়েছে। উন্নত দেশগুলোর সহায়তার ভিত্তিতে এটা তৈরি হয়েছিল। এসডিজির পরিসর অনেক বেশি। এসডিজি বিশ্বের সব দেশের জন্য প্রণীত হয়েছে।
এসডিজিতে বাইরের অর্থায়ন হওয়ার সম্ভাবনা খুবই কম। এ ক্ষেত্রে সময় ব্যয় না করে নিজস্ব অর্থায়নের বিষয় গুরুত্বের সঙ্গে ভাবতে হবে। এসডিজি বাস্তবায়নের সময় ১৫ বছর। অর্থাৎ আমরা যা অর্জন করতে চাই, তা এ সময়ের মধ্যেই অর্জন করতে হবে। এটা একটা অত্যন্ত ভালো দিক।
এসডিজিতে ১৭টি লক্ষ্যের মধ্যে ১৬৯টি টার্গেট আছে। এ টার্গেটগুলো সব দেশের জন্য সমানভাবে গুরুত্বপূর্ণ নয়। এসডিজিতে কয়েকটি বিষয় খুব গুরুত্ব পেয়েছে। যেমন সমতার বিষয়টি এমডিজি থেকে এসডিজিতে অনেক বেশি গুরুত্ব পেয়েছে।
আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো টেকসই নগরায়ণ। বাংলাদেশ ধীরে ধীরে নগরায়ণের দিকে যাচ্ছে। টেকসই নগর ও কমিউনিটি একটা নতুন ইস্যু। অনেক বিষয় কমবেশি জানি। টেকসই নগর ও কমিউনিটির এ বিষয়টি আমাদের অাগে ছিল না। এখানে অনেক বেশি মেধা ও গুরুত্ব দিয়ে কাজ করতে হবে।
এসডিজির তিন নম্বর লক্ষ্য হলো স্বাস্থ্য। এসডিজির এটি একটি গুরুত্বপূর্ণ ইস্যু। কারণ, অতিরিক্ত স্বাস্থ্য খরচের জন্য প্রতিবছর ৪০ লাখ মানুষ নতুন করে দারিদ্র্যের মধ্যে পড়ে যেতে পারে।
খাদ্য সংরক্ষণ, খাদ্যনিরাপত্তা, খাদ্য প্রক্রিয়াকরণ খুবই গুরুত্বপূর্ণ ইস্যু হওয়া উচিত। প্রতিটি বিশ্ববিদ্যালয়ে খাদ্যনিরাপত্তা বিভাগ থাকা জরুরি। খাদ্যনিরাপত্তার বিষয়ে যতটা গুরুত্ব দেওয়া প্রয়োজন, ততটা কখনো দেওয়া হয়নি। আমাদের নীতিনির্ধারকেরাও এসব বিষয়ে গুরুত্বের সঙ্গে ভাবেন না। যখন কৃষির কথা আলোচনা হয় তখন শুধু উৎপাদনের দিকটি ভাবা হয়।
বাংলাদেশে শিক্ষার আকাঙ্ক্ষা ব্যাপকভাবে বেড়েছে। কিন্তু শিক্ষার্থীরা মানসম্পন্ন শিক্ষা পাচ্ছে না। ১৯৪৭ সালে স্বাধীনতার পর ভারতে নেহরুসহ অন্যরা মাধ্যমিক শিক্ষার ওপর গুরুত্ব দিয়েছিলেন। স্বাধীনতার পর বাংলাদেশে বঙ্গবন্ধু প্রাথমিক শিক্ষাকে গুরুত্ব দিয়েছিলেন। প্রাথমিক শিক্ষার একটি ভিত্তি দাঁড়িয়েছে। কিন্তু মাধ্যমিক শিক্ষা তেমন এগোতে পারেনি।
মাধ্যমিক শিক্ষায় সরকারের পূর্ণ সহযোগিতা নেই, আবার ব্যবস্থাপনা কমিটির মধ্যে সুশাসন নেই। ফলে মাধ্যমিক শিক্ষার ক্ষেত্রটি বিভিন্নভাবে সংকটের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে। একজন নবম, দশম শ্রেণির শিক্ষার্থীকে আলাদাভাবে বাংলা, ইংরেজি, গণিতের মেধা যাচাই করতে গেলে দেখা যায় তার শিক্ষার মান তৃতীয় বা চতুর্থ শ্রেণির মানের।
অর্থমন্ত্রীকে অনুরোধ করেছিলাম আগামী পাঁচ বছরের মধ্যে এক হাজার নতুন মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের জন্য অর্থ বরাদ্দ দেওয়ার। ভবিষ্যৎ বাংলাদেশের জন্য এটা কোনো অংশে কম গুরুত্বপূর্ণ নয়। আমাদের মাধ্যমিক শিক্ষার ক্ষেত্রে ব্যাপক নতুন চিন্তা আনতে হবে।
এসডিজিতে ১২ নম্বর লক্ষ্যে আছে দায়িত্বশীল ভোগ ও উৎপাদন। এটি নিয়ে তেমন কোনো আলোচনা হয় না। আমেরিকাসহ বিশ্বের অনেক দেশ প্রচুর খাবার অপচয় করে। এমনকি আমাদের দেশের অনুষ্ঠানগুলোতেও প্রচুর খাবার নষ্ট হয়। এদিকটি গুরুত্বের সঙ্গে ভাবতে হবে। সবাই মিলে এসব বিষয় ভাবলে এসডিজিতে অবশ্যই ভালো করতে পারব।

আইনুন নিশাত: জাপানের সেন্দাই ফ্রেমওয়ার্ক ফর ডিজাস্টার রিস্ক রিডাকশন, প্যারিসের জলবায়ু সম্মেলন ও এসডিজি—এই তিনটি আন্তর্জাতিক চুক্তিকে সমন্বয় করে এগোতে হবে। তা না হলে এসডিজি অর্জন বাধাগ্রস্ত হবে।
জলবায়ু সম্মেলনের উল্লেখযোগ্য বিষয় ছিল মিটিগেশন ও অ্যাডাপটেশন (অভিযোজন)। আমাদের অ্যাডাপটেশনের ওপর গুরুত্ব দিতে হবে। উপকূলীয় এলাকা থেকে মানুষ প্রতিনিয়ত উচ্ছেদ হচ্ছে। তাদের পুনর্বাসনের ব্যবস্থা কি আছে?
প্রযুক্তিসহ বিশ্ব থেকে আমরা অনেক সুযোগ গ্রহণ করতে পারব। যদি আমাদের সে প্রস্তুতি থাকে এবং সঠিক মাধ্যম থেকে ভূমিকা নেওয়া হয়।
প্যারিস সম্মেলনে খুব জোরের সঙ্গে ক্যাপাসিটি বিল্ডিংয়ের (সক্ষমতা বৃদ্ধি) কথা বলা হয়েছে। জাতিসংঘের প্রতিষ্ঠানগুলো এর জন্য অনেক অর্থ ব্যয় করছে। বড় কর্তারা ক্যাপাসিটি বিল্ডিংয়ের জন্য বিদেশ ঘুরছেন। কিন্তু তাঁরা কী করছেন? বিভিন্ন ক্ষেত্রে তাঁদের সক্ষমতা কি বৃদ্ধি পেয়েছে? এবার প্যারিস চুক্তিতে স্পষ্ট বলা হয়েছে, সক্ষমতা যেন সত্যিকার জাতীয় সক্ষমতা হয়। বাংলাদেশের সক্ষমতা নেই, এই অভিযোগ যেন আর শুনতে না হয়। চুক্তিতে আরও বলা হয়েছে, সক্ষমতা বৃদ্ধির সব ক্ষেত্রে যেন স্বচ্ছতা থাকে।
এসডিজি হচ্ছে সরকারের বিভিন্ন ক্ষেত্রে কাজ করার একটা নির্দেশনা। এসডিজির ১৭টি লক্ষ্য, ১৬৯টি টার্গেট সামনে রেখে নিজেদের লক্ষ্য নির্ধারণ করতে হবে।
মাটির উৎপাদনক্ষমতার একটা সীমাবদ্ধতা আছে। একটা সময় পর উৎপাদনক্ষমতা কমতে থাকে। তাই চাইলেই সব সময় খাদ্য উৎপাদন বৃদ্ধি করা যায় না।
তবে বাংলাদেশ সরকারের এখন প্রধান কাজ হলো জনসংখ্যা ব্যবস্থাপনা। বিশ্বে একসময়ে ১০০ কোটি মানুষ ছিল, এখন ৬০০ কোটিরও বেশি। এটা দিন দিন বাড়তে থাকবে। কিন্তু সম্পদ বাড়ছে না।
বাংলাদেশ সরকার এমডিজির বাস্তবায়ন ও এসডিজির সম্ভাব্য লক্ষ্য সম্পর্কে অনেক আলোচনা করেছে। আশা করব, সবার সঙ্গে আলোচনা করেই যেন এসডিজি ঠিক করে। কী কাজ হলো, তার সঠিক চিত্র যেন বাৎসরিক প্রতিবেদনে থাকে। সবার অংশগ্রহণের ভিত্তিতে এসডিজির বাস্তবায়নকে এগিয়ে নিতে হবে।

মেহের আফরোজ চুমকি: খুবই ভালো লাগছে যে এসডিজি নিয়ে সবাই ভাবছেন। আমরা এমডিজি যেভাবে অর্জন করেছি, সেভাবেই এসডিজি অর্জন করব। আপনারা বলেছেন এসডিজির পরিসর অনেক বড়। আমি যদি এভাবে বলি যে এমডিজি ছিল মহাসড়ক, এর সঙ্গে জেলা সড়কের সংযোগ। এসডিজি হলো মহাসড়ক, জেলা সড়ক এবং জেলা সড়কের সঙ্গে উপজেলা ও ইউনিয়ন সড়কের সংযোগ।
এসডিজিতে আমাদের অনেক বেশি কাজ করতে হবে। এটা কেবল সরকারের একার পক্ষে সম্ভব হবে না। এর সঙ্গে সবাইকে যুক্ত হতে হবে। এ কাজের সঙ্গে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহি প্রয়োজন। প্রযুক্তি ব্যবহারে আমরা অনেক এগিয়েছি। এর মাধ্যমে এখন কাজের স্বচ্ছতা ও জবাবদিহি করা সম্ভব হচ্ছে। সরকার নারীর ক্ষমতায়ন, নারীর অর্থনৈতিক মুক্তিসহ বিভিন্ন বিষয় গুরুত্বের সঙ্গে ভাবছে। কারণ, দেশের অর্ধেক জনগোষ্ঠী নারী। তাঁদের বাদ দিয়ে এসডিজি তো দূরের কথা, কোনো উন্নয়ন সম্ভব নয়।
এসডিজির ১৭টি লক্ষ্যের সঙ্গেই নারীর সম্পৃক্ততা আছে। আগের দিনে পুরুষের স্বাস্থ্য বেশি গুরুত্ব পেত। কিন্তু বুঝতে হবে, নারী সুস্থ না হলে পরিবার বিভিন্নভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হবে। সন্তান সুস্থ থাকবে না। খাবার স্বাস্থ্যসম্মত হবে না। আরও অনেক বিষয়ে জটিলতা তৈরি হবে। তাই নারীর সুস্থতাকে অনেক বেশি গুরুত্ব দিতে হবে।
ঢাকা শহর নোংরা করার জন্য আমরাই দায়ী। আমরা যদি সচেতন না হই, তাহলে কখনো শহর পরিষ্কার রাখা সম্ভব নয়। এসডিজিতে নারীর অধিকার বাস্তবায়নের জন্য আমাদের মন্ত্রণালয় থেকে পরিকল্পনা করা হবে। আমরা আলোচনা করে ঠিক করব কী করলে নারীদের আরও উন্নয়ন ঘটে। এ ক্ষেত্রে অনেক চ্যালেঞ্জ আছে। আমরা একা সব কাজ করতে পারব না। মন্ত্রণালয়গুলোতে নারী উন্নয়নের বরাদ্দ আছে। সবাইকে নিয়ে কীভাবে কাজ করা যায়, সেটি ভাবতে হবে।
নারী উন্নয়নকে টেকসই করতে হলে নারী উন্নয়নের প্রতিটি ক্ষেত্রে পুরুষকে সম্পৃক্ত করতে হবে। কারণ, নারীর অনুন্নয়নের জন্য অনেক ক্ষেত্রে পুরুষ দায়ী।
দারিদ্র্য দূরীকরণে আমরা নতুনভাবে কাজ করছি। নদীভাঙন মানুষদের জন্য বিশেষ ব্যবস্থা হচ্ছে। নারীর ক্ষমতায়নে বাল্যবিবাহ বড় বাধা। আমরা স্কুলগুলোকে ১২ ক্লাস পর্যন্ত করার বিষয় ভাবছি।
আমাদের দেশের জন্য গুরুত্বপূর্ণ, মানুষের জন্য কল্যাণকর, এমন কিছু লক্ষ্য নিয়ে সবাই সমন্বিতভাবে কাজ করলে এসডিজি অর্জন করতে পারব।
আব্দুল কাইয়ুম: এমডিজিতে আমরা সাফল্য অর্জন করেছি। সবাই আশাবাদ ব্যক্ত করেছেন এসডিজিতেও সাফল্য অর্জন করা সম্ভব হবে। তবে এত বিশাল কাজ সরকারের একার পক্ষে সম্ভব নয়।
অগ্রাধিকার ভিত্তিতে লক্ষ্যগুলো ঠিক করে সংশ্লিষ্ট সবাই একসঙ্গে কাজ করলে, নিশ্চয়ই এমডিজির মতো এসডিজিতেও সাফল্য অর্জন করা সম্ভব হবে। প্রথম আলোর পক্ষ থেকে সবাইকে কৃতজ্ঞতা ও ধন্যবাদ।
যাঁরা অংশ নিলেন
মেহের আফরোজ চুমকি : সাংসদ, প্রতিমন্ত্রী, মহিলা ও শিশুবিষয়ক মন্ত্রণালয়
কাজী খলীকুজ্জমান আহমদ : চেয়ারম্যান পিকেএসএফ
আইনুন নিশাত : ইমেরিটাস অধ্যাপক, ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়
হোসেন জিল্লুর রহমান : সভাপতি, পিপিআরসি
মনোজ কুমার বিশ্বাস : জিএম, সাসটেইনেবল ফিন্যান্স, বাংলাদেশ ব্যাংক
আবরার এ আনোয়ার : প্রধান নির্বাহী অফিসার, স্ট্যান্ডার্ড চার্টার্ড ব্যাংক, বাংলাদেশ
ফারাহ্ কবির : কান্ট্রি ডিরেক্টর, অ্যাকশনএইড, বাংলাদেশ
আসিফ সালেহ : জ্যেষ্ঠ পরিচালক, স্ট্র্যাটেজি কমিউনিকেশন অ্যান্ড এম্পাওয়ারমেন্ট, ব্র্যাক
মুহাম্মদ মুনির হোসেন : ন্যাশনাল প্রোগ্রাম অফিসার, অ্যাডেলসেন্ট অ্যান্ড ইয়ুথ, ইউএনএফপিএ
শান্তনু গুপ্ত : সোশ্যাল পলিসি স্পেশালিস্ট, ইউনিসেফ
সঞ্চালক
আব্দুল কাইয়ুম : সহযোগী সম্পাদক, প্রথম আলো
এই গোলটেবিল আলোচনায় আমন্ত্রিত অংশগ্রহণকারীদের বক্তব্য সম্পূর্ণ তাঁদের নিজস্ব মতামত। আলোচনায় অংশগ্রহণকারীদের যেকোনো মতামতের জন্য স্ট্যান্ডার্ড চার্টার্ড ব্যাংক কোনো দায়দায়িত্ব বহন করে না।