ডিজেল উৎপাদনে কনডেনসেট আমদানির অনুমতি দিল সরকার

কনডেনসেট পরিশোধন করে ডিজেল তৈরি করা হবে, যাতে সরাসরি ডিজেল আমদানির চেয়ে খরচ কম হবে।

বেসরকারি খাতে বন্ধ থাকা ১২টি জ্বালানি তেল পরিশোধনাগার (রিফাইনারি) কাজে লাগিয়ে দেশে ডিজেলের উৎপাদন বাড়াতে চায় বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম করপোরেশন (বিপিসি)। এর জন্য গ্যাসক্ষেত্রে উপজাত হিসেবে পাওয়া কনডেনসেট আমদানি করতে বিপিসিকে অনুমতি দিয়েছে জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ বিভাগ। এ কনডেনসেট পরিশোধন করে ডিজেল উৎপাদন করা হবে।

দেশের গ্যাসক্ষেত্র থেকে পাওয়া কনডেনসেট পরিশোধন করা হতো এত দিন ধরে। এখন প্রথমবারের মতো কনডেনসেট আমদানির দিকে যাচ্ছে বিপিসি। আজ সোমবার জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ বিভাগ এ বিষয়ে একটি প্রজ্ঞাপন জারি করেছে। কয়েকটি শর্ত দিয়ে এতে বলা হয়, চাহিদা অনুসারে বিপিসি কনডেনসেট আমদানি করে বেসরকারি খাতকে সরবরাহ করবে। যারা মান অনুযায়ী জ্বালানি তেল উৎপাদন করতে পারবে, শুধু তাদের কনডেনসেট সরবরাহ করা হবে।

জ্বালানি বিভাগের শর্তে আরও বলা হয়, বেসরকারি খাতে উৎপাদিত জ্বালানি তেল বিপিসির অনুমতি ছাড়া কোনোভাবেই রপ্তানি বা খোলাবাজারে বিক্রি করা যাবে না। তাদের উৎপাদিত পণ্য বিপিসি কিনে নেবে। কনডেনসেট সরাসরি গ্রাহকের কাছে না পৌঁছানোর বিষয়টিও বিপিসি নিশ্চিত করবে। কনডেনসেটের দাম বিপিসি ঠিক করবে। তবে উৎপাদিত পণ্য কেনার ক্ষেত্রে প্রয়োজনে ক্রয়সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটির অনুমোদন নিতে হবে।

জ্বালানি বিভাগ সূত্র বলছে, দেশের বিভিন্ন গ্যাসক্ষেত্র থেকে প্রতিদিন ১১ থেকে ১২ হাজার ব্যারেল কনডেনসেট পাওয়া যেত আগে। তখন রাষ্ট্রায়ত্ত ইস্টার্ন রিফাইনারি লিমিটেডকে (ইআরএল) অর্ধেক ও বাকি অর্ধেক বেসরকারি খাতের সব রিফাইনারিগুলো ভাগাভাগি করে পরিশোধন করত। দুই বছর ধরে গ্যাসের উৎপাদনের সঙ্গে কনডেনসেটও কমছে। এখন দিনে পাওয়া যাচ্ছে ৭ থেকে ৮ হাজার ব্যারেল। তাই ইআরএল আর কনডেনসেট নিচ্ছে না। বেসরকারি তিন রিফাইনারি এগুলো পরিশোধন করে বিপিসির কাছে জ্বালানি তেল বিক্রি করছে। আর কনডেনসেট না পাওয়ায় প্রায় দুই বছর ধরে বন্ধ হয়ে আছে বেসরকারি ১২টি রিফাইনারি। তাই কনডেনসেট আমদানি করে সরবরাহের জন্য বিপিসির কাছে প্রস্তাব করে তারা।

স্বাধীনতার আগে থেকে জ্বালানি তেল পরিশোধনের কাজটি করছে বিপিসির অধীন রাষ্ট্রায়ত্ত কোম্পানি ইআরএল। ইআরএল কর্মকর্তারা বলছেন, বছরে জ্বালানি তেলের চাহিদা ৬০ থেকে ৬৫ লাখ টন। এর মধ্যে ১৫ লাখ টন দেশে উৎপাদিত হয়। আর বাকি ৫০ লাখ টন আমদানি হয়, যার অধিকাংশই ডিজেল। কনডেনসেট থেকে ডিজেল উৎপাদন করা গেলে ডিজেলের আমদানি খরচ কমে আসবে।

এ বিষয়ে বিপিসির পরিচালক (অপারেশনস অ্যান্ড প্ল্যানিং) সৈয়দ মেহদী হাসান প্রথম আলোকে বলেন, মানসম্মত ডিজেল উৎপাদনে সক্ষম কোম্পানির জন্য ডিজেল রিচ কনডেনসেট আমদানি করা হবে। আমদানি করা এসব কনডেনসেট থেকে উৎপাদিত জ্বালানির ৮৮ শতাংশ হবে ডিজেল। আর বাকি ১২ শতাংশ বিভিন্ন পণ্য। কনডেনসেট সরবরাহ ও তার বিপরীতে উৎপাদিত পণ্যের হিসাবও বিপিসি বুঝে নেবে।

বিপিসির কর্মকর্তারা বলছেন, দেশের ১২টি বেসরকারি তেল পরিশোধনকারী কোম্পানির বিনিয়োগ ঝুঁকির মুখে পড়ায় কনডেনসেট আমদানি করার সুপারিশ করেছিল বিপিসি। বেসরকারি বিনিয়োগ ও ডিজেল উৎপাদন বাড়ার বিষয়টি বিবেচনায় নিয়েই সরকার কনডেনসেট আমদানির অনুমতি দিয়েছে। ডিজেল উৎপাদনের ক্ষেত্রে মান ও পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক প্রতিষ্ঠান বিএসটিআইয়ের নির্ধারিত মান বজায় রাখতে হবে।

৮৯ রিসার্চ অকটেন নম্বর (রন) সমৃদ্ধ ডিজেল উৎপাদন করতে হবে। এটির সক্ষমতা না থাকলে কনডেনসেট পাবে না রিফাইনারি।

সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী ম তামিম প্রথম আলোকে বলেন, আমদানি করা কনডেনসেট থেকে যদি ৮৮ শতাংশ ডিজেল উৎপাদন করা যায়, তবে তা খুব ভালো। এ ডিজেলের খরচ আমদানি করা ডিজেলের চেয়ে কম হবে। এতে টাকাও সাশ্রয় হবে।