ডিমের দাম বেড়েছে

ডিম সাজাচ্ছেন চট্টগ্রামের রেয়াজউদ্দিন বাজারের এক দোকানি। শনিবার বিকেলে
ছবি: সংগৃহীত

চট্টগ্রামের মোমেনবাগের মাসুদ স্টোর থেকে ডিম কিনছিলেন মোহাম্মদ জোবায়ের নামের এক পোশাককর্মী। ওই এলাকায় একটি মেসে থাকেন তিনি। আজ শনিবার এক ডজন ডিম কিনতে তাঁর খরচ হয় ১২৫ টাকা। এক সপ্তাহ আগে তিনি ডিম কিনেছিলেন ১১৫ টাকায়। দাম বাড়ায় ক্ষুব্ধ জোবায়ের।

জোবায়েরের বাড়ি নোয়াখালীর চৌমুহনীতে। সেখানে থাকেন মা-বাবা, স্ত্রী ও এক মেয়ে। মাসে তাঁর আয় ১০-১২ হাজার টাকা। বাড়িতে কখনো ৮ হাজার, আবার কখনো ৭ হাজার টাকা পাঠান। বাকি টাকায় এখানে তাঁকে চলতে হয়। জোবায়ের প্রথম আলোকে বললেন, মেসে নিজেই রান্না করে খান। ডিমটাই খাওয়া হয় বেশি। ডিমের দাম বেড়ে যাওয়ায় তাঁর বিপদে পড়তে হবে।

মুদিদোকানি মাসুদ প্রতি ডজন ডিমের দাম নিচ্ছেন ১২৫ টাকা। তবে নগরের বিভিন্ন অলিগলির খুচরা দোকানে ১৩০ টাকায়ও ডিম বিক্রি হচ্ছে। দাম শুধু খুচরা বাজারে বেড়েছে, তা নয়। এক সপ্তাহের ব্যবধানে পাইকারি বাজারেও ডিমের দাম (এক শতে) বেড়েছে ২৫ থেকে ৫০ টাকা।

চট্টগ্রামে ডিমের দাম নির্ভর করে রেয়াজউদ্দিন বাজার ও পাহাড়তলী বাজারের পাইকারি ব্যবসায়ীদের ওপর। মূলত এ দুই বাজার থেকে ডিম ছড়িয়ে পড়ে চট্টগ্রাম নগর ও বিভিন্ন উপজেলায়। ব্যবসায়ীরা বলছেন, চট্টগ্রামের এ দুটি পাইকারি বাজারে ডিম আসে পাবনা, টাঙ্গাইল, কিশোরগঞ্জ ও ঢাকা থেকে। ফলে এসব অঞ্চলে ডিমের দাম বাড়লে চট্টগ্রামেও বাড়ে।

এবার ডিমের দাম বাড়ার তিনটি কারণ জানালেন রেয়াজউদ্দিন বাজার ও পাহাড়তলীর পাইকারি ব্যবসায়ীরা। সেগুলো হলো উৎপাদন খরচ বেড়ে যাওয়া, ছোটখাটো খামার বন্ধ হয়ে উৎপাদন কমা এবং অন্যান্য পণ্যের দাম বাড়ার প্রভাব ডিমের বাজারে পড়া।

উৎপাদন খরচ কীভাবে বেড়েছে, জানতে চাইলে চট্টগ্রাম ডিম ব্যবসায়ী আড়তদার সমিতির সাধারণ সম্পাদক মো. রেজাউল করিম প্রথম আলোকে বলেন, হাঁস-মুরগির প্রায় প্রতিটি খাবারের দাম বেড়ে গেছে। ঈদের আগে একটা ডিমের উৎপাদন ব্যয় পড়ত ৬ থেকে সাড়ে ৬ টাকা। এখন পড়ছে সাত থেকে আট টাকা; অর্থাৎ ১০০টি ডিম উৎপাদন করতে খরচ বেড়েছে ১০০ থেকে ১৫০ টাকা। আবার উৎপাদনও কমে গেছে। করোনার সময় বেশ কিছু ছোটখাটো পোলট্রি খামার বন্ধ হয়েছিল। এখনো সেগুলো চালু হয়নি। এতে সরবরাহ কমেছে।

ডিমের দাম বাড়ায় অসন্তোষ জানিয়েছে স্বল্প আয়ের মানুষ। শনিবার বিকেলে চট্টগ্রামের রেয়াজউদ্দিন বাজারে ডিমের দোকান
ছবি: সংগৃহীত

মো. রেজাউল করিম আরও বলেন, ঠিক এক বছর আগে, অর্থাৎ ২০২১ সালের মে মাসে পাইকারি বাজারে ১০০ ডিমের দাম ছিল ৭০০ টাকা। এখন দাম পড়ছে ৯৭০ টাকা। সামনে আরও বাড়বে।

পাইকারি ব্যবসায়ীদের ভাষ্য, সাধারণত বর্ষা মৌসুমে ডিমের উৎপাদন কিছুটা কমে যায়। এ কারণে প্রতিবছরই এ সময়ে দাম ৫ টাকা বাড়তি থাকে। কিন্তু এবার বর্ষার আগেই দাম বেড়ে গেছে। ফলে সামনে আরও বাড়বে।

পাইকারির দরদাম

আজ রেয়াজউদ্দিন বাজারের রায়হান এন্টারপ্রাইজে ফার্মের লাল ডিম বিক্রি হচ্ছিল ১০০টি ৯৭০ টাকায়। এক সপ্তাহ আগে ছিল ৯৪৫ টাকা। এক ডজনের দাম ছিল ১২০ টাকা। ফার্মের সাদা ডিম বিক্রি হচ্ছিল ১০০টি ৯২০ টাকায়। সাত দিন আগে ছিল ৮৯০ টাকা। হাঁসের ডিমের দাম এক সপ্তাহের ব্যবধানে বেড়েছে ৪০ টাকা। যেমন এক সপ্তাহ আগে ছিল ১ হাজার ৮০ টাকা। আজ বিক্রি হচ্ছে ১ হাজার ১২০ টাকা। দেশি মুরগির ডিমের চাহিদা তুলনামূলক কম। এরও দাম বেড়েছে শতে ৫০ টাকা।

রায়হান এন্টারপ্রাইজের ব্যবস্থাপক মো. শাহাদাত হোসেন প্রথম আলোকে বলেন, ডিমের দাম কমার কোনো সম্ভাবনা নেই। সব ধরনের খাবারের দাম বেড়ে গেছে। উৎপাদন খরচ বেশি পড়ছে।

এদিকে পাইকারি বাজার ঘুরে ডিমের দামের তারতম্য দেখা গেছে। এই যেমন শনিবার পাহাড়তলী বাজারে লাল ডিম বিক্রি হয়েছে ১০০টি ৯৩০-৯৫০ টাকা দরে। আর সাদা ডিম ছিল ৮৭০-৯০০ টাকা।

খুচরা বাজারের হালচাল

পাইকারিতে ডিমের দাম বাড়ার প্রভাব পড়েছে খুচরাতেও। নগরের ২ নম্বর গেট, হামজারবাগ, আতুরারডিপো, বহদ্দারহাটের ১৫টি দোকান ঘুরে দেখা গেছে, প্রতি ডজন ডিম বিক্রি হচ্ছে ১২৫-১৩০ টাকায়। এক সপ্তাহ আগে ছিল ১১৫ থেকে ১২০ টাকা। এসব এলাকার খুচরা দোকানিরা বললেন, পাইকারি বাজার থেকে তাঁদের বাড়তি দামে ডিম কিনতে হচ্ছে। এ কারণে তাঁরাও বেশি দরে বিক্রি করছেন।

দাম বেড়ে যাওয়ায় বিপাকে পড়েছেন অনেক ক্রেতা। তাঁদেরই একজন বেসরকারি স্কুলের শিক্ষক আবদুর রাজ্জাক। তিনি ডিম কিনছিলেন কর্ণফুলী কমপ্লেক্স থেকে। এক ডজনে তাঁকে দিতে হয় ১২৫ টাকা। কেনাকাটার এক ফাঁকে আবদুর রাজ্জাক প্রথম আলোকে বললেন, তাঁর দুই সন্তান। একজনের বয়স ৮ বছর, আরেকজনের ১৬ বছর। তাদের জন্য ডিম কিনতে হয়। সবকিছুর মতো ডিমের দামও বেড়ে যাওয়ায় তাঁকে সমস্যায় পড়তে হবে। কারণ, নিত্যপণ্যের দাম যেমন বেড়েছে, বেতন সেভাবে বাড়েনি।