ঢাকায় পাবেন মেজবানির স্বাদ
‘মেজ্জাইন্না গোশত’ খেতে এখন আর চট্টগ্রামে যেতে হবে না। পাওয়া যাবে খোদ রাজধানীতেই। চট্টগ্রামের স্থানীয় ভাষায় বলা হয় ‘মেজ্জান’, যা সর্বসাধারণের কাছে ‘মেজবান’ নামে পরিচিত। ফারসি এ শব্দটির মানে অতিথি আপ্যায়নকারী। আর মেজবানি হচ্ছে আতিথেয়তা। এটি চট্টগ্রামের একটি ঐতিহ্যবাহী গণভোজ।
বাংলাপিডিয়ার তথ্য অনুযায়ী, পরিবারের সদস্যদের জন্ম বা মৃত্যুকে কেন্দ্র করে বিভিন্ন দিবস, কোনো সাফল্য, নতুন বাড়িতে প্রবেশ, বিয়ে, আকিকা ও সুন্নতে খতনাসহ বিভিন্ন উপলক্ষে মেজবানির আয়োজন করা হয়। মেজবানির দাওয়াত সবার জন্য উন্মুক্ত থাকে। সাদা ভাতের সঙ্গে গরুর মাংসের বিভিন্ন পদ। এর মধ্যে মেজবানি মাংস, নলার ঝোল ও চানার ডাল বেশি জনপ্রিয়। পুরো একটি গরুই একসঙ্গে রান্না হয়।
মফিজুর রহমানের বাড়ি চট্টগ্রামে। থাকেন ঢাকায়। মেজবানির দাওয়াত পেলেও অনেক সময় যেতে পারেন না। তিনি বলেন, ‘আমরা বন্ধুরা এই খাবারটা খুব মিস করতাম। তাই নিজেরাই মেজবানি স্বাদ পাওয়ার জন্য ‘চিটাগং এক্সপ্রেস’ নামের রেস্টুরেন্ট খুলি।’ বসুন্ধরা আবাসিক এলাকায় এটি চালু হয়েছে ২০১৪ সালে। মাটির চুলায় রান্না হয়। মেজবানি গোশত ৮০০ টাকা হাঁড়ি। এক হাঁড়ি পাঁচ-ছয়জনের উপযোগী। প্রতি প্লেট ১৪০ টাকা। মেজবানি ডাল প্লেট ৬০ টাকা ও ৩০০ টাকা হাঁড়ি। পায়ার প্লেট ৬০ টাকা ও হাঁড়ি ২০০ টাকা। মফিজুর বলেন, মেজবান একটা উৎসব। খাওয়া এর একটা অংশ।
গুলশান-১ নম্বরে আছে মেজবানি খাবারের রেস্তোরাঁ ‘চিটাগং বুল’। এখানে ১৭০ থেকে ৯৯০ টাকায় পাওয়া যাবে মেজবানি মাংস। কালা ভুনা ২৬০-১২৬০ টাকা, নালির ঝোল ১৬০-৩৬০ টাকা এবং চানার ডাল ৯০-৩৯০ টাকা। এ ছাড়া পাওয়া যাবে চট্টগ্রামের আরেকটি খাবার ‘আখনি বিরিয়ানি’। দাম ২৪০ টাকা।
‘নওয়াব চাটগাঁও’ রেস্তোরাঁটিও গুলশান-১ নম্বরে। এখানেও চট্টগ্রামের বিভিন্ন খাবার পাওয়া যায়। মেজবানি গোশত ১৮০, কালা ভুনা ২৬০, নালির ঝোল ১২০ ও চানার ডাল ৮৫ টাকা। এ ছাড়া ঝুরা মাংস, আখনি বিরিয়ানি ও লইট্টা ভাজাও পাওয়া যাবে।
রিফাত ইয়াসিন পেশায় আলোকচিত্রী। নিজ এলাকার ঐতিহ্য বিভিন্ন জায়গায় ছড়িয়ে পড়ায় চট্টগ্রামনিবাসী রিফাত কিছুটা গর্ববোধই করেন। তাঁর নিজের বাড়িতেই বছরে তিনবার মেজবানি হয়। তিনি বলেন, ‘মানুষ বিশ্বাস করে এ খাবারে বরকত আছে। সব শ্রেণির মানুষ এক কাতারে বসে খায়। মেজবানের এখন ট্রেন্ড চলছে।’
মেজবানিকে কেন্দ্র করে রাজধানীতে গড়ে উঠেছে আরও কিছু রেস্তোরাঁ। ধানমন্ডির দাওয়াত-এ-মেজবান, বারিধারার মেজবান বাড়ি, ঢাকার বসুন্ধরা আবাসিক এলাকার সামনে হোটেল জামান অ্যান্ড বিরিয়ানি হাউস ও উত্তরার মেজবানি খানা। এসব রেস্তোরাঁর পাচকও আনা হয়েছে চট্টগ্রাম থেকে। মেজবান নিয়ে চট্টগ্রামে বেশ কিছু প্রবাদ আছে,‘মাইরপিডত যাইলি পরে, মেজ্জানত যাইলি আগে (মারামারিতে পরে, মেজবানে আগে যাও)।’ তো মারধরের কথা থাক, মেজবানের খাবার খেতে চাইলে যেতে পারেন এসব রেস্তোরাঁয়।