তারেক-কোকোসহ বিএনপির নেতাদের খেলাপি ঋণ ৩২১ কোটি টাকা

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা জাতীয় সংসদে রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন ব্যাংকগুলোর ১৫ হাজার ১১৩ কোটি ৬১ লাখ টাকা বকেয়া ঋণের তথ্য দিয়েছেন। তথ্য অনুযায়ী, বিরোধীদলীয় নেতা খালেদা জিয়ার দুই ছেলে, প্রয়াত ভাই, বিএনপির সাবেক দুই মন্ত্রীসহ কয়েকজন নেতার ১৫টি শিল্পপ্রতিষ্ঠানের কাছে প্রায় এক হাজার কোটি টাকার ঋণ বকেয়া রয়েছে। এর মধ্যে ৩২১ কোটি ৫২ লাখ টাকা মন্দ পর্যায়ে খেলাপি ঋণ।

জাতীয় সংসদে গতকাল বুধবার প্রধানমন্ত্রী এসব তথ্য লিখিত আকারে উপস্থাপন করেন, যা টেবিলে উত্থাপিত হয়। বিএনপির সংরক্ষিত মহিলা আসনের সাংসদ নিলোফার চৌধুরীর প্রশ্নের জবাবে এসব তথ্য জানান প্রধানমন্ত্রী। সাংসদ নিলোফার চৌধুরী প্রধানমন্ত্রীর কাছে সরকারি ব্যাংকগুলো থেকে রাষ্ট্রায়ত্ত প্রতিষ্ঠানগুলো যে ঋণ নেয়, তার বকেয়া সম্পর্কে জানতে চেয়েছিলেন। এ প্রশ্নের উত্তরে প্রধানমন্ত্রী বিএনপির নেতাদের ব্যাংকঋণের বকেয়া ও খেলাপির তথ্য দেন।

প্রধানমন্ত্রী জানান, ‘ড্যান্ডি ডায়িং লিমিটেড, খাম্বা লিমিটেড এবং গিয়াস উদ্দিন আল মামুনসহ বিএনপির কয়েকজন নেতার ১৫টি শিল্পপ্রতিষ্ঠানে ৯৮০ কোটি দুই লাখ টাকা ব্যাংকঋণ বকেয়া রয়েছে। যার বিরাট একটি অংশ হলো কুঋণ বা মন্দ ঋণ।’ তথ্য অনুযায়ী, সোনালী ব্যাংকে ড্যান্ডি ডায়িংয়ের বকেয়া ৪০ কোটি ১৪ লাখ টাকা, যার পুরোটাই মন্দ পর্যায়ের খেলাপি ঋণ। ড্যান্ডি ডায়িংয়ের পরিচালকেরা হলেন খালেদা জিয়ার দুই ছেলে বিএনপির সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমান ও আরাফাত রহমান কোকো, ভাই প্রয়াত সাইদ এস্কান্দার, খালেদা জিয়ার সন্তানদের বন্ধু গিয়াস উদ্দিন আল মামুন, মোজাফফর আহমেদ ও নাসরীন আহমেদ।

প্রধানমন্ত্রী জানান, গিয়াস উদ্দিন আল মামুনের প্রতিষ্ঠান প্রিকাস্ট ইন্ডাস্ট্রি লিমিটেডের কাছে এবি ব্যাংকের বকেয়া ঋণের পরিমাণ ১৩ কোটি ৭৬ লাখ টাকা, যার পুরোটাই মন্দ পর্যায়ের খেলাপি ঋণ। মামুনের আরেক প্রতিষ্ঠান খাম্বা লিমিটেডের কাছে জনতা ব্যাংকের বকেয়া ২৯ কোটি ৫৩ লাখ টাকা। এর পুরোটাই মন্দ পর্যায়ে খেলাপি হিসেবে চিহ্নিত।

গিয়াস উদ্দিন আল মামুনের ওয়ান স্পিনিং মিলের কাছে প্রাইম ব্যাংকের বকেয়া আট কোটি ৬৭ লাখ টাকা। এর মধ্যে ৬৫ লাখ টাকা বকেয়া আর আট কোটি দুই লাখ টাকা মন্দ ঋণ। ওয়ান স্পিনিং মিলের কাছে সোনালী ব্যাংকের বকেয়া ঋণ ৫৯ কোটি ১৯ লাখ টাকা। এর পুরোটাই মন্দ ঋণ। ওয়ান ডেনিম লিমিটেডের জনতা, ব্যাংক এশিয়া, ডাচ্-বাংলা, ইবিএল, সাউথইস্ট এবং সিটি ব্যাংকের কাছে বকেয়া ১৭০ কোটি ৪০ লাখ টাকা। এর পুরোটাই মন্দ ঋণ। এ ছাড়া জনতা ব্যাংকের কাছে ওয়ান স্পিনিংয়ের বকেয়া ২৪ কোটি ৪৫ লাখ টাকা। উল্লেখ্য, বকেয়া খেলাপি হিসেবে গণ্য হয় না।

প্রধানমন্ত্রী জানান, সাবেক সাংসদ, পারটেক্স গ্রুপের এম এ হাসেমের আমবার কটন মিলের কাছে সোনালী ব্যাংকের বকেয়া ঋণ ৩৭৬ কোটি ৯৫ লাখ টাকা। এর মধ্যে সন্দেহজনক পর্যায়ের শ্রেণীকৃত ঋণের পরিমাণ ৪৮ লাখ টাকা, তবে বাকি ৩৭৬ কোটি ৪৭ লাখ টাকা বকেয়া।

বিএনপির চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা ও চট্টগ্রাম নগর বিএনপির সভাপতি আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরীর প্রতিষ্ঠান বেঙ্গল ফিশ অ্যান্ড ফ্রগলেসের কাছে সোনালী ব্যাংকের বকেয়া ঋণ পাঁচ কোটি ২৯ লাখ টাকা। প্রিমিয়ার ব্যাংকের কাছে আমীর খসরুর মিহির গার্মেন্টসের বকেয়া ২২ লাখ টাকা। তাঁরই আলফা প্যাকেজেসের (বিডি লি.) কাছে ঢাকা ব্যাংকের বকেয়া ঋণের পরিমাণ ২৮ লাখ টাকা।

প্রধানমন্ত্রী জানান, সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী এম মোরশেদ খানের প্রতিষ্ঠান প্যাসিফিক ইন্ডাস্ট্রিজের কাছে আইএফআইসি ব্যাংকের বকেয়া আট কোটি ১৬ লাখ টাকা। বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংকের কাছে মোরশেদ খানের নয়াপাড়া টি কোম্পানির বকেয়া ঋণের পরিমাণ ৫৩ লাখ টাকা। প্যাসিফিক মোটরসের কাছে এইচএসবিসি ও স্ট্যান্ডার্ড চার্টার্ড ব্যাংকের বকেয়া ঋণ ১২ কোটি ৭৮ লাখ টাকা। এ ছাড়া আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরীর হোটেল সারিনার কাছে ঢাকা ব্যাংক, সিটি ব্যাংক ও প্রিমিয়ার ব্যাংকের বকেয়া ঋণ ২৯ কোটি ৬৭ লাখ টাকা।

প্রধানমন্ত্রী রাষ্ট্রায়ত্ত প্রতিষ্ঠানগুলোর কাছে সরকারি ব্যাংকগুলোর (সোনালী, জনতা, অগ্রণী ও রূপালী) বকেয়া বাবদ ১৫ হাজার ১১৩ কোটি ৬১ লাখ টাকা পাওনারও হিসাব দেন। এর মধ্যে খাদ্য মন্ত্রণালয়ের কাছে ব্যাংকগুলোর মোট ২৮৩ কোটি তিন লাখ টাকা বকেয়া ঋণের ২৭ কোটি ৩৬ লাখ টাকা শ্রেণীকৃত। বাংলাদেশ কৃষি উন্নয়ন করপোরেশনের (বিএডিসি) কাছে মোট বকেয়া এক হাজার ৫৩৬ কোটি ৪৩ লাখ টাকার মধ্যে ৩৫২ কোটি ৩১ লাখ টাকা শ্রেণীকৃত। বাংলাদেশ টেক্সটাইল মিলস করপোরেশনের কাছে ১৬৪ কোটি ৮২ লাখ টাকা বকেয়ার মধ্যে ১৫৯ কোটি ৩৮ লাখ টাকা শ্রেণীকৃত। বাংলাদেশ কেমিক্যাল ইন্ডাস্ট্রিজ করপোরেশনের (বিসিআইসি) কাছে মোট দুই হাজার ৬০০ কোটি ১৯ লাখ টাকা বকেয়ার ৮৩ কোটি ৬৫ লাখ টাকা শ্রেণীকৃত ঋণ রয়েছে।