তালেবান সরকার প্রশ্নে বাংলাদেশকে সতর্ক থাকতে হবে

ছবি: সংগৃহীত

তালেবান সরকারকে স্বীকৃতি প্রশ্নে বাংলাদেশকে পর্যবেক্ষণ ও সতর্ক সিদ্ধান্ত নেওয়ার জায়গায় থাকতে হবে। ভূরাজনৈতিক অবস্থা বিবেচনায় নিয়ে দেশের স্বার্থ নিশ্চিত করে এগোতে হবে বাংলাদেশকে। সেই সঙ্গে তালেবান সরকারের আগামী মতাদর্শ কী হবে, সে সম্পর্কেও একটি ধারণা নেওয়ার চেষ্টা করতে হবে।

আজ বুধবার ‘আফগানিস্তানে তালেবান সরকার: চ্যালেঞ্জ ও এর আঞ্চলিক প্রভাব–প্রতিক্রিয়া’ শীর্ষক এক ভার্চ্যুয়াল আলোচনা সভায় এসব কথা বলেন বক্তারা।

আলোচনা সভাটির আয়োজন করে ‘স্টাডি গ্রুপ অন রিজিওনাল অ্যাফেয়ার্স’ নামে বেসরকারি একটি সংগঠন।

আয়োজক সংগঠনের প্রধান নির্বাহী আমীর খসরু সভাটি সঞ্চালনা করেন। সূচনা বক্তব্যে তিনি আফগানিস্তানের পটপরিবর্তনের তথ্য তুলে ধরে বলেন, আফগানিস্তানে নতুন প্রবণতা থেকে বোঝা যাচ্ছে, সেখানে যুদ্ধ একেবারে শেষ হয়ে যায়নি। সেখানে এখন মানবিক বিপর্যয় শুরু হয়েছে। নতুন তালেবান আর গোঁড়া তালেবানের মধ্যে দ্বন্দ্বে সরকার গঠন চ্যালেঞ্জের মুখে পড়েছে। তালেবান জঙ্গিবাদে মদদ দেবে না বললেও তাতে কেউ আস্থা রাখতে পারছে না। আফগানিস্তানের এই পরিস্থিতিতে পার্শ্ববর্তী দেশগুলোকে কী কী ধরনের চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করতে হবে, তা নিয়েও আলোচনা শুরু হয়েছে।

আলোচনায় অংশ নিয়ে সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা হোসেন জিল্লুর রহমান বলেন, আফগানিস্তানের বিষয়টি চলমান বলে এখনই বিশ্লেষণাত্মক সিদ্ধান্ত নেওয়া ঠিক হবে না। তিনটি সম্ভাব্য বিষয় নিয়ে আলোচনা হচ্ছে, এটা ধর্মযুদ্ধ নয়, জাতীয়তাবাদী যুদ্ধ ছিল। দ্বিতীয়ত, উগ্রবাদ ও সন্ত্রাসবাদের বাস্তবতায় ক্ষমতাধর বিশ্ব ঘটনাটিকে কীভাবে ব্যবহার করবে, আর নতুন তালেবান সরকারে সুশাসন ও উদারতা প্রাধান্য পাবে কি না। বাংলাদেশকে এ জন্য তালেবান সরকারকে স্বীকৃতি প্রশ্নে সতর্ক পর্যবেক্ষণ ও সতর্ক সিদ্ধান্ত নেওয়ার অবস্থায় থাকতে হবে। আফগানিস্তানে পটপরিবর্তনের ঘটনায় ভূরাজনৈতিক বিবেচনায় বিভিন্ন জোট হবে। বাংলাদেশকে নিশ্চিত হতে হবে, কোন দিকে অবস্থান নিলে দেশের স্বার্থ নিশ্চিত হবে।

সাবেক পররাষ্ট্রসচিব শমসের মবিন চৌধুরী বলেন, একটি রাষ্ট্র অপর একটি রাষ্ট্রকে স্বীকৃতি দেয়, সরকার নয়। রাষ্ট্র হিসেবে আফগানিস্তানকে বহু আগেই বাংলাদেশ স্বীকৃতি দিয়েছে। এখন তালেবান সরকারকে স্বীকৃতি নয়, সম্পর্ক কী হবে, সেটা নিয়ে এখনই ভাবতে হবে এবং তালেবানের সঙ্গে প্রাথমিক আলোচনা শুরু করার মাধ্যমে নারীশিক্ষা, উন্নয়নসহ অন্যান্য ইস্যুতে তারা কতটা দায়িত্বশীল হবে, সেটা বুঝে নিতে হবে।

২০ বছর আগের তালেবান সরকারের সঙ্গে নতুন তালেবান সরকারের চারিত্রিক বৈশিষ্ট্যে খুব একটা পরিবর্তন নাও থাকতে পারে বলে মনে করেন শান্তি ও নিরাপত্তাবিষয়ক গবেষণা প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব পিস অ্যান্ড সিকিউরিটি স্টাডিজের (বিআইপিএসএস) প্রেসিডেন্ট মেজর জেনারেল (অবসরপ্রাপ্ত) আ ন ম মুনিরুজ্জামান। তিনি বলেন, ‘আফগানিস্তান প্রশ্নে বাংলাদেশের নিজস্ব বৈদেশিক নীতি থাকতে হবে। ভার–চীনের বৈরিতা যাতে বাংলাদেশকে প্রভাবিত করতে না পারে। সতর্কতার সঙ্গে এগোতে হবে। আমাদের সিদ্ধান্ত যাতে আমরা (বাংলাদেশ) নেই।’ এ ছাড়াও তিনি বলেন, তালেবানের উত্থানে দেশের কিছু উগ্রবাদী গোষ্ঠী পুনরুজ্জীবিত হওয়ার চেষ্টা করছে। এ ব্যাপারে সজাগ দৃষ্টি রাখতে হবে।

সাবেক পররাষ্ট্রসচিব মো. তৌহিদ হোসেন বলেন, আফগানিস্তানের সঙ্গে বাংলাদেশের সীমান্ত নেই বলে তালেবান উত্থানে এখানে কম প্রভাব পড়তে পারে। এরপরও উগ্রবাদীদের কথা মাথায় রেখে সতর্ক থাকতে হবে। তালেবান আগের মতাদর্শ ও কর্মপদ্ধতি থেকে কতটা সরে এসেছে, তা পর্যবেক্ষণ করতে হবে।

২০ বছর আগের তালেবানের তুলনায় নতুন তালেবানের নারীর অধিকার ও মানবাধিকারবিষয়ক মনোভাবে পরিবর্তন এসেছে বলে মনে করেন ইসলামী ঐক্যজোটের মহাসচিব মুফতি ফয়জুল্লাহ। তিনি বলেন, ইসলামি দলগুলোর জন্য তালেবানের উত্থান আনন্দ, তৃপ্তি ও প্রেরণার জায়গা তৈরি করেছে। তবে এটাকে পুঁজি করে দেশে বিশৃঙ্খলা ও উগ্রবাদ সৃষ্টি করার কোনো ভাবনা দলগুলোর নেই।