তাসপিয়া ও তাঁর বাবাকে গুলি করার কথা স্বীকার করেছেন রিমন: র‌্যাব

নোয়াখালীর বেগমগঞ্জে বাবার কোলে গুলিবিদ্ধ হয়ে চার বছরের শিশু তাসপিয়া নিহত হওয়ার ঘটনায় র‌্যাবের হাতে গ্রেপ্তার প্রধান আসামি রিমনসহ (সর্বডানে) পাঁচজন। আজ বুধবার দুপুরে নোয়াখালীর বেগমগঞ্জে র‌্যাবের কার্যালয়ের সামনে
ছবি: প্রথম আলো

পাঁচটি মামলার গ্রেপ্তারি পরোয়ানা মাথায় নিয়ে অপরাধ করে বেড়াতেন নোয়াখালীর বেগমগঞ্জ উপজেলায় বাবার কোলে গুলিবিদ্ধ হয়ে নিহত চার বছরের শিশু তাসপিয়া আক্তার হত্যা মামলার প্রধান আসামি সন্ত্রাসী মো. রিমন (২৩)। গতকাল মঙ্গলবার রাতে র‌্যাবের অভিযানে গ্রেপ্তার হওয়ার পর প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে রিমন র‌্যাবকে এ তথ্য দেন। শুধু তা–ই নয়, শিশু তাসপিয়া ও তাঁর বাবাকে লক্ষ্য করে গুলি ছোড়ার কথাও স্বীকার করেছেন রিমন।

রিমন ও তাঁর অপর চার সহযোগীকে গ্রেপ্তার ও অস্ত্র উদ্ধারের ঘটনার পর আজ বুধবার র‌্যাব-১১-এর নোয়াখালী ক্যাম্প কার্যালয়ে আয়োজিত প্রেস ব্রিফিংয়ে এসব তথ্য জানান র‌্যাবের লিগ্যাল অ্যান্ড মিডিয়া উইংয়ের পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন। দুপুর ১২টার দিকে র‌্যাবের ব্রিফিংটি অনুষ্ঠিত হয়।

ব্রিফিংকালে র‌্যাবের গণমাধ্যম শাখার পরিচালক খন্দকার আল মঈন জানান, ১৩ এপ্রিল নোয়াখালীর বেগমগঞ্জ উপজেলার হাজীপুর গ্রামে জমিসংক্রান্ত পূর্ববিরোধের জের ধরে এক হৃদয়বিদারক ঘটনা ঘটে। সন্ত্রাসী রিমন ও তাঁর বাহিনীর সদস্যরা প্রবাসী আবু জাহের ও তাঁর কোলে থাকা শিশুকন্যা তাসপিয়াকে লক্ষ্য করে গুলি ছোড়েন। এতে বাবা-মেয়ে দুজনই গুলিবিদ্ধ হয়। উন্নত চিকিৎসার জন্য ঢাকায় নেওয়ার পথে মারা যায় তাসপিয়া।

আরও পড়ুন
বাবার কোলে থাকা অবস্থায় গুলিবিদ্ধ হয়ে মারা যাওয়া তাসফিয়া আক্তারের স্বজনদের আহাজারি। ১৪ এপ্রিল বেলা সোয়া ১১টায়
ফাইল ছবি

খন্দকার আল মঈন জানান, শিশু হত্যার ঘটনায় প্রধান অভিযুক্ত রিমন অপর চার সহযোগীসহ প্রথমে অ্যাম্বুলেন্সে করে ঢাকায় আত্মগোপনের চেষ্টা করেন। কিন্তু রমজান ও ঈদকেন্দ্রিক আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর তৎপরতা বেশি থাকায় তাঁরা মত বদলান। পরে তাঁরা নোয়াখালীর সুবর্ণচরের চর ক্লার্ক এলাকার একটি নির্জন স্থান বেছে নেন।

র‌্যাবের গণমাধ্যম শাখার পরিচালকের দাবি, গতকাল মঙ্গলবার রাত নয়টার পর চর ক্লার্কের সেই স্থানে অভিযান চালায় র‌্যাব। এ সময় রিমন ও তাঁর সহযোগীরা র‌্যাবের উপস্থিতি টের পেয়ে গুলি ছোড়ে। র‌্যাবও পাল্টা গুলি ছোড়ে। একপর্যায়ে রিমন ও তাঁর সহযোগীরা র‌্যাবের কাছে অস্ত্র–গুলিসহ আত্মসমর্পণ করেন।

সংবাদ ব্রিফিংয়ে জানানো হয়, আত্মসমর্পণকারীরা হলেন মো. রিমন, তাঁর প্রধান সহযোগী এজাহারনামীয় ৩ নম্বর আসামি মহিন (২৫), ৪ নম্বর আসামি মো. আকবর (২৫), ৫ নম্বর আসামি মো. সুজন (২৮) ও ১০ নম্বর আসামি নাঈম প্রকাশ ওরফে বড় নাঈম (২৩)। এ সময় তাঁদের কাছ থেকে একটি বিদেশি পিস্তল, একটি এলজি, একটি কার্তুজ ও ১১টি গুলি উদ্ধার করা হয়েছে।

র‌্যাব জানায়, গ্রেপ্তার রিমনের বিরুদ্ধে আগের আটটি মামলা ছিল, যার মধ্যে পাঁচটি মামলারই গ্রেপ্তারি পরোয়ানা ছিল। এ ছাড়া সেকেন্ড ইন কমান্ড মহিনের বিরুদ্ধে ছয়টি, আকবরের বিরুদ্ধে তিনটি, সুজনের বিরুদ্ধে একটি মামলা রয়েছে।

শিশু তাসপিয়া আক্তার
ছবি: সংগৃহীত

শিশু তাসপিয়ার হত্যার ঘটনায় জড়িত প্রধান আসামি রিমনসহ পাঁচ সন্ত্রাসীকে গ্রেপ্তারের খবরে র‌্যাব কার্যালয়ের পাশের রাস্তায় ভিড় জমান হাজীপুর থেকে আসা শতাধিক বাসিন্দা। তাঁরা এ সময় সেখানে বিক্ষোভ প্রদর্শন করেন। এ ছাড়া র‌্যাবের প্রেস ব্রিফিংস্থলে উপস্থিত ছিলেন নিহত তাসপিয়ার বাবা আবু জাহের। তিনি র‌্যাবের ভূমিকার প্রশংসা করে বলেন, ‘আমার এখন একটাই চাওয়া, আমার মাছুম বাচ্চার খুনিদের মৃত্যুদণ্ড। আর আমার পরিবারের নিরাপত্তা যেন সরকার নিশ্চিত করে। কারণ, আমি বিদেশে থাকি।’