তিনবিঘা করিডোরে আনন্দ উৎসব

তিনবিঘায় ভারতীয় অংশে আনন্দ মিছিল। ছবি: ভাস্কর মুখার্জি
তিনবিঘায় ভারতীয় অংশে আনন্দ মিছিল। ছবি: ভাস্কর মুখার্জি

মধ্যে কাঁটাতারের বেড়া আর দুই পাশে দুই দেশের বাসিন্দা। কিছুদিন আগেও তাঁরা কোনো দেশের নাগরিক ছিলেন না। এখন তাঁদের আছে নাগরিক পরিচয়। কেউ ভারতের নাগরিক আর কেউ বাংলাদেশের। 

এ এক অভূতপূর্ব দৃশ্য। তিনবিঘা করিডোর আজ শুক্রবার আনন্দের বন্যায় ভেসে যায়। ভারত ও বাংলাদেশের হাজারো ছিটমহলবাসী আজ একত্র হয়েছিল এই তিনবিঘা করিডোরে। মেতেছিল আনন্দ উৎসবে। কিন্তু ছিল সেই কাঁটাতারের বন্ধনী।
স্লোগানে প্রকম্পিত হয়েছিল তিনবিঘা করিডোরের আকাশ। বাংলাদেশের পাড় থেকে হাজারো কণ্ঠে ধ্বনিত, ‘আর নয় ছিটবাসী, আমরা এখন বাংলাদেশি’। ভারতের পাড় থেকে ধ্বনিত ‘আর নয় ছিটমহলবাসী, আমরা এখন ভারতবাসী’। হাতে দুই দেশের জাতীয় পতাকা। বাংলাদেশের লালমনিরহাট জেলার পাটগ্রামের ৯ কিলোমিটার দূরে এই তিনবিঘা করিডোর। করিডোরের পাশেই ভারতের কোচবিহার জেলার মেখলিগঞ্জ মহকুমার কুচলিবাড়ি সীমান্তে তিনবিঘা জমির ওপর গড়া হয়েছে এই তিনবিঘা করিডোর। এই করিডোর দিয়ে বাংলাদেশিরা যাতায়াত করেন আঙ্গুরপোতা ও দহগ্রাম ছিটমহলে।

তিনবিঘায় ভারতীয় অংশে আনন্দ মিছিল। ছবি: ভাস্কর মুখার্জি
তিনবিঘায় ভারতীয় অংশে আনন্দ মিছিল। ছবি: ভাস্কর মুখার্জি

বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে ছিটমহল বিনিময় চুক্তি সম্পাদনের পর আজ প্রথম দুই দেশের ছিটমহলবাসীরা একত্র হন তিনবিঘা করিডোরে। ভারত-বাংলাদেশ ছিটমহল বিনিময় সমন্বয় কমিটির ডাকে দুই পাড়ে হাজির হন তাঁরা। বাংলাদেশের অভ্যন্তরে থাকা ১১১টি ছিটমহলের বাসিন্দারা আনন্দের মিছিল নিয়ে যায় তিনবিঘা করিডোর দিয়ে। এরপরে মিছিল বের করেন ভারতের অভ্যন্তরে থাকা ৫১টি বাংলাদেশি ছিটমহলের হাজারো মানুষ। তাদের কণ্ঠে ছিল দীর্ঘ ৬৭ বছরের যন্ত্রণা থেকে মুক্ত হওয়ার কথা। নতুনভাবে স্বাধীনতা পাওয়ার আনন্দে তাঁরা আজ উদ্বেলিত।

তিনবিঘা করিডোরে বাংলাদেশের আনন্দ মিছিল। ছবি: ভাস্কর মুখার্জি
তিনবিঘা করিডোরে বাংলাদেশের আনন্দ মিছিল। ছবি: ভাস্কর মুখার্জি

কড়া নিরাপত্তার মধ্যে অনুষ্ঠিত হয় এই বিজয় ও আনন্দ মিছিল। মিছিল শেষে ভারত ও বাংলাদেশ দুই অংশেই আয়োজন করা হয় সমাবেশের। এই দুটি সমাবেশে বক্তব্য রাখেন দুই দেশের ছিটমহল আন্দোলনের নেতারা। ভারত-বাংলাদেশ ছিটমহল বিনিময় সমন্বয় কমিটির সম্পাদক সৌমেন্দ্র দাস, সহসম্পাদক দীপ্তিমান সেনগুপ্ত, আর বাংলাদেশের সমন্বয় কমিটির সাধারণ সম্পাদক গোলাম মোস্তফা এবং সভাপতি মইনুল হক প্রমুখ ভাষণ দেন। তাঁরা বলেন ছিটমহল আন্দোলনের অতীত দিনের কথা। কীভাবে তাঁরা এই আন্দোলনে নেমে আজ জয় দেখেছেন সে কথা। সমাবেশ থেকে ডাক ওঠে এবার দেশ গড়ার পালা। দেশ গড়তে হবে হৃদয় দিয়ে, ভালোবাসা দিয়ে। ঐক্যবদ্ধ থাকতে হবে ছিটমহলবাসীদের।

তিনবিঘা করিডোরের কাঁটাতারের বেড়ার এপাশে ওপাশে সমাবেশের অংশ। ছবি: ভাস্কর মুখার্জি
তিনবিঘা করিডোরের কাঁটাতারের বেড়ার এপাশে ওপাশে সমাবেশের অংশ। ছবি: ভাস্কর মুখার্জি

সমাবেশে দীপ্তিমান সেনগুপ্ত বলেন, এত দিন একটি ভারতের সঙ্গে ১১১টি টুকরো ভারত ছিল, আর একটি বাংলাদেশের সঙ্গে ৫১টি টুকরো বাংলাদেশ ছিল। আজ আর তা থাকল না। হয়ে গেল একটি ভারত এবং একটি বাংলাদেশ। তিনি আরও বলেন, ৬৭ বছরের যন্ত্রণা থেকে মুক্ত হয়েছে ছিটমহলবাসী। এখন তারা স্বাধীন। এবার তারা আর থাকবে না পরদেশে পরগাছা হয়ে। হবে স্বাধীন দেশের নাগরিক। ভোগ করবেন মৌলিক অধিকার।