তিন বাহিনীর পদমর্যাদা সমান করার দাবি

তিন বাহিনীর পদমর্যাদায় সমতা আনার দাবি জানিয়েছে বিমানবাহিনী। এ ছাড়া প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের গুরুত্বপূর্ণ পদে বিমানবাহিনীর কর্মকর্তাদের নিয়োগ দেওয়ার প্রস্তাবও করা হয়েছে। গতকাল বুধবার বিমানবাহিনীর ঘাঁটি বাশারে আয়োজিত দরবারে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে এসব দাবি তুলে ধরেন কর্মকর্তারা।
বিমানবাহিনীর একজন কর্মকর্তা প্রধানমন্ত্রীকে বলেন, তিন বাহিনীর মধ্যে সমতা আনা প্রয়োজন। শুধু সেনাবাহিনীর প্রধান জেনারেল পদমর্যাদার এবং নৌ ও বিমানবাহিনীর প্রধান লেফটেন্যান্ট জেনারেল পদমর্যাদার। বিমানবাহিনীর কর্মকর্তারা ‘উচ্চ উড্ডয়ন’ ঝুঁকি ভাতা, প্রতিরক্ষা সার্ভিস ভাতা ও অবসর প্রস্তুতিমূলক ছুটি ছয় মাস থেকে এক বছর করার দাবি করেন। বিমানবন্দরের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে স্বতন্ত্র ‘এয়ার রেজিমেন্ট’ গঠন এবং সিলেটে একটি বিমানঘাঁটি স্থাপনে উদ্যোগ নেওয়ার অনুরোধ জানান তাঁরা।
জবাবে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা রসিকতা করে বলেন, ‘যেখানে যাই, সবাই খালি ভাতা বাড়ানোর কথা বলে, বেতন বাড়ানোর কথা কেউ বলে না।’ তিনি বলেন, তাঁর সরকার বিমানবাহিনীর উন্নয়নে সাধ্যমতো কাজ করেছে। আবার ক্ষমতায় এলে উন্নয়নের ধারাবাহিকতা রক্ষা করা হবে। বাহিনীতে অবসরকালীন প্রস্তুতি ছুটির মেয়াদ এক বছর করার প্রস্তাব নীতিগতভাবে অনুমোদন করেন তিনি। তিন বাহিনীর পদমর্যাদার কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, স্বাধীনতার পর সব বাহিনীর পদমর্যাদা একই ছিল। পরে সব ওলটপালট হয়ে যায়।
দরবারে বিমানবাহিনীর প্রধান এয়ার ভাইস মার্শাল ইনামুল বারী, প্রতিরক্ষা উপদেষ্টা তারিক আহমেদ সিদ্দিক, সশস্ত্র বাহিনী বিভাগের প্রিন্সিপাল স্টাফ অফিসার আবু বেলাল মো. শফিউল হকসহ বিমানবাহিনীর প্রায় পাঁচ হাজার সদস্য উপস্থিত ছিলেন। রানওয়ের ওপর তাঁবু খাটিয়ে তাঁদের বসার ব্যবস্থা করা হয়।
দরবারের শুরুতে স্বাগত ভাষণ দেন বিমানবাহিনীর প্রধান। তিনি বলেন, বিমানবাহিনী দেশে দক্ষ জনশক্তি তৈরি করছে। এসব জনশক্তি আকাশ প্রতিরোধব্যবস্থার উন্নতি ঘটাচ্ছে। বিমানবাহিনীর বিভিন্ন উন্নয়নের কথা তুলে ধরেন তিনি।
এরপর প্রধানমন্ত্রী ভাষণ দেন। প্রধানমন্ত্রী বাহিনীর সদস্যদের কাছে জানতে চান, তাঁদের কোনো প্রশ্ন আছে কি না। কয়েকজন সদস্য তাঁদের বিভিন্ন দাবির কথা বলেন।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, বর্তমান সরকার ক্ষমতায় আসার পর চীন থেকে ১৬টি যুদ্ধবিমান, রাশিয়া থেকে তিনটি হেলিকপ্টার কিনেছে। এ ছাড়া ভূমি থেকে আকাশে নিক্ষেপণযোগ্য ক্ষেপণাস্ত্র, পরিবহন বিমান কেনা হয়েছে। আরও ৩৬টি বিমান ও সাতটি কপ্টার কেনার প্রক্রিয়া শেষ হয়েছে। এ ছাড়া ডুবো যুদ্ধজাহাজ কেনার বিষয়টি প্রক্রিয়াধীন। জঙ্গি বিমান ও হেলিকপ্টার মেরামতের জন্য আলাদা কারখানা স্থাপন করা হচ্ছে। বাহিনীর সাংগঠনিক কাঠামোতেও ব্যাপক পরিবর্তন আনা হচ্ছে। আরও কিছু নতুন ইউনিট স্থাপনের কথা বলেন তিনি।
শেখ হাসিনা বলেন, নয়টি হেলিকপ্টার ও একটি বিমান থেকে বর্তমানে বিমানবাহিনীর ৫০৬ জন কর্মকর্তা জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা মিশনে দায়িত্ব পালন করছেন। ১৯৯৩ সাল থেকে বাহিনীর সদস্যরা ২৪টি শান্তিরক্ষা মিশনে অংশ নিয়েছেন। এ সরকারের আমলেই চীন থেকে নয়টি, রাশিয়া থেকে ২৪টি বিমান, পাঁচটি হেলিকপ্টার এবং আরও দুটি হেলিকপ্টার ও তিনটি প্রশিক্ষণ বিমান কেনার প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। চারটি বিমান প্রতিরক্ষা রাডার স্থাপন করার চুক্তি হয়েছে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, বিমানবাহিনীকে যেকোনো হুমকি মোকাবিলায় সব সময় প্রস্তুত থাকতে হবে। ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের প্রতি আস্থা, পারস্পরিক বিশ্বাস ও সহমর্মিতা নিয়ে কাজ করার আহ্বান জানান তিনি।