তিন ভাইয়ের গরুর খামার

পাবনার ঈশ্বরদীর দিয়াড় বাঘইল গ্রামে কঠোর পরিশ্রম ও নিরন্তন চেষ্টায় গড়ে তোলা হয়েছে দেশি গরুর খামার। শুরুতে একটিমাত্র গাভি ছিল, এখন সেখানে ১০০টি হয়েছে l ছবি: প্রথম আলো
পাবনার ঈশ্বরদীর দিয়াড় বাঘইল গ্রামে কঠোর পরিশ্রম ও নিরন্তন চেষ্টায় গড়ে তোলা হয়েছে দেশি গরুর খামার। শুরুতে একটিমাত্র গাভি ছিল, এখন সেখানে ১০০টি হয়েছে l ছবি: প্রথম আলো

পাবনার ঈশ্বরদী উপজেলার পাকশী ইউনিয়নে গরুর খামারের মাধ্যমে তিন ভাই সংসারে সচ্ছলতা ফিরিয়েছেন। মাত্র একটি বাছুর দিয়ে খামার শুরু করেন তাঁরা। তাঁদের সেই খামারে বর্তমানে গরুর সংখ্যা ৮০।

ওই তিন ভাই হলেন সজীব মালিথা (৩৩), জহুরুল মালিথা (৪৯) ও রহিম মালিথা (৫২)। তাঁদের বাড়ি দিয়াড় বাঘইল গ্রামে। তাঁরা জানান, প্রতিদিন খামারে দুধ উৎপাদন হয় ৪০ কেজি। ৪০-৪২ টাকা কেজি পাইকারি দরে যা মাসে বিক্রি হয় ৪৮ থেকে ৫০হাজার টাকায়। বছরেছয় থেকে আটটি গরুবিক্রি থেকে পাওয়া যায় আরও ৭ থেকে ৮লাখ টাকা। সব মিলিয়ে খামার থেকে বছরে প্রায় ১৪ লাখটাকা আয় হয়।

সজীব মালিথা বলেন, তাঁর বাবা নিয়ামত মালিথা গরিব কৃষক ছিলেন। ২০০০ সালের প্রথম দিকে তিনি মারা যান। তখন সজীবের বয়স ১৪-১৫ বছর। অভাবের কারণে তাঁর পড়ালেখা বন্ধ হয়ে যায়। বাড়িতে তখন যমুনা পাড়ি জাতের চারটি ছাগল ছিল। সেই ছাগল চারটি বিক্রি করে কিছু টাকা যুক্ত করে একটি দেশীয় গাভির বাছুর কেনা হয়। কিছুদিন পর কেনা হয় আরেকটি গাভি। দুই বছর পর দুটি গাভি দুটি বকনা বাছুর দেয়। এভাবে ১৫ বছরে ৮০টি গরু হয়েছে।

রহিম মালিথা বলেন, প্রতিদিন ভোর সাড়ে পাঁচটার দিকে ঘুম থেকে উঠে খামারে আসেন তাঁরা তিন ভাই। গাভিগুলোকে খড়, গুঁড়া ও গমের ভুসি খাওয়ানো হয়। সকাল সাড়ে সাতটার মধ্যে দুধ দোহন শেষ হলে সজীব গরুগুলোকে বাড়ির বাইরে নিয়ে যান। এরপর এঁড়ে গরুগুলোকে খাওয়ানোর পালা। খাওয়ানো শেষ হলে গরুর পাল নিয়ে যাওয়া হয় পাকশীর পদ্মা নদীর চরে। সেখানে সারা দিন মাঠে ঘাস খাওয়ানো হয়। সূর্যাস্তের আগে তাঁরা চর থেকে গরু নিয়ে বাড়ি ফেরেন।

সম্প্রতি সরেজমিনে দেখা যায়, সজীবদের গ্রামের বাড়িতে খামারে চারটি ঘর রয়েছে। ঘরগুলো খোলামেলা করে তৈরি করা। তবে সেগুলো ঝড়-ঝাপটা থেকে রক্ষার জন্য ভালো ব্যবস্থা নেই। তিন ভাইয়ের পাশাপাশি বাড়ির নারী সদস্যরাও গরুর যত্ন নিচ্ছেন।

সজীবের মেজ ভাই জহুরুল মালিথা বলেন, প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা না থাকায় খামার পরিচালনায় তাঁদের অনেক সমস্যা হয়। তবু তিন ভাই মিলে কাজগুলো করে থাকেন। এর মধ্যে সজীব সবচেয়ে বেশি উদ্যমী ও পরিশ্রমী।

ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) সদস্য রেজাউল আলম বলেন, ‘শুধু পরিশ্রম ও কষ্টের কারণে খামারটি প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। অথচ আমরা এখানে সরকারি কর্মকর্তাদের আসতে দেখিনি।’

সজীব বলেন, অনেক খামারি সরকারি সহযোগিতায় ব্যাংক থেকে ঋণ নিয়ে খামার গড়ে তুলেছেন। কিন্তু তিনি সরকারি ঋণ বা সাহায্য নেননি। সরকারি পৃষ্ঠপোষকতা পেলে তিনি দেশি গরুর একটি বড় খামার গড়ে তুলতে চান।

সদ্য বদলি হয়ে যাওয়া উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা মহির উদ্দিন বলেন, ‘আমরা জেনেছি, ওই খামারটি একটি গরু দিয়ে শুরু করা হয়েছিল। বর্তমানে সেখানে অনেক গরু হয়েছে। কিন্তু খামারটির কেউ আমাদের সঙ্গে সহযোগিতার জন্য যোগাযোগ করেনি।’