
অভাবের সংসারে সচ্ছলতা ফেরাতে চার ভাই চাকরি নিয়েছিলেন অটো রাইস মিলে। আলাদা সংসার হলেও তাঁদের মধ্যে ছিল মধুর সম্পর্ক। মিলেমিশে তাঁরা কাজও করছিলেন একই প্রতিষ্ঠানে। কিন্তু সেই সম্পর্কের বন্ধন আর থাকল না। বয়লার বিস্ফোরণে একে একে তিন ভাই মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়লেন। এক ভাই এখনো জীবন-মৃত্যুর লড়াইয়ে।
দিনাজপুরের অটো রাইস মিলের বয়লার বিস্ফোরণের পর মর্মান্তিক এ ঘটনাটি একই পরিবারের। দিনাজপুর সদর উপজেলার চেহেলগাজী এলাকার ভবানীপুর গ্রামের জহির উদ্দিনের ছেলে তাঁরা। ছয় ভাইয়ের মধ্যে চার ভাই সুবল ঘোষের যমুনা অটো রাইস মিলে চাকরি করতেন। চার ভাইয়ের মধ্যে তিনজন মারা যাওয়ার পর বাদল ইসলাম (৪৫) এখনো রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে দগ্ধ অবস্থায় চিকিৎসাধীন রয়েছেন। চিকিৎসকেরা জানিয়েছেন, তাঁর শরীরের অর্ধেক ঝলসে গেছে। তাঁর অবস্থাও আশঙ্কাজনক।
আজ সোমবার হাসপাতালের বার্ন ইউনিটে দেখা গিয়ে দেখা যায়, দগ্ধ বাদল ইসলাম চোখ বন্ধ করে বিছানায় শুয়ে আছেন। শরীরের বিভিন্ন স্থানে ক্ষত। ব্যান্ডেজ রয়েছে। যন্ত্রণায় কাতরাচ্ছেন। দগ্ধ শরীর নিয়ে এপাশ-ওপাশও করতে পারছেন না। কেউ কিছু জানতে চাইলে চোখ মেলে তাকান। অনেকক্ষণ পর বললেন, ‘আমার কী হবে জানি না। তবে অনার্স পড়ুয়া ছেলেটার যেন একটা চাকরি হয়।’ এ কথা বলার পর নিস্তেজ হয়ে যান।
বাদলের শয্যার পাশে তাঁর স্ত্রী রোকসানা বেগম কান্নাজড়িত কণ্ঠে বললেন, ‘একমাত্র উপার্জনের মানুষটির আইজ এই অবস্থা। তিন ছেলেকে নিয়ে কীভাবে যে জীবন কাটবে, তা ভাববার পারছি না।’
বাদলের ছেলে রুমন ইসলাম দিনাজপুর সরকারি কলেজে সমাজবিজ্ঞান বিভাগে দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী। তিনি বলেন, বাবার মুখের দিকে তাকানো যায় না। তিন জেঠা-চাচা মারা গেছেন। এ ঘটনা বাবাকে জানানো হয়নি।
বাদলের নিহত তিন ভাই হলেন মোকসেদ, রোস্তম ও দেলোয়ার। নিহত দেলোয়ারের দুই ছেলে। এক ছেলে পঞ্চম শ্রেণিতে পড়ে। অন্যজন ছয় মাসের শিশুসন্তান। দেলোয়ারের স্ত্রী শাপলা খাতুন এ ঘটনার বিচার চেয়ে ক্ষতিপূরণ দাবি করেন।
এদিকে রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে আজ সোমবার সকালে আরও একজনের মৃত্যু হয়েছে। তিনি হলেন মনোরঞ্জন রায় (৩৬)। এ নিয়ে বয়লার বিস্ফোরণের ঘটনায় মৃতের সংখ্যা দাঁড়াল ১৩। এ হাসপাতালেই দগ্ধ অবস্থায় চিকিৎসাধীন রয়েছেন সাইদুল (৪০), বীরেন্দ্র (৫০), মাজেদুল (৩৫), এনামুল (৪৫), বাদল (৩৬) ও আনিসুল (৪৫)।
হাসপাতালের বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি বিভাগের বিভাগীয় প্রধান মারুফুল ইসলাম বলেন, আজও দগ্ধ একজনের মৃত্যু হয়েছে। চিকিৎসাধীন আরও পাঁচজনের অবস্থা আশঙ্কাজনক।
গত ১৯ এপ্রিল বেলা ১১টার দিকে দিনাজপুরে অটো রাইস মিলে বয়লার বিস্ফোরণে এ হতাহতের ঘটনা ঘটে।