তিন মামলায় মুফতি হারুন ইজাহারকে ৭ দিন করে রিমান্ডের আবেদন

হেফাজত নেতা হারুন ইজাহার
ফাইল ছবি

চট্টগ্রামের হাটহাজারীর সহিংসতার ঘটনায় মামলায় হেফাজতে ইসলামের বিলুপ্ত কমিটির শিক্ষা ও সংস্কৃতি সম্পাদক মুফতি হারুন ইজাহারকে কারাগারে পাঠিয়েছেন আদালত। বৃহস্পতিবার রাত ৮টা ১৫ মিনিটের দিকে চট্টগ্রামের জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আনজুমান আরা শুনানি শেষে এ আদেশ দেন। একই সঙ্গে গোলাম রব্বানী ইসলামাবাদী নামের হেফাজতের আরেক কর্মীকেও কারাগারে পাঠানো হয়।

চট্টগ্রাম জেলা কোর্ট পরিদর্শক হুমায়ুন কবির প্রথম আলোকে বলেন, হাটহাজারী থানার তিন মামলায় ইজাহারকে গ্রেপ্তার দেখানো হয়। পরে তাঁকে আদালতের নির্দেশে কারাগারে পাঠানো হয়। আরেকজনকে দুই মামলায় গ্রেপ্তার দেখানো হয়।

হাটহাজারী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) রফিকুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, তিন মামলায় গ্রেপ্তার দেখানো হয়েছে। হারুন ইজাহারের সাত দিন করে রিমান্ড আবেদন করা হয়েছে। সোমবার শুনানি হতে পারে।

হারুন ইজাহারকে গ্রেপ্তার দেখানো তিনটি মামলা হলো হেফাজতে ইসলামের আগের কমিটির যুগ্ম মহাসচিব মঈনুদ্দীন রুহীর গত বছরের সেপ্টেম্বরে করা মারধরের মামলা, থানায় হামলা ও ভাঙচুরের অভিযোগে পুলিশের করা দুই মামলা। গোলাম রব্বানীকে ভাঙচুরে মামলায় গ্রেপ্তার দেখানো হয়।

বুধবার রাতে ইজাহার ও রব্বানীকে নগরের লালখান বাজার জামেয়াতুল উলুম আল ইসলামিয়া মাদ্রাসা থেকে আটকের পর বৃহস্পতিবার বিকেলে র‍্যাব বলছে, হাটহাজারীর সহিংসতার ঘটনার ‘মদদদাতা’ ইজাহার।

সারা দেশে হেফাজতে ইসলামের কেন্দ্রীয় নেতা গ্রেপ্তার হলেও চট্টগ্রামে প্রথমবারের মতো সংগঠনের একজন কেন্দ্রীয় নেতা গ্রেপ্তার হলেন। হাটহাজারী ও পটিয়া থানায় হওয়া মামলায় এ পর্যন্ত ৪০ জন নেতা–কর্মীকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ।

বুধবার রাতে আটকের পর হারুনকে নগরের পতেঙ্গা র‍্যাব-৭ কার্যালয়ে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করে র‍্যাব। বিকেলে তাঁকে র‍্যাব কার্যালয় থেকে হাটহাজারী থানায় নিয়ে যাওয়া হয়। সেখান থেকে সন্ধ্যার পর আদালতে আনা হয়।

বৃহস্পতিবার বিকেলে র‍্যাব-৭ চট্টগ্রামের অধিনায়ক লে. কর্নেল মশিউর রহমান জুয়েল প্রথম আলোকে বলেন, ‘হাটহাজারী থানা ভবন, ভূমি অফিস, ডাকবাংলোতে ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগের ঘটনার মদদদাতা ছিলেন হারুন ইজাহার। ঘটনার পর থেকে র‍্যাব তাঁকে নজরদারিতে রেখেছে। পরে তাঁকে আটক করে জিজ্ঞাসাবাদে জড়িত থাকার তথ্য পাওয়া গেছে। এ জন্য হাটহাজারী থানায় হওয়া মামলায় তাঁকে গ্রেপ্তার দেখাতে আদালতে বিকেলে তোলা হবে। মামলাগুলো যেহেতু থানা-পুলিশ তদন্ত করছে, তারাই আদালতে আবেদন করবে।’

তবে হারুন ইজাহারের আইনজীবী আবদুস সাত্তার দাবি করেন, হারুন হাটহাজারী ঘটনার সঙ্গে জড়িত নন। তিনি থাকেন নগরের লালখান বাজারে। রাজনৈতিকভাবে হয়রানি করতে মিথ্যা মামলায় জড়ানো হচ্ছে।

মুফতি হারুন ইজহার ইসলামী ঐক্যজোটের একাংশের চেয়ারম্যান মুফতি ইজাহারুল ইসলামের ছেলে।

ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির বাংলাদেশ সফরবিরোধী কর্মসূচিকে কেন্দ্র করে গত ২৬ মার্চ জুমার নামাজের পর ঢাকার বায়তুল মোকাররম মসজিদ এলাকায় বিক্ষোভকারীদের সঙ্গে পুলিশ ও সরকারি দলের নেতা-কর্মীদের সংঘর্ষ হয়। এ ঘটনার জের ধরে হাটহাজারী ও পটিয়ায় সহিংসতার ঘটনা ঘটে। ৪ হাজার ৩০০ জনকে আসামি করে পটিয়া ও হাটহাজারী থানায় হামলা, ভূমি কার্যালয়ে ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগে জড়িত থাকার অভিযোগে করা সন্ত্রাসবিরোধী আইনে পৃথক সাতটি মামলা হয়। পরে ২২ এপ্রিল হেফাজতের নেতা–কর্মীদের আসামি করে পৃথক তিনটি মামলা করে হাটহাজারী থানা-পুলিশ। এর মধ্যে দুই মামলায় বিলুপ্ত কমিটির আমির জুনায়েদ বাবুনগরীকে আসামি করা হয়। তিন মামলায় আসামি করা হয় তিন হাজার জনকে। এর মধ্যে ১৪৮ জনের নাম উল্লেখ করা হয়।

হারুন ইজাহার বিস্ফোরক মামলায়ও ২০১৩ সালে গ্রেপ্তার হন। পরে জামিনে মুক্তি পান। ওই মামলায় তাঁর বাবা মুফতি ইজাহারও আসামি। এটি বিচারাধীন।