তুফান জামিন পাননি, মামলা ৬ মাসের মধ্যে নিষ্পত্তির নির্দেশ

তুফান সরকার। ফাইল ছবি
তুফান সরকার। ফাইল ছবি

বগুড়ায় কিশোরীকে ধর্ষণ এবং কিশোরী ও তাঁর মায়ের মাথা ন্যাড়া করে দেওয়ার ঘটনায় নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনে করা মামলার প্রধান আসামি তুফান সরকার হাইকোর্টে জামিন পাননি। জামিন চেয়ে তাঁর করা আবেদন মঞ্জুর করেননি হাইকোর্ট।

বিচারপতি ওবায়দুল হাসান ও বিচারপতি এস এম কুদ্দুস জামানের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ আজ বুধবার এ আদেশ দেন। একই সঙ্গে বগুড়া নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল-১ থাকা মামলাটি ছয় মাসের মধ্যে নিষ্পত্তি করতে বগুড়ার বিচারিক আদালতকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।

তুফান সরকার বগুড়া শহর শ্রমিক লীগের আহ্বায়ক ছিলেন, বর্তমানে বহিষ্কৃত। আদালতে তুফানের পক্ষে শুনানিতে ছিলেন আইনজীবী কুমার দেবুল দে ও আকতার ফরহাদ জামান। রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল রাফি আহমেদ।

পরে আইনজীবী কুমার দেবুল দে প্রথম আলোকে বলেন, ধর্ষণের অভিযোগে নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনে করা মামলায় বগুড়ার বিচারিক আদালতে তুফানের জামিন চাওয়া হলে ২২ জানুয়ারি তা না মঞ্জুর হয়। এর বিরুদ্ধে আপিল করে হাইকোর্ট তার জামিন চাওয়া হয়। এই জামিন আবেদন খারিজ করে হাইকোর্ট ওই মামলাটি ছয় মাসের মধ্যে নিষ্পত্তি করতে নির্দেশ দিয়েছেন।

আইনজীবী সূত্র বলেছে, ওই ঘটনায় শিক্ষার্থীর মা বাদী হয়ে ২০১৭ সালের ২৮ জুলাই তুফান সরকারসহ ১০ জনের বিরুদ্ধে ধর্ষণ ও নির্যাতনের অভিযোগ বগুড়া সদর থানায় মামলা করেন।

নারী ও শিশু নির্যাতন আইনে করা ওই মামলায় বাদীর ভাষ্য, ভালো কলেজে ভর্তি করবেন বলে তুফান মোবাইলে তাঁর মেয়ের সঙ্গে যোগাযোগ করেন। পরে মেয়ের ইচ্ছার বিরুদ্ধে বিয়ের প্রলোভন দেখিয়ে ২০১৭ সালের ১৭ জুলাই বগুড়ায় তুফানের বাড়িতে নিয়ে তাঁর মেয়েকে ধর্ষণ করেন। তুফানের স্ত্রী বিষয়টি জানতে পেরে ওই ঘটনার জের ধরে ওই বছরের জুলাইয়ের ২৮ তারিখ তাঁর এবং তাঁর মেয়ের মাথা ন্যাড়া করে দেন। বেধড়ক মারধরও করেন। ছাত্রী ধর্ষণ ও মা-মেয়েকে নির্যাতনের ঘটনায় বগুড়া সদর থানায় ২০১৭ সালের ২৮ জুলাই আলাদা ধারায় আলোচিত মামলা দুটি দায়ের করেন নির্যাতিত মেয়েটির মা। দুই মামলাতেই তুফান সরকার প্রধান আসামি। মামলার পর পুলিশ তুফান সরকার, তাঁর স্ত্রী আশা, শাশুড়ি রুমি খাতুন ও শ্যালিকা মার্জিয়া হাসান রুমকিসহ ১০ জনকে গ্রেপ্তার করে। নিরাপত্তার জন্য ৭ আগস্ট নির্যাতিত ছাত্রীকে রাজশাহী মহানগর এলাকায় সেফহোমে এবং তাঁর মাকে রাজশাহীর শাহ মখদুম থানার ভিকটিম সাপোর্ট সেন্টারে পাঠানো হয়। আর বহিষ্কৃত শ্রমিক লীগ নেতা তুফানের বিরুদ্ধে কারাগারে মাদক সেবনের অভিযোগ ওঠার পর তাঁকে বগুড়া থেকে কাশিমপুর কারাগারের হাই সিকিউরিটি সেলে পাঠানো হয়।

আদালত সূত্র জানায়, ২০০০ সালের নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনে করা একটি মামলার তদন্ত শেষে প্রধান আসামি তুফান সরকারসহ (৩৭) ১০ জনকে অভিযুক্ত করা হয়। তুফান ছাড়া অভিযুক্ত অন্যরা হলেন তুফানের স্ত্রী তাছমিন রহমান ওরফে আশা (২০), আশার বড় বোন পৌরসভার নারী কাউন্সিলর মারজিয়া হাসান রুমকি (৩৫), আশার মা লাভলী রহমান ওরফে রুমি (৪৫), তুফানের সহযোগী মো. আতিকুর রহমান ওরফে আতিক (২৫), মুন্না (২৪), আলী আযম দীপু (২৫), মেহেদী হাসান ওরফে রুপম (২৬), সামিউল হক ওরফে শিমুল (২৫) এবং এমারত আলম খান ওরফে জিতু (২৩)। এ মামলায় গ্রেপ্তার দেখানো হলেও প্রাথমিক তদন্তে ঘটনার সঙ্গে সংশ্লিষ্টতার সাক্ষ্য-প্রমাণ না পাওয়ায় অভিযোগপত্র থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয় তুফানের শ্বশুর জামিলুর রহমান ওরফে রুনু (৬০), নাপিত জীবন রবিদাস ওরফে যতিনকে (২৫)।

অন্যদিকে ছাত্রী ও তাঁর মাকে নির্যাতনের পর মাথা ন্যাড়া করে দেওয়ার ঘটনার মামলায় তুফানসহ ১৩ জনকে অভিযুক্ত করা হয়েছে। এর মধ্যে তুফানসহ ১০ জন নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনের মামলাতেও অভিযুক্ত। বাকি তিনজন অভিযুক্ত হলেন তুফানের শ্বশুর জামিলুর রহমান, নাপিত জীবন রবিদাস এবং বাদুড়তলা এলাকার আনজুয়ারা বেগম (৫৫)। অভিযোগপত্রে তুফানের সহযোগী মুন্না, আতিকুর রহমান এবং জীবন রবিদাস আদালতে ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন বলে উল্লেখ করা হয়।

অভিযোগপত্রে উল্লেখ করা হয়, তদন্তে সাক্ষ্যপ্রমাণ ছাড়াও ৩০ জুলাই আদালত দেওয়া নির্যাতিত মেয়েটির ২২ ধারায় জবানবন্দি, জব্দ করা আলামত, চিকিৎসকের দেওয়া সনদ, আসামিদের স্বীকারোক্তি এবং ঘটনার বাস্তবতা ও পারিপার্শ্বিকতা আমলে নিয়ে এই অভিযোগপত্র প্রদান করা হয়েছে।

বগুড়ার নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইবুনাল-১ এর রাষ্ট্রপক্ষের কৌঁসুলি নরেশ মুখ্যার্জি প্রথম আলোকে বলেন, ছাত্রী ধর্ষণ ও মা-মেয়েকে নির্যাতন মামলার প্রধান আসামি তুফান সরকার ছাড়া অন্য সব আসামি বর্তমানে জামিনে রয়েছেন। গত ২২ জানুয়ারি আসামি তুফান সরকারের পক্ষে জামিন আবেদন করলে আদালত শুনানি শেষে তা নামঞ্জুর করেন। পরে তুফান সরকারের পক্ষে তাঁর আইনজীবীরা হাইকোর্টে জামিন আবেদন করেন। হাইকোর্টের দ্বৈত বেঞ্চ বুধবার জামিন আবেদন খারিজ করে দিয়ে বগুড়ার এই আদালতকে ছয় মাসের মধ্যে মামলা নিষ্পত্তির নির্দেশ দিয়েছেন।