ত্রাণের চাল ও টাকা পাওয়ার কথা হাওরের ফসলহারা ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকদের। তাঁদের তালিকা করেছেন স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান ও সদস্যরা। এতে তাঁরা স্বজনপ্রীতি করছেন বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে।
এর মধ্যে এক ইউপি সদস্য নিজের মা, ছেলেমেয়ে, ভাই, ভাতিজা-ভাতিজি এবং শ্বশুরবাড়ির লোকজনকে তালিকায় ঢুকিয়েছেন। এই অভিযোগ জেলার বিশ্বম্ভরপুর উপজেলার ফতেপুর ইউপির ৯ নম্বর ওয়ার্ডের সদস্য বিজয় করের বিরুদ্ধে। শুধু তিনি নন, জেলাজুড়েই বিভিন্ন ইউপিতে তালিকা তৈরিতে অনিয়মের অভিযোগ পাওয়া গেছে।
দিরাইয়ে ত্রাণের চাল ও টাকা না পেয়ে এক ইউপি চেয়ারম্যান ও সদস্যের ওপর হামলার ঘটনা ঘটেছে। এদিকে দিরাই পৌর শহরে তালিকা তৈরিতে অনিয়মের অভিযোগ করায় হামলার শিকার হয়েছেন এক ব্যক্তি। দক্ষিণ সুনামগঞ্জ উপজেলার পশ্চিম বীরগাঁও ইউপিতে অনিয়মের অভিযোগ তদন্তে কমিটি করেছে উপজেলা প্রশাসন। জগন্নাথপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার (ইউএনও) কাছে তালিকা তৈরিতে অনিয়মের একাধিক লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন স্থানীয় লোকজন।
জেলা প্রশাসনের ত্রাণ ও পুনর্বাসন শাখা সূত্রে জানা গেছে, আগাম বন্যায় এ জেলায় এবারের ফসলহানিতে ৩ লাখ ২৫ হাজার ৯৯০টি কৃষক পরিবার ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এর মধ্যে দেড় লাখ পরিবারকে প্রতি মাসে ৩০ কেজি চাল ও ৫০০ টাকা হিসেবে ত্রাণ দেওয়ার কর্মসূচি নেওয়া হয়েছে। গত ৩০ এপ্রিল শাল্লা উপজেলায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এই কর্মসূচির উদ্বোধন করেন। জুলাই মাস পর্যন্ত এই সহায়তা দেওয়া হবে। এই কর্মসূচিতে আরও ১ লাখ ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারকে অন্তর্ভুক্ত করতে জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে ১১ মে ত্রাণ ও দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা মন্ত্রণালয়ে চিঠি দেওয়া হয়েছে।
তালিকা ও স্থানীয় লোকদের সূত্রে জানা গেছে, বিশ্বম্ভরপুর উপজেলার ফতেপুর ইউপির ৯ নম্বর ওয়ার্ডের সদস্য বিজয় কর তাঁর তালিকায় মা, তিন ছেলেমেয়ে, ভাই, ভাতিজা-ভাতিজি এবং শ্বশুরবাড়ি তাহিরপুর উপজেলার দক্ষিণকুল গ্রামের আরও দুজনসহ নয়জনের নাম দিয়েছেন। ইউপি সদস্যের ছেলেমেয়ে ও ভাতিজা-ভাতিজি সবার বয়সই ১৪ বছরের নিচে। এদের কারও কারও বাবার নাম পরিবর্তন করে দেওয়া হয়েছে। এই নয়জনের নামে প্রথম কিস্তির চাল ও টাকা নেওয়া হয়েছে। ১৭১ জনের তালিকায় রণজিৎ দাস, রংবাহার, শ্রাবণী—এই নামগুলো একাধিকবার এসেছে। রয়েছে একই পরিবারের একাধিক ব্যক্তির নাম। তালিকার ১৪১৪ ক্রমিকে থাকা কলায়া গ্রামের ধদী বেঁচে নেই বলে জানা গেছে।
কলায়া গ্রামের বিজন বিহারী (৪৫), রেখা রানী (৫০) ও সন্তোষ সরকারের (৪৩) অভিযোগ, তালিকায় নাম থাকলেও তাঁরা ত্রাণসহায়তা পাননি।
এ ব্যাপারে কথা বলার জন্য একাধিকবার চেষ্টা করেও ইউপি সদস্য বিজয় করের মুঠোফোন বন্ধ পাওয়া যায়। তবে ওই ইউপির চেয়ারম্যান রণজিৎ চৌধুরী বলেছেন, ‘তালিকা করা হয়েছে খুব অল্প সময়ে। সে কারণে কিছু সমস্যা থাকতে পারে। তবু যদি অভিযোগের সত্যতা পাই, তাহলে ওই নামগুলো বাদ দেওয়া হবে।’
দিরাই উপজেলার ভাটিপাড়া ইউনিয়নে ত্রাণের চাল না পেয়ে ১০ মে ওই ইউপির চেয়ারম্যান শাহজাহান কাজী এবং ৯ নম্বর ওয়ার্ডের সদস্য নগেন্দ্র চন্দ্র দাসের ওপর ক্ষুব্ধ কৃষকেরা হামলা করেছেন। স্থানীয় কৃষকদের অভিযোগ, চেয়ারম্যান ও ইউপি সদস্যরা তালিকা তৈরিতে স্বজনপ্রীতি করেছেন। এ কারণে প্রকৃত ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকেরা ত্রাণবঞ্চিত হচ্ছেন। তবে ইউপি চেয়ারম্যান শাহজাহান কাজী বলেছেন, একটি তালিকায় এক ব্যক্তির নাম দুবার আসায় তিনি সেটি যাচাই করতে চেয়েছিলেন। এ কারণে কিছু লোক ক্ষুব্ধ হয়ে তাঁদের ওপর হামলা চালিয়েছিল।
এর আগে ৪ মে দিরাই পৌর শহরের তালিকায় অনিয়মের অভিযোগে ইউএনওর কাছে লিখিত অভিযোগ দেওয়া হয়। অভিযোগ করে বাড়ি যাওয়ার পথে পৌর মেয়রের লোকদের হামলার শিকার হন স্থানীয় চণ্ডীপুর এলাকার ফয়েজ উদ্দিন নামের এক ব্যক্তি। পৌরসভার ১ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর মিয়াধন মিয়া বলেছেন, প্রথমে যে তালিকা করা হয়েছিল, তা পৌর মেয়র পরিবর্তন করে নিজের মতো করে তালিকা করেন। তবে পৌর মেয়র মোশারফ মিয়া তালিকা তৈরিতে অনিয়মের অভিযোগ অস্বীকার করেছেন।
জেলা প্রশাসক শেখ রফিকুল ইসলাম বলেন, ‘এমনিতে ত্রাণ বিতরণ নিয়ে কোনো অভিযোগ নেই। দু-একটা যা আছে সেটা তালিকা নিয়ে। এসবের পেছনে স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান ও সদস্যদের দ্বন্দ্বসহ রাজনৈতিক কারণও আছে। আমরা এ ব্যাপারে অত্যন্ত কঠোর। কোনো অভিযোগ পেলেই সঙ্গে সঙ্গে ব্যবস্থা নিচ্ছি।’