থ্যালাসেমিয়ায় আক্রান্ত শিশুদের চিকিৎসার্থে জাকাত দিন

থ্যালাসেমিয়া রোগী দোলা শিকদার, বয়স ১৩ বছর
ছবি: বাংলাদেশ থ্যালাসেমিয়া ফাউন্ডেশন

শিশু। শব্দটি শুনলেই চোখের সামনে ভেসে ওঠে সদাসুন্দর, নিষ্পাপ ও মায়াবী চেহারা। তাই তো ন্যূনতম বিবেকবান মানুষ কোনো শিশুকে কাছে পেলে কোলে টেনে নিয়ে আদর করতে কুণ্ঠাবোধ করেন না। শিশুরা মা-বাবা ও আত্মীয়স্বজনের আনন্দের খোরাক। কিন্তু এই শিশুদের যে বয়সে দুষ্টুমিতে মাতিয়ে রাখার কথা খেলার মাঠ, তখন তারা থ্যালাসেমিয়ার মতো দুরারোগ্য রোগে আক্রান্ত হয়ে শুয়ে আছে হাসপাতালের বেডে।

এমনই এক ফুটফুটে মেয়ে দোলা। বয়স যখন ছয় মাস, তখনই মারাত্মক রোগ থ্যালাসেমিয়া ধরা পরে। মা-বাবার ঘরে যেন অন্ধকার নেমে আসে। তাঁদের বড় ছেলেও যে থ্যালাসেমিয়া রোগী। এ রোগে আক্রান্তদের সুস্থ থাকার জন্য সারা জীবন নিয়মিত রক্ত দিতে হয়। ছেলেমেয়েকে নিয়ে তাঁরা দিনের পর দিন নানা হাসপাতালে গিয়েছেন, এক ব্যাগ রক্ত পাওয়ার জন্য অনেক খাটুনি খাটতে হয়েছে। চিকিৎসার খরচও অনেক।

দোলার বাবা চায়ের দোকান থেকে যা আয় করেন, তার মোটা অংশই চলে যায় ছেলেমেয়ের চিকিৎসায়। তাই বলে কি চিকিৎসা থামান যায়? নিজে একবেলা না খেলেও সন্তানদের চিকিৎসায় কোনো ঘাটতি দেবেন না তিনি। কিন্তু থ্যালাসেমিয়া রোগ অন্য যেকোনো রোগের মতো নয় যে একবার চিকিৎসা করালেই সেরে উঠবে। বছরের পর বছর এ রোগের চিকিৎসা চালিয়ে যাওয়া লাগে। চিকিৎসার জন্য এত টাকা কোথা থেকে পাবেন—এই দুশ্চিন্তায় যখন দোলার মা-বাবা দিন পার করছেন, তখনই তারা বাংলাদেশ থ্যালাসেমিয়া ফাউন্ডেশনের খোঁজ পান। একটু আশার আলো খুঁজে পান তাঁরা। ফাউন্ডেশনের জাকাত ফান্ড থেকে তাদের বিনা মূল্যে চিকিৎসা দেওয়া হবে, তা তাঁরা কল্পনাও করেননি।

নাদিয়ার আড়াই মাস বয়স থেকেই রক্তশূন্যতার লক্ষণ দেখা দেয়। তখন থেকেই তাকে প্রতি মাসে এক ব্যাগ রক্ত দেওয়া লাগে। ছোট হাতে সুঁই দিলে নাদিরার চেয়ে কষ্ট বেশি হয় তার মা রেহানা বেগমের। তবে নয় বছরে এখন সেটা মন-সওয়া হয়ে গেছে।

পড়ালেখায় মন নেই, দুষ্টুমি করে সবাইকে মাতিয়ে রাখাই নাদিরার কাজ। মাদ্রাসায় সে ভালো ছাত্রী, বড় হয়ে ডাক্তার হওয়ার স্বপ্ন দেখে।

নাদিয়ার যখন থ্যালাসেমিয়া ধরা পড়ল, তখন অসহায় মা রেহানা রাস্তার মানুষকে ধরে ধরে তাঁর মেয়ের জন্য রক্ত দিতে বলতেন। অসচ্ছল পরিবার চিকিৎসার জন্য সব মাসে খরচ জোগাড় করতে পারতেন না। ভেজা চোখে নাদিরার মা বলেন, ‘হাসপাতালে চিকিৎসার খরচ দেওয়া লাগে না, এতে সামর্থ্যের মধ্যে ওর পছন্দের খাবার, খেলনা ও পোশাক কিনে দিতে পারছি। দোয়া করি ফাউন্ডেশন আরও ভালো কিছু করুক।’

থ্যালাসেমিয়া রোগী নাদিয়া আক্তার, বয়স ৯ বছর
ছবি: বাংলাদেশ থ্যালাসেমিয়া ফাউন্ডেশন

দোলা-নাদিয়ার মতো এমন উজ্জ্বল শিশুদের পাশে আছে বাংলাদেশ থ্যালাসেমিয়া ফাউন্ডেশন। দরিদ্র ও সহায়-সম্বলহীন রোগী, যাদের পক্ষে চিকিৎসার খরচ বহন করা দুঃসাধ্য ব্যাপার, তাদের পাশে দাঁড়াতে জাকাত তহবিল তৈরি করে এ ফাউন্ডেশন। ২০২০ সালে প্রতিষ্ঠানটি প্রায় ২ কোটি ৬০ লাখ টাকা জাকাত সংগ্রহ করে ৩৯৫ জন রোগীকে সারা বছর চিকিৎসা দিয়েছে। এ ছাড়া ১১৮ জন রোগীকে স্পনসরশিপ প্রোগ্রামের মাধ্যমে বিনা মূল্যে এবং ১ হাজার ৪৬৩ জন রোগীকে ভর্তুকি প্রদানের মাধ্যমে চিকিৎসা প্রদান করা হয়েছে। এ বছর ফাউন্ডেশনের লক্ষ্য ৫০০ জন নতুন রোগীকে বিনা মূল্যে চিকিৎসা দেওয়া। বাংলাদেশ থ্যালাসেমিয়া ফাউন্ডেশনের এই উদ্যোগকে সহায়তা করছে প্রথম আলো।

রোগীর সংখ্যা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে খরচটাও বেড়ে যায়। তাই তো আমরা সমাজের হৃদয়বান ব্যক্তিদের অনুরোধ জানাই বাংলাদেশ থ্যালাসেমিয়া ফাউন্ডেশনের জাকাত ফান্ডে সহযোগিতা করে থ্যালাসেমিয়ায় আক্রান্ত শিশুদের পাশে থাকতে। আপনার জাকাতের টাকা বাঁচাতে পারে একটি কোমল শিশুর জীবন।

থ্যালাসেমিয়া ফাউন্ডেশন হাসপাতালে ৩ হাজার ৮১১ জন নিবন্ধিত রোগী আছে, যার অধিকাংশই দরিদ্র। আপনার জাকাতের অর্থ ফাউন্ডেশনের জাকাত ফান্ডে দান করুন।
১) ব্যাংক অ্যাকাউন্টের নাম: বাংলাদেশ থ্যালাসেমিয়া ফাউন্ডেশন (জাকাত ফান্ড)
অ্যাকাউন্ট নং: ২০৫০১৪৫০১০০৫১৯৩১৫, ইসলামী ব্যাংক বাংলাদেশ লিমিটেড, মৌচাক শাখা, ঢাকা

অ্যাকাউন্ট নং: ০১১৩০৯৯৪৮০২, স্ট্যান্ডার্ড চার্টার্ড ব্যাংক, গুলশান শাখা, ঢাকা
অ্যাকাউন্ট নং: ১০৮১১০০০৩৭৭০৩, ডাচ্‌-বাংলা ব্যাংক লিমিটেড, শান্তিনগর শাখা, ঢাকা

অন্যান্য ব্যাংকে অ্যাকাউন্টের তালিকা: www.thals.org/banks
২) মোবাইল ব্যাংকিং (মার্চেন্ট অ্যাকাউন্ট):
বিকাশ/নগদ: ০১৭২৯২৮৪২৫৭
রকেট: ০১৭২৯২৮৪২৫৭১

(মেনু থেকে ‘পেমেন্ট’ অপশন ব্যবহার করুন। কাউন্টার নম্বরে ‘0’ দিন)
অনলাইনে ভিসা, মাস্টারকার্ড ও আমেরিকান এক্সপ্রেস কার্ডের মাধ্যমে দান করতে এবং জাকাত ফান্ড সম্পর্কে আরও জানতে ভিজিট করুন www.thals.org/zakat-for-life-এ।