দারিদ্র্য ও নিরাপত্তাহীনতার ভয় থেকে বাল্যবিবাহ বেড়েছে

শাহ্‌নাজ হুদা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের অধ্যাপক। দেশের বিবাহ আইন নিয়ে করা তাঁর পিএইচডি থিসিসের একটি অংশ ছিল বাল্যবিবাহ। ২০১৭ সালে দেশে বাল্যবিবাহ নিরোধ আইন প্রণয়নের সময়ে বিষয়টি নিয়ে মাঠে কাজ করেছেন। করোনা মহামারির সময়ে বাল্যবিবাহের ঊর্ধ্বগতির সূত্র ধরে বিষয়টির নানা দিক নিয়ে তিনি প্রথম আলোর সঙ্গে কথা বলেছেন। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন প্রথম আলোর জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক নাজনীন আখতার

  • নারীর প্রতি সহিংসতা, যৌন হয়রানি বেড়ে যাওয়ায় বাল্যবিবাহ প্রতিরোধ বড় চ্যালেঞ্জের মধ্যে পড়েছে।

  • বাল্যবিবাহের সঙ্গে জনসংখ্যা বৃদ্ধি, নারীর প্রজনন স্বাস্থ্য, নবজাতক মৃত্যু, শিশু পুষ্টি, শিক্ষা, উন্নয়ন দুষ্টচক্রের মতো ঘুরতে থাকে।

  • ভোটের চিন্তা করে ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যানরা অনেক সময় বাল্যবিবাহের খবর জানলেও বাধা দেন না।

শাহ্‌নাজ হুদা

প্রশ্ন :

প্রথম আলো: একটি খবর দিয়ে শুরু করি। ৭ সেপ্টেম্বর প্রথম আলোতে একটি খবর বেরিয়েছিল যে সাতক্ষীরার একটি স্কুলে এ বছর ৫০টি বাল্যবিবাহ হয়েছে। এই খণ্ডচিত্র কি নারীর শিক্ষা–সমতা অর্জনের সামনে আরও বড় চ্যালেঞ্জের আভাস দিচ্ছে?

শাহ্‌নাজ হুদা: এ দেশে স্বাভাবিক সময়েই বাল্যবিবাহ বড় একটা চ্যালেঞ্জ। ১৯৯২ সালে যখন আমি গবেষণা শুরু করি, বাল্যবিবাহ নিয়ে তখন যে সামাজিক দৃষ্টিভঙ্গি ছিল, এখনো তা–ই আছে। এখন তো নারীর প্রতি সহিংসতা, যৌন হয়রানি বেড়ে যাওয়ায় বাল্যবিবাহের প্রতিরোধ আরও বড় চ্যালেঞ্জের মধ্যে পড়েছে। করোনাকাল সেই চ্যালেঞ্জকে আরও বাড়িয়ে দিয়েছে। সাতক্ষীরার স্কুলের ঘটনাটি প্রমাণ করে, বাল্যবিবাহের সমস্যাগুলোর কোনো সমাধানই করা হয়নি। তাই নিশ্চিত করেই বলা যায়, এই সময়ে বাল্যবিবাহের সংকটটি নারীর শিক্ষা ও সমতা অর্জনে সুস্পষ্ট কিছু চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দিয়েছে।

প্রশ্ন :

প্রথম আলো: কোভিডের শুরুতে কিছু বেসরকারি সংস্থা বাল্যবিবাহের ওপর জরিপ চালিয়েছিল। গত বছরের এপ্রিল থেকে অক্টোবরে মানুষের জন্য ফাউন্ডেশনের জরিপ বলছে, ২১টি জেলার ৮৪টি উপজেলায় ১৩ হাজার ৮৮৬টি বাল্যবিবাহ হয়েছে। অর্থাৎ মাসে গড়ে ১ হাজার ৯৮৩টি বাল্যবিবাহ হয়েছে। কোভিডে বাল্যবিবাহ বেড়ে যাওয়ার পেছনে কারণগুলো কী?

শাহ্‌নাজ হুদা: করোনাকালে দারিদ্র্য যেভাবে বেড়েছে, তাতে মেয়েটিকে বিয়ে দিয়ে পরিবারে একজন সদস্য কমিয়ে ফেলা মানে একজনের খরচ কমে যাওয়া। করোনাকালে পারিবারিক সহিংসতা বেড়েছে। মেয়ের ‘সম্ভ্রম’ চলে যায় কি না কিংবা মেয়ের কারণে পারিবারিক মর্যাদা ক্ষুণ্ন হয় কি না, যুক্ত হয়েছে সেই আশঙ্কা। মেয়ে ধর্ষণ–অপহরণের শিকার হতে পারে, না বুঝে প্রেমের সম্পর্কে জড়িয়ে যেতে পারে, বিচার না–ও পেতে পারেন—মা–বাবার মধ্যে এসব শঙ্কা কাজ করছে। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম বিস্তারের মধ্য দিয়ে যে পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছে, সেটা তাদের ভয় আরও বাড়িয়ে দিয়েছে। দারিদ্র্য ও নিরাপত্তাহীনতার ভয় থেকেই এ সময়ে বাল্যবিবাহ বেড়েছে। দেড় বছর ধরে স্কুল বন্ধ থাকাকে বাল্যবিবাহ বেড়ে যাওয়ার অন্যতম কারণ বলা হলেও তা নিয়ে আমি নিশ্চিত নই।

প্রশ্ন :

প্রথম আলো: নারীর শিক্ষা–সমতা অর্জনের পথে আর চ্যালেঞ্জগুলো কী?

শাহ্‌নাজ হুদা: বাল্যবিবাহ দেওয়ার প্রবণতা রয়েছে, এমন পরিবারগুলো মেয়েদের শিক্ষায় বিনিয়োগ করতে চায় না। মেয়েকে তারা ক্ষণস্থায়ী অতিথি মনে করে। সরকার উপবৃত্তির ব্যবস্থা রেখেছে বলে মেয়েরা পড়তে পারছে। একটা পর্যায়ে গিয়ে উপবৃত্তির চেয়ে যৌতুক প্রাধান্য পেতে থাকে। গ্রামে খুব শোনা যায় যে অল্প বয়সে বিয়ে দিলে যৌতুক লাগে না। বয়স বাড়লে যৌতুকের পরিমাণও বাড়তে থাকে। যদিও মেয়েরা শ্বশুরবাড়ি যাওয়ার পরেও যৌতুক চেয়ে নির্যাতন কিংবা বাবার বাড়ি ফেরত পাঠিয়ে দেওয়ার ঘটনার উদাহরণই বেশি। মেয়েদের যৌতুক দেওয়ার অজুহাতে সম্পত্তিতে সমান অধিকার প্রতিষ্ঠার ক্ষেত্রেও মেয়েরা ভাইদের বাধার মুখে পড়ে। নারীর বিভিন্ন অর্জনের পথে এসব বাধা একটির সঙ্গে আরেকটি শিকলের মতো জড়ানো। বাল্যবিবাহ থেকে শিক্ষা ও সমতা অর্জনের পথে যে প্রতিবন্ধকতার বীজ রোপিত হয়, নারীর পুরো জীবনে সেটি মানবাধিকার প্রতিষ্ঠায় বড় বাধা হয়ে থাকে।

প্রশ্ন :

প্রথম আলো: জাতীয় সংসদের মহিলা ও শিশুবিষয়ক মন্ত্রণালয়–সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটি মন্ত্রণালয়ের কাছে তথ্য চাইলে তারা জানায়, গত বছরের মার্চ থেকে জুন মাস পর্যন্ত ৬৪ জেলায় চার মাসে ২৩১টি বাল্যবিবাহ হয়েছে। সরকারি–বেসরকারি তথ্যে এত ফারাক কেন?

শাহ্‌নাজ হুদা: বাল্যবিবাহের ক্ষেত্রে সরকার যে প্রক্রিয়ায় তথ্য সংগ্রহ করে, তাতে সঠিক তথ্য আসে কি না, তা নিয়ে যথেষ্ট সংশয় আছে। প্রাথমিকভাবে বাল্যবিবাহের প্রথম খবরটি থাকবে ইউনিয়ন পরিষদে। সেখান থেকে সঠিক তথ্য আসে না। ইউনিয়ন পর্যায়ে সরকারঘোষিত বাল্যবিবাহ প্রতিরোধ কমিটির প্রধান দায়িত্ব ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যানের ওপর। তাঁরা নানা কাজে ব্যস্ত থাকেন। তাঁদের দায়িত্ব অনেক, লোকবল কম। ভোটের চিন্তা করে চেয়ারম্যানরা অনেক সময় বাল্যবিবাহের খবর জানলেও বাধা দেন না। ইউনিয়ন পরিষদে বাল্যবিবাহ প্রতিরোধে কোনো বাজেট বরাদ্দ নেই, যেটা উপজেলা ও জেলা বাল্যবিবাহ প্রতিরোধ কমিটির আছে। এসব প্রতিকূলতায় বাল্যবিবাহের সঠিক চিত্র উঠে আসে না।

প্রশ্ন :

প্রথম আলো: বাংলাদেশ জনমিতি ও স্বাস্থ্য জরিপ (বিডিএইচএস) ২০১৭–১৮ অনুসারে, ২০ থেকে ২৪ বছর বয়সী নারী গ্রুপের মধ্যে ১৮ বছরের আগে বিয়ে হয় প্রায় ৫৯ শতাংশ মেয়ের। আর ১৫ থেকে ১৯ বছর বয়সের মধ্যে গর্ভধারণ করে ২৮ শতাংশ মেয়ে। তাহলে কি বাল্যবিবাহের সঙ্গে জনসংখ্যা বৃদ্ধি, নারীর প্রজননস্বাস্থ্য, মাতৃমৃত্যু, নবজাতকের মৃত্যু, নারীর শিক্ষা, উন্নয়ন, সামাজিক সক্ষমতা একটি দুষ্ট চক্রে পাক খাচ্ছে?

শাহ্‌নাজ হুদা: বাল্যবিবাহের সঙ্গে এগুলো সত্যিই দুষ্ট চক্রের মতো ঘুরতে থাকে। অল্প বয়সে বিয়ে হলে মা হওয়ার ক্ষেত্রে মেয়েটির নিজস্ব মতামত নেওয়ার অধিকার থাকে না। বিয়ের পরপরই সন্তান হয়ে যায়। দুই সন্তানের মাঝখানে প্রয়োজনীয় বিরতি থাকে না। একাধিক সন্তান ধারণের জন্য মেয়েটি বেশি সময় পায়। অনেক পরিবারে ছেলে না হওয়া পর্যন্ত সন্তান নেওয়া চলতে থাকে। ফলে মেয়েটির বেশি সন্তানের মা হওয়ার ঝুঁকি বাড়ে। এতে জনসংখ্যা যেমন বাড়ে, মায়ের প্রজননস্বাস্থ্যও ঝুঁকিতে পড়ে। শিশুমৃত্যু ও অপুষ্ট শিশুর ঝুঁকি তৈরি হয়। বাল্যবিবাহের কারণে পড়াশোনায় ইতি টানতে হয় বলে মেয়েটির শিক্ষায় এগোয় না, সামাজিক সক্ষমতাও বাড়ে না।

প্রশ্ন :

প্রথম আলো: বাল্যবিবাহ নিরোধ আইন, ২০১৭–তে জাতীয় থেকে ইউনিয়ন পর্যায়ে পর্যন্ত বিশিষ্ট ব্যক্তিদের নিয়ে বাল্যবিবাহ প্রতিরোধ কমিটি গঠনের নির্দেশনা রয়েছে। সাতক্ষীরার আলীপুর ইউনিয়ন বাল্যবিবাহ প্রতিরোধ কমিটির সঙ্গে যোগাযোগ করলে জানা যায়, তারা বিষয়টি জানে না। জেলা শিক্ষা কর্মকর্তা এবং সাতক্ষীরা সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাও এক স্কুলে ৫০ বাল্যবিবাহের ঘটনায় প্রথমে বিস্মিত হন, পরে ঘটনার সত্যতা জানতে পারেন। এমন দুর্বলতা ও গাফিলতি থেকে যাচ্ছে কেন?

শাহ্‌নাজ হুদা: বাল্যবিবাহ নিরোধ আইন অনুযায়ী, বাল্যবিবাহ শাস্তিযোগ্য অপরাধ। বাল্যবিবাহের কুফল এবং আইন ও এর শাস্তি সম্পর্কে মানুষের মধ্যে সচেতনতা বাড়াতে স্থানীয় প্রশাসনকে উদ্যোগী হতে হবে। ইউনিয়ন, জেলা ও উপজেলা পর্যায়ে দায়িত্বপ্রাপ্ত ব্যক্তিরা একাধিক কাজে যুক্ত। ফলে বাল্যবিবাহ প্রতিরোধের বিষয়টিকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে আলাদা পর্যবেক্ষণে রাখার জন্য যে জনবল ও সক্ষমতা দরকার, তা নেই।

প্রশ্ন :

প্রথম আলো: ‘অনেক অল্প বয়সী মেয়ে বাড়ি থেকে পালিয়ে গিয়ে বিয়ে করার কারণে বাল্যবিবাহ বেড়েছে,’ মহিলা ও শিশুবিষয়ক মন্ত্রণালয়–সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটি তাদের বৈঠকে এমন একটি ধারণা দিয়ে এর কারণ খুঁজে বের করতে জরিপের সুপারিশ করেছিল। ২৫ আগস্ট এ খবর প্রকাশের আগে মানুষের জন্য ফাউন্ডেশনের ২০১৪ সালের এক জরিপে বলা হয়েছিল, বাল্যবিবাহের মধ্যে মাত্র ৬ শতাংশ নিজের পছন্দে বা পালিয়ে বিয়ে। নীতিনির্ধারকদের মধ্যে এমন পূর্বধারণা থাকলে বাল্যবিবাহের বিরুদ্ধে আমাদের লড়াই কি আদৌ সফল হবে?

শাহ্‌নাজ হুদা: বাল্যবিবাহ বেড়ে যাওয়ার পেছনে এমন ঘটনার প্রভাব যথেষ্ট তথ্যপ্রমাণের ভিত্তিতে বলতে হবে। মেয়ে পালিয়ে বিয়ে করুক বা মা–বাবা বিয়ে দিক—সবই তো বাল্যবিবাহ। উত্তর একই—বাল্যবিবাহের কারণ নির্মূল হচ্ছে না। সরকারের উচিত বাল্যবিবাহের ওপর জরিপ চালিয়ে সঠিক তথ্যের ভিত্তিতে পরিকল্পনা সাজানো। নইলে সাফল্য আসবে না। আইন অনুসারে বাল্যবিবাহ হলে যিনি বিয়ে পড়াবেন এবং যে বাবা–মা বিয়ে দেবেন, তাঁদের শাস্তির আওতায় আনার বিধান আছে। আর ছেলে–মেয়ে অপ্রাপ্তবয়স্ক হলে তাদেরও শিশু উন্নয়ন কেন্দ্রে রাখার বিধান আছে। এসবের যথাযথ প্রয়োগ করা হোক।

প্রশ্ন :

প্রথম আলো: বাল্যবিবাহ নিরোধ আইনের বিশেষ বিধান অনুসারে, কোনো বিশেষ প্রেক্ষাপটে অপ্রাপ্তবয়স্কের সর্বোত্তম স্বার্থে আদালতের নির্দেশে এবং মা–বাবা কিংবা অভিভাবকের সম্মতিতে বিধি অনুসরণ করলে সেই বিয়ে বাল্যবিবাহের অপরাধ বলে গণ্য হবে না। এমন বিধান কি আইন অপব্যবহারের সুযোগ করে দেয় না?

শাহ্‌নাজ হুদা: বিশেষ বিধান সম্পর্কে মানুষকে স্পষ্ট ধারণা দেওয়া যায়নি। এ বিধান অনুসারে, আদালতের সম্মতি নিয়ে আসতে পারলে তবেই ১৮ বছরের কম বয়সী মেয়েকে বিয়ে দেওয়া যাবে। অথচ ভুলভাবে বার্তা ছড়িয়েছে যে কম বয়সেও বিয়ে দেওয়া যাবে। এমন বিয়ের সম্মতি চাইলে আদালত যাচাই কমিটিতে তথ্য যাচাইয়ের জন্য পাঠাবেন। কমিটির প্রধান হবেন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা। এ ছাড়া বাল্যবিবাহ নিরোধ বিধিমালা, ২০১৮ অনুসারে, ১৮ বছরের কম বয়সী মেয়ের ক্ষেত্রে ধর্ষণ, অপহরণ, জোরপূর্বক বিয়ে বা শারীরিক সম্পর্কের ঘটনা ঘটলে ধর্ষক বা অপহরণকারীর সঙ্গে বিয়েও দেওয়া যাবে না। এসব বার্তা মানুষের কাছে কতখানি পৌঁছাচ্ছে, তা নিয়ে সন্দেহ আছে। আদালতে গিয়ে আবেদন করা হচ্ছে কি না, তা যাচাই কমিটিকে সংগ্রহ করতে হবে। তাহলে অপব্যবহারের চিত্রটি পাওয়া যাবে। মামলা–জটের মধ্যে এজাতীয় আবেদন নিয়ে আদালতে যাওয়ার ঝক্কি অভিভাবকেরা নিতে চান কি না, তাতেও সন্দেহ আছে। এর চেয়ে গোপনে বিয়ে দেওয়াটাকে তাঁরা সহজ মনে করেন।

প্রশ্ন :

প্রথম আলো: ২০১৮ সালে ঘোষিত সরকারের জাতীয় কর্মপরিকল্পনায় ১৫ বছরের কম বয়সী মেয়েদের বাল্যবিবাহ বন্ধ করা, ২০২১ সালে ১৮ বছর বয়সী মেয়েদের ক্ষেত্রে বাল্যবিবাহের হার এক–তৃতীয়াংশ কমানো এবং ২০৪১ সালের মধ্যে বাল্যবিবাহ পুরোপুরি নির্মূল করার লক্ষ্য রয়েছে। এ লক্ষ্য পূরণ কতটা সম্ভব বলে মনে করছেন?

শাহ্‌নাজ হুদা: বর্তমান পরিস্থিতিতে লক্ষ্য পূরণ সম্ভব হবে না। মেয়ের ‘সতীত্ব’ আর পরিবারের ‘ইজ্জত’ রক্ষার উৎকণ্ঠাকে চিহ্নিত করে সহিংসতার ভয় থেকে সরিয়ে মানুষকে আস্থার জায়গায় আনতে হবে। এটা নিশ্চিত না করে বাল্যবিবাহ না দিতে মা–বাবাকে জোর করে বেশি দিন ঠেকিয়ে রাখা যাবে না। শুধু টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা পূরণের লক্ষ্য নিয়ে মা–বাবার ওপর সিদ্ধান্ত চাপিয়ে দেওয়া যাবে না। আন্তর্জাতিক অঙ্গনে নারীর প্রতি সহিংসতা কমিয়ে আনার যে অঙ্গীকার, সেটাও বাস্তবায়ন করতে হবে।

প্রশ্ন :

প্রথম আলো: এখন আমাদের নতুন লক্ষ্য কী হওয়া উচিত? আর সে লক্ষ্য পূরণে কী কী পদক্ষেপ নেওয়া দরকার?

শাহ্‌নাজ হুদা: একটি সামাজিক পরিবর্তন আনতে হবে। পিতৃতান্ত্রিক সমাজব্যবস্থার পুরোনো দৃষ্টিভঙ্গি এখনো রয়ে গেছে। অনেক নারীও বের হতে পারেনি। বিভিন্ন উন্নয়ন কর্মকাণ্ডে নারীর অংশগ্রহণ বাড়ছে বলে আত্মতৃপ্তির সুযোগ নেই। সামাজিক সুরক্ষাবেষ্টনী বাড়াতে হবে। কঠোর আইন প্রয়োগ করে যৌন হয়রানি বন্ধ করতে হবে। অপরাধের ঘটনায় বিচার পাওয়ার আস্থা তৈরি করতে হবে, প্রক্রিয়াও সহজ করতে হবে। বাল্যবিবাহ প্রতিরোধে করোনার মতো দুর্যোগকে বিবেচনায় রেখে কর্মপরিকল্পনা নিতে হবে। সবচেয়ে বড় কথা, মেয়েদের স্বাবলম্বী করে তোলার জন্য সামাজিক সচেতনতা বাড়াতে হবে।

প্রশ্ন :

প্রথম আলো: আপনাকে ধন্যবাদ।

শাহ্‌নাজ হুদা: আপনাকেও ধন্যবাদ।