দা-বঁটির দোকানে ভিড়
চট্টগ্রামে নগরের কোতোয়ালি থানার জেলরোড এলাকার দা-বঁটির দোকান। গত সোমবার বেলা সোয়া একটায় সেখানে দেখা মিলল বেসরকারি ব্যাংকের কর্মকর্তা আনিসুর রহমানের সঙ্গে। দুপুরের খাবারের বিরতির ফাঁকে কিনতে এসেছেন দা-বঁটি।
আনিসুর রহমান প্রথম আলোকে বলেন, ‘কোরবানির পশুর চামড়া ছাড়ানো আর মাংস কাটার জন্য নতুন দা আর চাকু কিনতে এসেছি। এ ছাড়া পুরোনো বঁটিগুলোও শাণ দিয়ে নেব।’
আনিসুর রহমানের মতো লোকজন এখন ভিড় জমাচ্ছেন দা-বঁটির দোকানে। নগরের জেলরোড, ফিরিঙ্গিবাজার, কাট্টলী, রেয়াজুদ্দিন বাজার, বহদ্দারহাট, চকবাজার, বিবিরহাট, আতুরার ডিপোসহ বিভিন্ন এলাকার দোকানগুলোতে এখন ক্রেতাদের ভিড়। এসব দোকানে পশুর চামড়া ছাড়ানোর ছুরি থেকে শুরু করে হাড় কাটার ধামা পর্যন্ত বিক্রি হয়।
সোমবার নগরের জেলরোড, ফিরিঙ্গিবাজার ও আতুরার ডিপো গিয়ে দেখা যায়, কামারশালার চেয়ে দা-বঁটির দোকানের সংখ্যা অনেক বেশি।
ফিরিঙ্গিবাজারে দা-বঁটি তৈরির কাজ করেন উত্তম কুমার দাশ। পবিত্র ঈদুল আজহার আগের কয়েক দিন তাঁর দম ফেলার ফুরসত থাকে না। এ সময় স্ত্রী নেলী রানী দাশ ছাড়াও স্কুলপড়ুয়া দুই ছেলে তাঁকে কাজে সহায়তা করে।
উত্তম কুমার দাশ জানান, সারা বছরের ব্যবসার অর্ধেকটাই হয় এই মৌসুমে। প্রতিদিন গড়ে তিন হাজার টাকা করে লাভ হয় তাঁর। ঈদের আগে ১০ দিনের মতো ব্যবসা জমজমাট থাকে।
ক্রেতা-বিক্রেতার সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, পশুর চামড়া ছাড়ানোর ছুরি বিক্রি হচ্ছে ৫০ থেকে ১৫০ টাকায়। মাংস কাটার ছুরির দাম ২৫০ টাকা। দা পাওয়া যাচ্ছে ২০০ থেকে ৫০০ টাকায়। বঁটির দাম মানভেদে ১৫০ থেকে ৫৫০ টাকা। চাপাতির বিক্রি হচ্ছে ৫০০ থেকে ৮০০ টাকায়। ধামা বিকাচ্ছে ৬০০ থেকে ১ হাজার টাকায়। আর পশু জবাইয়ের ছুরির দাম ৩০০ থেকে ১ হাজার ২০০ টাকা পর্যন্ত।
অনেকে পুরোনো দা-ছুরি শাণ দিয়ে নিচ্ছেন। জেল রোডে শাণ দেওয়ার দোকানে দেখা গেল দারুণ ব্যস্ততা। মো. ইলিয়াস নামের এক দোকানি জানান, গত কয়েক দিন ধরে সকাল ৮টা থেকে রাত ১২টা পর্যন্ত শাণ দেওয়ার মেশিন চালিয়ে যাচ্ছেন তিনি। ঈদের আগের রাত পর্যন্ত তাঁর এই ব্যস্ততা থাকবে।
পশু জবাইয়ের পর চাকু-বঁটির পাশাপাশি প্রয়োজন হয় গাছের গুঁড়ি, চাটাই আর মাংস রাখার টুকরির। পশুর হাটগুলোর আশপাশে এসব জিনিস বিক্রি হয়।
এ ছাড়া বিভিন্ন এলাকায়ও বসেছে কিছু মৌসুমি দোকান। বিবিরহাটের পশুর বাজারের পাশেই গাছের গুঁড়ি আর চাটাই বিক্রির অস্থায়ী দোকান বসিয়েছেন মো. আনোয়ার ও তাঁর তিন বন্ধু।
নির্মাণশ্রমিক আনোয়ার জানান, পবিত্র ঈদুল আজহার আগে পাঁচ-ছয় দিন তিনি এই ব্যবসা করেন। মূলত নোয়াখালী থেকে তেঁতুলগাছের গুঁড়ি ও চাটাই আনা হয়। আকারভেদে ১৮০ থেকে ২৫০ টাকায় গাছের গুঁড়ি, ১০০ থেকে ২০০ টাকায় চাটাই আর ৫০ থেকে ১০০ টাকায় টুকরি বিক্রি করেন তাঁরা।