দিস ইলেকশন ইজ ভেরি ইমপরট্যান্ট, বি কেয়ারফুল!

‘দিস ইলেকশন ইজ ভেরি ইমপরট্যান্ট ইলেকশন, সো গাইস, বি কেয়ারফুল’—এটি একটি গানের চরণ। এরপরের কথাগুলো অবশ্য বাংলা—‘টাকাপয়সা এক দিন আর ভালোবাসা চিরদিন/ তাই মানিক ভাইয়ের সালাম নিন/ হাতে লাগালে কালি আর চোখে লাগালে কাজল/ আমি মানিক ভাইয়ের পাগল।’ একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের চূড়ান্ত প্রার্থী মনোনয়নের আগে ঢাকা-৭ আসনের মনোনয়নপ্রত্যাশী হাসিবুর রহমান মানিককে নিয়ে বাঁধা হয়েছিল গানটি।

মনোনয়নপত্র জমা দেওয়ার শোভাযাত্রায় প্রথমবার বাজানো হয়েছিল এই গান। হাসিবুরের কপাল খোলেনি, কিন্তু গানটি হিট। অল্প সময়ের মধ্যেই সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে এটি। ব্যঙ্গ করে অনেকের মুখে মুখেও ছিল গানের কথা। এবার ঢাকার নির্বাচনী হাওয়ায় এই গানই প্রথম আলোচিত হয়। ঢাকা–৭ আসনে হাসিবুরের নয়, ভাগ্যের শিকা ছিঁড়েছে হাজি মো. সেলিমের। তিনি পেয়েছেন দলীয় মনোনয়ন। ফলে গানটিতে একটু সংশোধনী এনে ‘মানিক ভাই’–এর জায়গায় ‘সেলিম ভাই’ বসিয়ে বাজানো হচ্ছে। তবে হাজির নামে নিজস্ব গানও ভোটের মাঠে ছাড়া হয়েছে। ‘আউট অব দ্য বক্স ফিল্মস’ নামের প্রযোজনা প্রতিষ্ঠান তৈরি করেছে ‘আমার নেতা হাজি’ শিরোনামের গান। গানের বাণী—‘জয় বাংলা স্লোগান দিয়ে জীবন দিতে রাজি, আমার নেতা হাজি/ পুরান ঢাকা জিতবে এবার, রাখব জীবন বাজি/ আমার নেতা হাজি’। গানে সুরে সুরে ভোট চাওয়া হয়েছে নৌকার পক্ষে। গানটির ভিডিওতে তুলে ধরা হয়েছে উন্নয়নকাজ, পুরান ঢাকার ঐতিহ্যবাহী স্থাপনা ও সংস্কৃতিকে।

নির্বাচনের মাঠ প্রার্থীদের প্রচারে সরগরম। মিছিল, সভা–সমাবেশে স্লোগানের পাশাপাশি মাইকে বাজছে ভোটের গান। ঢাকার বিভিন্ন আসনে আনুষ্ঠানিক প্রচারণা শুরু হওয়ার পর সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমেও ছড়াতে থাকে নির্বাচন নিয়ে বেশ কিছু গান। আওয়ামী লীগ, বিএনপিসহ গান আছে শরিক দলগুলোর প্রার্থীদেরও। ধর্মভিত্তিক দলের প্রচারণায় বাজানো হচ্ছে গজল।

এলাকা ঘুরে গণসংযোগের পাশাপাশি ভোটারদের কাছে পৌঁছাতে অনেক প্রার্থী স্থানীয় ও পেশাদার শিল্পীদের দিয়ে তৈরি করিয়ে নিয়েছেন এসব গান। ভোটের গানের সুর নেওয়া হয়েছে বেশ কিছু জনপ্রিয় গান থেকে। এমন অনেক গান প্রকাশ করা হয়েছে প্রার্থীদের ফেসবুক পেজ ও ইউটিউব চ্যানেলে। খোঁজ নিয়ে জানা গেল, প্রতিটি গান তৈরির জন্য খরচ পড়ে ১৫ থেকে ২০ হাজার টাকা। ক্ষমতাসীন দলের প্রার্থীদের গানে তুলে ধরা হয়েছে উন্নয়ন আর বাকিদের গানে দেওয়া হয়েছে পরিবর্তনের বার্তা।

গত কয়েক দিন ঢাকার বেশ কয়েকটি নির্বাচনী আসন ঘুরে দেখা গেছে, পাড়া–মহল্লায় রিকশাভ্যানে মাইক বসিয়ে ঘুরে ঘুরে প্রার্থীর পক্ষে ভোট চাওয়ার পাশাপাশি এসব গান বাজানো হচ্ছে। কোনো কোনো এলাকায় প্রার্থীদের নির্বাচনী অফিসেও মাইকে গানগুলো বাজাতে শোনা গেছে।

নির্বাচনী গানের দিক দিয়ে এখন পর্যন্ত সবচেয়ে বেশি ছয়টি গানের ব্যবহার দেখা গেছে ঢাকা-১০ আসনের আওয়ামী লীগের প্রার্থী ফজলে নূর তাপসের প্রচারণায়। ইউটিউবে প্রকাশ করা ছয়টি গানের অধিকাংশ সুরই নেওয়া জনপ্রিয় পল্লিগীতি থেকে। ‘বাপুই চেংরারে’ গানের সুরে গাওয়া হয়েছে ‘শোনেন তাপস ভাই/ ঢাকা-১০ আসনে আমরা আপনাকে আবার চাই’, ‘কইলজার ভিতর গাঁথি রাইক্কুম তোঁয়ারে’ গানের সুর নিয়ে গাওয়া হয়েছে, ‘ঢাকা-১০–এর সবাইকে সালাম জানাই/ নৌকা মার্কায় ভোট চাই/ আমি আপনাদের তাপস ভাই’। আছে, ‘মেলায় যাইরে’ গানের সুরে গাওয়া গানও। তবে তাপসের জনসংযোগ সমন্বয়কারী তারেক শিকদার জানান, এই গানগুলো বিভিন্ন থানা ও ওয়ার্ডের নেতা-কর্মীদের গাওয়া। প্রচারণায়ও বেশ সাড়া ফেলেছে।

এ ছাড়া ঢাকা-১৩ আসনে সাদেক খানের ‘১৩ আসনের জনগণ মন খুলিয়া কন’, ঢাকা-৬–এ ববি হাজ্জাজের প্রচারণায় ‘হারিকেনে ভোট চাই’ শিরোনামের গানের ব্যবহার দেখা গেছে। ঢাকা–৮ আসনে জাতীয় পার্টির প্রার্থী ইউনুস আলী আকন্দর প্রচারে ব্যবহার হচ্ছে ‘আমার বন্ধু দয়াময়’ গানের সুরে বাজানো হচ্ছে ‘ইউনুস ভাই দয়াময়’। 

ধানের শীষের গান

ঢাকার বিভিন্ন আসনে ধানের শীষ প্রতীক নিয়ে নির্বাচন করা প্রার্থীরা প্রচারণায় গানের ব্যবহারে একটু পিছিয়ে। এর কারণ সম্পর্কে প্রার্থীরা বলছেন, গণসংযোগে বাধা ও নেতা-কর্মীদের গ্রেপ্তারের কারণে প্রচারণার পরিবেশ উৎসবমুখর হয়নি। ১০ ডিসেম্বর এক অনুষ্ঠানের মাধ্যমে ‘ধানের শীষ ডাক দিয়েছে’ শিরোনামে বিএনপির নির্বাচনী গানের অ্যালবাম প্রকাশ করা হয়। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে এই গানগুলো দিয়েই প্রচার চালাচ্ছেন প্রার্থী ও নেতা-কর্মীরা। জিয়া শিশু একাডেমির প্রযোজনায় প্রকাশিত অ্যালবামের গানগুলোর মধ্যে আছে ‘ধানের শীষ ডাক দিয়েছে আয়রে ছুটে আয়’, ‘দে দে সিল মেরে দে/ তোরা দেরি করিস না’, ‘গুণে-জ্ঞানে সারা দেশে যার সুনাম/ সে যে মোদের মির্জা ফখরুল ইসলাম’। এ ছাড়া আছে ‘দেখে–শুনে ভোট দিস, মার্কা মোদের ধানের শীষ’ শিরোনামের গান।

বিভিন্ন আসনের বেশ কয়েকজন ভোটার বলেছেন, প্রচারণায় গানের ব্যবহার ভোটের আমেজ নিয়ে আসে। তবে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বা হাসপাতালের সামনে উচ্চ শব্দের গান বিরক্তির সৃষ্টি করে।