দিয়াবাড়িতে কাশফুলের শুভ্র সমারোহ

দিয়াবাড়িতে এমন কাশবনের দেখা মিলবে। ছবি: মোছাব্বের হোসেন
দিয়াবাড়িতে এমন কাশবনের দেখা মিলবে। ছবি: মোছাব্বের হোসেন

চারদিকে শরতের শুভ্র কাশফুল, আর লেকের ধারে শরীর–মন জুড়িয়ে দেওয়া বাতাস। কেউ বসে গল্প করছেন। কেউবা ফুলের সঙ্গে ছবি তুলছেন। পরিবার-পরিজন নিয়ে অনেকেই আসছেন এই কাশবনে। দুপুরের খরতাপ খানিকটা ম্লান হয়ে আসে বেলা গড়ালে। তখন লোকসমাগমে জমজমাট হয়ে ওঠে উত্তরার দিয়াবাড়ি এলাকা।

রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের উত্তরা তৃতীয় পর্যায়ের সম্প্রসারিত প্রকল্পের অংশ এই দিয়াবাড়ি। উত্তরা ১৫ নম্বর সেক্টরে এই প্রকল্প এখন ফাঁকাই পড়ে আছে। বালুমাটি ফেলে সমতল করা এই বিশাল মাঠের মতো খোলা জায়গাটি ভরে গেছে শরতের শুভ্র কাশফুলে ফুলে। কাশবনের ভেতর দিয়ে পথ। নগরের যান্ত্রিক পরিবেশ থেকে একটু প্রকৃতির সান্নিধ্যে আসা নগরবাসী হাঁটতে থাকেন এই পথ ধরে। লোকসমাগমের কারণে বেশ কিছু হালকা খাবারের দোকানপাটও গড়ে উঠেছে এখানে।

কাশবনে ছবি তোলার সুযোগ হাতছাড়া করতে চান না​ কেউ! ছবি: মোছাব্বের হোসেন
কাশবনে ছবি তোলার সুযোগ হাতছাড়া করতে চান না​ কেউ! ছবি: মোছাব্বের হোসেন

গত শুক্রবার ছুটির দিনে দুপুর থেকেই শুরু হয়েছিল লোকের সমাগম। বিকেল নামতেই পুরো এলাকা যেন এক গ্রামীণ মেলা। এক দিকে ঘুরছে নাগরদোলা। রকমারি খাবারের পসরা। সারি সারি ফুচকা–চটপটির দোকান। ঘুরেফিরে লোকজন এসে ভিড় জমাচ্ছেন এসব দোকানে।

আজিমপুর থেকে রাইড শেয়ারিংয়ের গাড়িতে এসেছিলেন আবুল বরকত ও  স্ত্রী ফারজানা হক আর স্কুলপড়ুয়া দুই সন্তান। বরকত জানালেন, ছোটবেলায় তাঁর গ্রামের বাড়ি নাটোরে নদীর ধারে দেখেছে কাশফুলের শোভা। বললেন, ‘সন্তানদের নাটোরে নিয়ে যাওয়া কঠিন। তাই দিয়াবাড়িতে এসেছি কাশফুল দেখাতে। এত কাশফুল দেখে মনটা ভালো হয়ে গেছে। বেশ কিছু ছবি তুলেছি। সন্ধ্যা হলে চলে যাব।’

পথের দুই ধারে দেখা মিলবে মনভোলানো কাশফুলের। ছবি: মোছাব্বের হোসেন
পথের দুই ধারে দেখা মিলবে মনভোলানো কাশফুলের। ছবি: মোছাব্বের হোসেন

বনানী থেকে এসেছেন এআইইউবি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের একটি দল। তাঁদের একজন ইমন সাহা বললেন, ‘কয়েক দিন ধরে বন্ধু ও পরিচিতদের ফেসবুকে কাশফুলের ছবি দেখছি। সেখান থেকেই এই কাশবনে আসার ইচ্ছ ছিল। তাই বন্ধুরা মিলে এসেছি। অনেক ছবি তুলছি। বেশ ভালো লাগছে।’

দিয়াবাড়ির বটতলা থেকে কিছুটা সামনে ৩ নম্বর সেতু। সেতুর দুই পাশে লেকের পাড়ে গড়ে উঠেছে বোট হাউস। বাঁশ ও কাঠের কাঠামো দিয়ে বানানো হয়েছে বসার জায়গা। সারি দিয়ে বাঁধা প্যাডেল বোট (পায়ে চালিত নৌকা)। ঘণ্টা ভিত্তিতে ভাড়া করে ঘুরতে পারবেন। ছুটির দিনে অনেকেই এসব নৌকা ভাড়া করে ঘুরছিলেন। তাঁদের একজন মিরপুর ১ নম্বর এলাকার আমিন সরকার। তিনি বললেন, ‘কাশফুল দেখতে এসেছিলাম। এখানে এসে দেখি পায়ে চালিত নৌকাও আছে। তাই পরিবারের সবাই মিলে একটু নৌকায় ঘুরলাম। ফুরফুরে বাতাসে মনটাই ভালো হয়ে গেছে।’ তবে লেকের পানি যেন দূষিত না হয় সে জন্য কর্তৃপক্ষ আর বেড়াতে আসা লোকজন—সবাইকেই যত্নবান হওয়ার কথা বলেন তিনি।

পাশেই বিমানবন্দর। তাই বিমানের উঠানামাও চোখে পড়বে। ছবি: মোছাব্বের হোসেন
পাশেই বিমানবন্দর। তাই বিমানের উঠানামাও চোখে পড়বে। ছবি: মোছাব্বের হোসেন

দিয়াবাড়ির রাস্তার ভেতরের দিকটা বেশ সুনসান। একটু পরপর নীরবতা ভেঙে উড়ে যায় উড়োজাহাজ। বিমানবন্দর থেকে উড়ে আসা উড়োজাহাজগুলো খুব কাছ দিয়ে আকাশে উড়াল দেয়। আবার উড়োজাহাজ অবতরণ করার সময়ও খুব নিচু দিয়ে যায়। ঢাকায় কাছ থেকে উড়োজাহাজের ওড়াউড়ি দেখতে চাইলে এর চেয়ে ভালো জায়গা হয় না।

দিয়াবাড়িতে রাস্তার দুই পাশে যেমন কাশফুল আছে তেমনি ফাঁকা জায়গার ভেতরেও কাশফুল আছে। কিন্তু ফাঁকা জায়গার মাটি ওপর থেকে শক্ত দেখালেও সব জায়গায় একই রকম নয়। অনেক জায়গায় মাটি নরম। চোরাবালির মতো। পা আটকে যায়। এ জন্য একটু সাবধান থাকা ভালো। এই কাশফুল আর কত দিন থাকবে, জানতে চাইলে নিসর্গবিদ মোকারম হোসেন বললেন, ‘কাশফুল দেখার এটাই উপযুক্ত সময়। এখনই এই ফুলের সৌন্দর্য। তবে আর সর্বোচ্চ ১৫–২০ দিন এই ফুল থাকবে।’

কাশফুল দেখতে এসে ঘণ্টা ধরে ভাড়া করা নৌকায়  ঘুরতেও পারবেন এখানে। ছবি: মোছাব্বের হোসেন
কাশফুল দেখতে এসে ঘণ্টা ধরে ভাড়া করা নৌকায় ঘুরতেও পারবেন এখানে। ছবি: মোছাব্বের হোসেন

উত্তরা রুটের যেকোনো গাড়িতে উঠে হাউস বিল্ডিং নামতে হবে। এরপর ‘জনপথ’ ধরে মাসকট প্লাজার কিছুটা সামনে থেকে লেগুনা ছাড়ে। লেগুনা নামিয়ে দেবে একেবারে দিয়াবাড়ি বটতলায়। ভাড়া ২০-৩০ টাকা। লেগুনায় উঠতে না চাইলে নিতে পারেন রিকশা বা অটোরিকশা। অথবা মিরপুর বেড়িবাঁধ হয়ে আবদুল্লাহপুর রুটের গাড়িতে উঠে পঞ্চবটী নেমে চলে যেতে পারেন দিয়াবাড়ি। সেখান থেকে হেঁটে যেতে লাগবে ১৫-২০ মিনিট।

চোখ জুড়ানো কাশবন দেখে মন ভালো হয়ে যায়। ছবি: মোছাব্বের হোসেন
চোখ জুড়ানো কাশবন দেখে মন ভালো হয়ে যায়। ছবি: মোছাব্বের হোসেন