দুই চোখে স্পষ্ট দেখতে চান শাহাদত

চোখ, মুখসহ সারা শরীরে অসংখ্য মাংসপিণ্ড। এসব ভারী মাংসপিণ্ডের কারণে দুটি চোখই ঢেকে গেছে শাহাদতের। স্পষ্ট কিছুই দেখেন না। কেউ কথা বললে শব্দ শুনে কেবল সেদিকে ঘাড় ঘুরিয়ে তাকানোর চেষ্টা করেন তিনি। চিকিৎসকেরা জানিয়েছেন, রোগটির নাম ‘নিউরোফাব্রোমা’।

‘নিউরোফাব্রোমা’ রোগ নিয়ে সিরাজগঞ্জের শাহাদত বর্তমানে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের বার্ন ইউনিটে ভর্তি আছেন। আগামী শনিবার তাঁর অস্ত্রোপচার করার কথা রয়েছে।

আজ বৃহস্পতিবার সকালে বার্ন ইউনিটে গিয়ে কথা হয় শাহাদতের সঙ্গে। কেমন আছেন জানতে চাইলে এক গাল হেসে জবাব দেন, ভালো আছেন।

চিকিৎসকেরা কী বলেছেন জানতে চাইলে শাহাদত বলেন, ‘ডাক্তাররা খালি ইংরেজি কয়। আমি কি আর ইংরেজি বুঝি? কিছুই তো দিশা পাই না। তবে বলছে, আমি ভালো হব।’

সারা দেশের বার্ন ইউনিটের সমন্বয়কারী চিকিৎসক সামন্ত লাল সেন প্রথম আলোকে বলেন, নিউরোফাব্রোমা রোগটি বিরল নয়। শরীরের বিভিন্ন জায়গায় মাংসপিণ্ড দেখা দেয়। তবে শাহাদতের কোথায় চোখ, কোথায় মুখ কিছুই বোঝার উপায় নেই। এ রকম আর কখনো দেখা যায়নি। শনিবার তাঁর অস্ত্রোপচার হবে। সারা শরীরে অস্ত্রোপচার করা সম্ভব নয়। আপাতত তাঁর চোখ দুটি থেকে মাংসপিণ্ড দূর করার চেষ্টা করা হবে। মনে রাখতে হবে, অস্ত্রোপচারের পর আবার যে মাংসপিণ্ড হবে না, তা বলা যাবে না।

সুস্থ হওয়ার পর কী করবেন—জানতে চাইলে শাহাদত বলেন, তিনি চান তাঁর চোখ দুটো ভালো হোক। চোখ দুটি ভালো হলেই আবার কৃষিকাজ ও মাটি কাটার কাজ করতে পারবেন। আর কাজ করতে পারলেই তাঁর সংসারের অভাব দূর হবে। এই মুহূর্তে তাঁর কষ্ট, স্ত্রী ও ছেলেমেয়েদের কিছু দিতে পারছেন না।

হাসপাতালে শাহাদতের পাশে বসা তাঁর স্ত্রী মমতাজ বলেন, প্রায় এক যুগ ধরে শাহাদত মাংসপিণ্ডের যন্ত্রণায় ভুগছেন। এখন শরীরে বলতে গেলে কোনো জায়গা আর ফাঁকা নেই। মুখ, হাত ও পায়ের বেশ কয়েকটি মাংসপিণ্ড আকারে অনেক বড় হয়ে গেছে। ভয়াবহ পরিস্থিতির শুরু হয় গত চার থেকে পাঁচ বছর আগে। তখন থেকেই শাহাদতের কাজ বন্ধ হয়ে যায়। তবে এ পর্যন্ত হোমিওপ্যাথি ছাড়া অন্য কোনো চিকিৎসা করাননি। এলাকার লোকজনের নানা সহযোগিতা এবং নিজে মানুষের বাড়িতে কাজ করে যা পান, তাই দিয়ে চলছে সংসার। দুই মেয়ে এক ছেলের মধ্যে দুই মেয়েরই বিয়ে দিয়েছেন। অপরিচিত বা আশপাশের মানুষ তাঁকে দেখে ভয় পায়।

মমতাজ বলেন, ‘হাসপাতালে অনেক মানুষ বলছে, তাঁরে যাতে বাইরে না বাইর করি। ঘরের মধ্যেই রাখতে কয়।’

গত ১৯ দিন থেকে শাহাদত বার্ন ইউনিটে চিকিৎসাধীন রয়েছেন। তাঁকে হাসপাতালে ভর্তি ও সার্বিক সহায়তা দিতে এগিয়ে এসেছেন সিরাজগঞ্জের যুবক মামুন বিশ্বাস (২৯)। তিনি সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যম ফেসবুকের মাধ্যমে অসহায় মানুষের পাশে দাঁড়ান। মানুষের কাছ থেকে পাওয়া আর্থিক সহায়তা প্রশাসনের মাধ্যমে তুলে দেন ভুক্তভোগী পরিবারের হাতে।

এ ব্যাপারে শাহাদতের স্ত্রী বলেন, চিকিৎসার জন্য মামুন বিশ্বাস এক লাখের বেশি টাকা তুলে দিয়েছেন তাঁদের হাতে। এর বাইরে হাসপাতালে ভর্তিসহ অন্যান্য কাজেও তিনি সহযোগিতা করছেন।