দুই সহোদরের চোখে বাঁচার আকুতি

পেট ফুলেফেঁপে অস্বাভাবিক হয়ে গেছে। চিকন হয়ে যাচ্ছে হাত-পা। ফ্যালফ্যাল করে তাকিয়ে থাকে আর শরীরের যন্ত্রণায় প্রায়ই চিৎকার করে কেঁদে ওঠে তারা।
এই অবস্থা বরগুনার আমতলী উপজেলার গুলিশাখালী গ্রামের দিনমজুর দুলাল ব্যাপারী ও মোমেনা দম্পতির চার বছর বযসী যমজ দুই সন্তান মোহন ও মহিনের। তারা থ্যালাসেমিয়ায় আক্রান্ত। দুলাল ব্যাপারীকে যেখানে দুমুঠো ভাত জোগাড় করতে দিন-রাত কঠোর পরিশ্রম করতে হয়, সেখানে দুই শিশুকে প্রতি মাসে রক্ত দেওয়া, ওষুধপত্র কেনার পেছনে ১০-১১ হাজার টাকা ব্যয় করা দুঃসাধ্য।
দুলাল ব্যাপারী ও মোমেনার বিয়ে হয় ২০০৫ সালে। ২০১৩ সালের ৫ এপ্রিলে জন্ম নেয় যমজ দুই ছেলে মোহন ও মহিন। জন্মের ১৫ দিন যেতে না যেতেই অসুস্থতা দেখা দেয়। গ্রাম্য চিকিৎসক, ওঝা থেকে শুরু করে অনেক চিকিৎসক দেখিয়েছেন। কিন্তু দুই শিশুর রোগনির্ণয় সম্ভব হয়নি। অবশেষে বরিশালের এক শিশুবিশেষজ্ঞ পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে নির্ণয় করেন মোহন-মহিন থ্যালাসেমিয়ায় আক্রান্ত। প্রতিকার হিসেবে ওষুধ ও প্রতি মাসে রক্ত দেওয়া ও উন্নত চিকিৎসার পরামর্শ দেন চিকিৎসক।
গত রোববার দুপুরে কথা হয় দুলাল-মোমেনা দম্পতির সঙ্গে। দুলাল জানান, টাকার অভাবে ঠিকমতো রক্ত দেওয়া সম্ভব হয়নি। বর্তমানে শিশু দুটির শরীর শুকিয়ে হাড্ডিসার হয়ে গেছে। হাত ও পা চিকন হয়ে পেট বড় হয়ে যাচ্ছে।
মোমেনা বেগমের বুকটা দিন-রাত ধড়ফড় করে। ছেলেদের কান্না দেখে তিনিও ডুকরে কাঁদেন। অসহায় মোমেনা চোখ মুছতে মুছতে বলেন, ‘আল্লায় দুইডা পোলা দেওনে খুব খুশি অইছিলাম। এহন অগো অবস্থায় দেইখ্যা সবকিছু তছনছ অইয়্যা গ্যাছে। এই অবস্থা দ্যাহনের আগে আল্লায় যে ক্যান মোরে লইয়্যা গ্যালো না।’ এ কথা বলেই কেঁদে ওঠেন মোমেনা।
দুলাল ব্যাপারী জানান, সহায়-সম্বল বলতে তাঁর যা কিছু ছিল, সব বিক্রি করে দুই সন্তানের চিকিৎসা করিয়েছেন। এখন বাড়ির জমিটুকু ছাড়া আর কিছুই অবশিষ্ট নেই। এরপর ধারদেনা করে তিন বছর চিকিৎসা চালিয়ে অনেক ঋণী হয়ে গেছেন।
আমতলী উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা আবদুল মতিন বলেন, এই দুই শিশুকে বাঁচাতে হলে জরুরি ভিত্তিতে উন্নত চিকিৎসা প্রয়োজন।