দুধের শিশুর সঙ্গে এবার ঈদ করা হবে না সেই মায়ের
দুধের শিশুকে বাসায় রেখে মা রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের আইসিইউতে করোনা রোগীর সেবা করেন। এবার সেই মায়েরও করোনা শনাক্ত হয়েছে। আজ বৃহস্পতিবার সকালে তাঁকে হাসপাতালের করোনা ওয়ার্ডে ভর্তি করা হয়েছে। এতে ২০ মাস বয়সের মেয়ের সঙ্গে ঈদও করতে পারবেন না মা। ওই মায়ের নাম আসমাউল হুসনা (২৯)। তিনি দৈনিক মজুরির ভিত্তিতে মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রে (আইসিইউ) আয়ার কাজ করেন। তাঁর স্বামী একজন রিকশাচালক। তাঁরা নগরের হেতেমখাঁ কারিগরপাড়া এলাকায় একটি ভাড়া বাসায় থাকেন।
গত ১ মে প্রথম আলোয় ‘দুধের শিশু বাসায় রেখে হাসপাতালে কাজ করছেন মা’ শিরোনামে একটি প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়। তাঁর মেয়ের নাম জান্নাতুল মাওয়া। সে এখনো মায়ের বুকের দুধ খায়। করোনার সংক্রমণ শুরু হওয়ার পর হাসপাতালে দায়িত্ব পালন করেন বলে আসমাউলের পরিবারকে এর আগে বাসার মালিক বের করে দিতে চেয়েছিলেন। গত ১৯ এপ্রিল রাতে হাসপাতালের দায়িত্ব পালন শেষে বাসায় ঢুকতে গেলে বাসার মালিক তাঁদের সঙ্গে দুর্ব্যবহার করেন। খবর পেয়ে রাজশাহী নগরের বোয়ালিয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) নিবারণ চন্দ্র বর্মণ ঘটনাস্থলে যান। তিনি বাড়ির মালিককে বোঝান। শেষ পর্যন্ত কথা হয়, করোনাভাইরাসে আক্রান্ত কোনো রোগীর সেবা করলে আসমাউল হুসনা পরবর্তী ২১ দিন বাসায় আসতে পারবেন না। অবশেষে এই শর্তে তিনি রাজি হয়ে যান। এভাবেই তিনি হাসপাতালের আইসিইউতে করোনা রোগীদের সেবা করছেন।
১ মে আসমাউল হুসনাকে নিয়ে প্রথম আলোতে প্রতিবেদন প্রকাশের দিন বিকেলে তাঁর বাচ্চাকে দেখতে নগরের হেতেমখাঁ কারিগরপাড়ার বাসায় যান রাজশাহীর তৎকালীন জেলা প্রশাসক মো. হামিদুল হক। তিনি বাসার মালিক এবং মহল্লাবাসীকে এই শিশুর মায়ের ব্যাপারে সহানুভূতিশীল হওয়ার আহ্বান জানান।
হাসপাতালের আইসিইউ ইনচার্জ আবু হেনা মোস্তফা কামাল প্রথম আলোকে জানান, আসমাউল হুসনা খুবই দায়িত্বশীল একজন আয়া। তিনি দুধের বাচ্চাকে রেখে যেভাবে দায়িত্ব পালন করছেন, তা প্রশংসনীয়। এরই মধ্যে গত বুধবার রাতে তাঁরা জানতে পারেন যে আসমাউল হুসনা করোনা পজিটিভ হয়েছেন। বৃহস্পতিবার সকালেই তাঁকে করোনা ওয়ার্ডে ভর্তি করে দেওয়া হয়েছে। তিনি বলেন, এমনিতেই সাত দিন দায়িত্ব পালন করলে স্বাস্থ্যবিধি অনুযায়ী তাঁকে পরবর্তী ১৪ দিন কোয়ারেন্টিনে থাকতে হয়। বাসায় আলাদাভাবে তাঁর কোয়ারেন্টিনে থাকার ব্যবস্থা নেই। এ জন্য আসমাউলকে হাসপাতালের কোয়ার্টারে থাকতে হয় বলে তিনি দুধের বাচ্চাটিকে ঠিকমতো দেখতে পান না।
হাসপাতালে চিকিৎসাধীন আসমাউল হুসনা প্রথম আলোকে বলেন, এমনিতেই বাচ্চাটা খুব কান্নাকাটি করে। তার মা মুঞ্জু আরা বেগম সারা দিন তাকে সামলান। রাতে কিছুতেই তাঁর মেয়ে তাঁকে ছাড়া থাকতে চায় না। কান্নাকাটি করে। তিনি বলেন, তাঁরা গরিব মানুষ। অনেক কষ্ট করে হাসপাতালে দায়িত্ব পালন করছেন। তিনি দৈনিক মজুরির ভিত্তিতে কাজ করেন। কাজ করলে পয়সা পান, না করলে পান না। যাঁদের চাকরি স্থায়ী, এই পরিস্থিতিতে তাঁরা প্রণোদনা পাবেন। কিন্তু তাঁদের মতো যাঁরা দৈনিক মজুরির ভিত্তিতে কাজ করছেন, তাঁদের জন্য কি সরকার ভাববে না?