দুর্ঘটনার দায় বাসচালকের, অবহেলা ছিল গেটম্যানের

সংঘর্ষে দুমড়েমুচড়ে গেছে অটোরিকশা
ফাইল ছবি

চট্টগ্রাম নগরের ঝাউতলা রেলক্রসিং ডেমু ট্রেনের সঙ্গে তিন গাড়ির সংঘর্ষের জন্য বাসচালক শহিদুল আলমকে দায়ী করেছে রেলওয়ের তদন্ত কমিটি। আর এই ঘটনায় গেটম্যান আশরাফুল আলমগীর ভূঁইয়ার দায়িত্ব পালনে অবহেলা ছিল।

রেলওয়ের তদন্ত কমিটির পাঁচ পৃষ্ঠার তদন্ত প্রতিবেদনে এসব তথ্য উল্লেখ করা হয়েছে। কমিটি সম্প্রতি এই প্রতিবেদন জমা দিয়েছে। সংঘর্ষের ঘটনায় বাসচালক ও গেটম্যান গ্রেপ্তার হয়ে বর্তমানে কারাগারে আছেন। দুর্ঘটনার পর থেকে তাঁরা পলাতক ছিলেন। পরে পুলিশ অভিযান চালিয়ে তাঁদের গ্রেপ্তার করে।

তদন্ত প্রতিবেদন পাওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন রেলওয়ের পূর্বাঞ্চলের বিভাগীয় রেলওয়ে ব্যবস্থাপক তারেক মোহাম্মদ শামস তুষার।

গত শনিবার সকালে চট্টগ্রাম নগরের ব্যস্ততম জাকির হোসেন সড়কের ঝাউতলা রেলগেটে ডেমু ট্রেনের সঙ্গে বাস, সিএনজিচালিত অটোরিকশা ও টেম্পোর সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। এতে ঘটনাস্থলে দায়িত্বরত ট্রাফিক পুলিশের সদস্য মনির হোসেন, এইচএসসি পরীক্ষার্থী সাতরাজ উদ্দিন ও প্রকৌশলী সৈয়দ বাহা উদ্দিন। আহত হয়েছেন অন্তত সাতজন।

ক্লোজড সার্কিট টেলিভিশন (সিসিটিভি) ক্যামেরার ফুটেজে দেখা গেছে, ডেমু ট্রেন আসার সংকেত পেয়ে রেললাইন থেকে কিছুটা দূরে ছিল বিভিন্ন গাড়ি। কিন্তু ট্রেনটি রেলগেট অতিক্রম করার সময় জিইসি মোড় থেকে আসা দ্রুতগামী একটি বাস নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে দাঁড়িয়ে থাকা একটি অটোরিকশা ও একটি টেম্পোকে ধাক্কা দিয়ে ট্রেনের ওপর আছড়ে পড়ে।

রেলওয়ের তদন্ত কমিটির এক সদস্য নাম প্রকাশ না করার শর্তে প্রথম আলোকে বলেন, ভিডিও ফুটেজ, প্রত্যক্ষদর্শীসহ সংশ্লিষ্ট সবার সঙ্গে আলোচনা করে তদন্ত প্রতিবেদন তৈরি করা হয়েছে। তদন্তে দুর্ঘটনার জন্য বাসচালক শহিদুল আলম বেশি দায়ী। অন্য গাড়িগুলো দাঁড়িয়ে থাকলেও বাসটি দ্রুতগতিতে এসে পেছন থেকে ধাক্কা দিয়ে ট্রেনের ওপর আছড়ে পড়ে। বাসচালক যদি বেপরোয়া গতিতে গাড়ি না চালাতেন তাহলে দুর্ঘটনা ঘটত না।

ওই সদস্য আরও বলেন, এই দুর্ঘটনায় গেটম্যানের অবহেলা ছিল। সড়কের এক পাশে ব্যারিয়ার (লোহার দণ্ডের প্রতিবন্ধকতা) ফেলা হলেও অন্য পাশে তা ফেলা হয়নি। যে পাশে ফেলা হয়নি, ওই পাশ দিয়েই বাসটি দ্রুতগতিতে এসেছে। কমিটি এ জন্য গেটম্যান আশরাফুল আলমগীর ভূঁইয়ার বিরুদ্ধে বিভাগীয় শাস্তি নেওয়ার সুপারিশ করেছে।

এদিকে ভবিষ্যতে রেল লেভেল ক্রসিং এলাকায় দুর্ঘটনা এড়ানোর জন্য কয়েকটি সুপারিশ করেছে তদন্ত কমিটি। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হচ্ছে, লেভেল ক্রসিংগুলোতে পর্যাপ্ত জনবল নিয়োগ দেওয়া। কেননা, একজনের পক্ষে একসঙ্গে দুটি ব্যারিয়ার ফেলা সম্ভব হয় না। জাকির হোসেন সড়কেও দুটি ব্যারিয়ার রয়েছে। আর লেভেল ক্রসিংয়ে রেল গেটের আধুনিকায়ন করা প্রয়োজন। এ ছাড়া ব্যস্ততম রেল লেভেল ক্রসিংগুলোতে নিরাপত্তার জন্য আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যদের মোতায়েন করা দরকার। লেভেল ক্রসিং এলাকায় সড়কগুলোতে গতিরোধক স্থাপনের পরামর্শ দেন কমিটির সদস্যরা।

আরও পড়ুন

এদিকে এই দুর্ঘটনায় রেলওয়ে পুলিশও তিন সদস্যর একটি কমিটি গঠন করেছিল। রেলওয়ে পুলিশের চট্টগ্রামের পুলিশ সুপার মো. হাসান চৌধুরী প্রথম আলোকে বলেন, বাসচালক দ্রুতগতিতে গাড়ি চালিয়ে আসার কারণে দুর্ঘটনা ঘটেছে বলে প্রাথমিক তদন্তে পাওয়া গেছে। গেটম্যানও গেট ফেলেননি। এই ঘটনায় মামলা হয়েছে। সে অনুযায়ী তদন্ত চলছে।