দেলোয়ার আগে দুই বার ধর্ষণ করে

নোয়াখালীতে সাংবাদিকদের ব্রিফ করছেন জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের সদস্য আল-মাহমুদ ফায়জুল কবীর। মঙ্গলবার দুপুরে নোয়াখালীর চীফ জুডিশিয়াল ম্যাজিষ্ট্রেট আদালত ভবনের মিলনায়তনেপ্রথম আলো

বিবস্ত্র করে নির্যাতনের আগে নোয়াখালীর বেগমগঞ্জের একলাশপুরের সেই নারীকে (৩৭) স্থানীয় দেলোয়ার বাহিনীর প্রধান দেলোয়ার হোসেন (২৬) দুইবার ধর্ষণ করেছিলেন। নির্যাতনের শিকার ওই নারী মঙ্গলবার জাতীয় মানবাধকার কমিশনের তদন্তদলের কাছে এমন অভিযোগ করেছেন।

পরে তদন্ত দলের প্রধান মানবাধিকার কমিশনের পরিচালক (অভিযোগ ও তদন্ত) আল-মাহমুদ ফয়জুল কবীর নোয়াখালী চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিষ্ট্রেট আদালতের মিলনায়তনে উপস্থিত সাংবাদিকদের এসব কথা জানান।

আল-মাহমুদ ফয়জুল কবীর বলেন, নারীর অভিযোগ অনুযায়ী দেলোয়ার প্রায় সময় তাঁকে অশোভন প্রস্তাব দিতেন। প্রস্তাবে সাড়া দিতে হুমকি-ধমকিও দেওয়া হতো। প্রায় বছর খানেক আগে দেলোয়ার তাঁর ঘরে ঢুকে তাঁকে প্রথমবার ধর্ষণ করেন। এরপর গেল রমজানের কিছুদিন আগে দেলোয়ার তাঁর সহযোগী কালামের মাধ্যমে ওই নারীকে একটি নৌকায় ডেকে পাঠান। সেখানে দেলোয়ার ও কালাম দুজনই তাঁকে ধর্ষণ করতে চায়। এ সময় তিনি দেলোয়ারের কাছে অনুনয়-বিনয় করলে কালামকে টাকা দিয়ে পাঠিয়ে দেন দেলোয়ার। এরপর নৌকায় দ্বিতীয়বার তাঁকে ধর্ষণ করেন।

আল-মাহমুদ ফয়জুল কবীর বলেন, নারীর এই অভিযোগ শোনার পর তিনি বিষয়টি নিয়ে কমিশনের চেয়ারম্যান নাছিমা বেগমের সঙ্গে কথা বলেছেন। চেয়ারম্যানের পরামর্শ মতে তাঁরা ওই নারীকে দিয়ে দেলোয়ার ও কালামের বিরুদ্ধে ধর্ষণের অভিযোগে পৃথক একটি মামলা করাবেন। এ ক্ষেত্রে কমিশনের প্যানেল আইনজীবীরা আদালতে মামলাটি পরিচালনা করবেন।

এ বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে নোয়াখালীর পুলিশ সুপার মো. আলমগীর হোসেন বিকেল সাড়ে চারটায় প্রথম আলোকে বলেন, আগের অভিযোগের পাশাপাশি ওই নারী এখন যেসব নতুন অভিযোগ করেছেন সেগুলোও তদন্ত করে প্রয়োজনীয় আইনগত পদক্ষেপ নেওয়া হবে।

এদিকে প্রতিনিধি, নারায়ণগঞ্জ জানান, নারায়ণগঞ্জে র‍্যাবের হাতে গ্রেপ্তার দেলোয়ার হোসেনকে অস্ত্র মামলায় রিমান্ডে নিয়েছে পুলিশ। মঙ্গলবার দুপুরে নারায়ণগঞ্জ সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট ফাহমিদা খাতুনের আদালতে হাজির করে সাত দিনের রিমান্ড আবেদন জানালে শুনানি শেষে দুই দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন আদালত।

এর আগে সোমবার দিবাগত রাতে র‌্যাব-১১ ডিএডি আবদুল বাশেদ বাদী হয়ে অস্ত্র আইনে সিদ্ধিরগঞ্জ থানায় মামলাটি করেন। আগের দিন রোববার দিবাগত রাত আড়াইটার দিকে সিদ্ধিরগঞ্জের শিমরাইল চেকপোস্টে দেলোয়ার বাহিনী প্রধান দেলোয়ার হোসেনকে দুটি গুলি, একটি পিস্তলসহ গ্রেপ্তার করে র‌্যাব। পরে ভোরে তাঁর স্বীকারোক্তি অনুযায়ী রাজধানীর কামরাঙ্গীরচর এলাকা থেকে নারীকে বিবস্ত্র করে নির্যাতন মামলার প্রধান আসামি নূর হোসেন ওরফে বাদলকে (২০) গ্রেপ্তার করা হয়।

র‌্যাব-১১ ব্যাটালিয়ন অধিনায়ক লে. কর্নেল খন্দকার সাইফুল আলম সাংবাদিকদের জানান, গত ২ সেপ্টেম্বর নোয়াখালী জেলার বেগমগঞ্জে ওই নারীর ঘরে দেলোয়ার বাহিনীর কয়েকজন সদস্য প্রবেশ করে। ওই নারীকে বিবস্ত্র করে নির্যাতনের ভিডিও ধারণ করে ব্লাকমেইলিংয়ের মাধ্যমে অর্থ হাতিয়ে নিতে দেলোয়ার বাহিনী এই কাণ্ড ঘটিয়েছে। দেলোয়ার বাহিনীর বিরুদ্ধে এলাকায় সন্ত্রাস, চাঁদাবাজি ও মাদক ব্যবসাসহ নানা অপকর্ম করার অভিযোগ রয়েছে।

পরে রাতে দেলোয়ার হোসেনের স্বীকারোক্তি অনুযায়ী নোয়াখালী বেগমগঞ্জে তাঁর মাছের খামারে অভিযান চালিয়ে ৭টি তাজা ককটেল ও আরও দুটি গুলি উদ্ধার করে র‌্যাব।