দেশের প্রথম ভৌগোলিক নির্দেশক পণ্য জামদানি

জামদানিকে মসৃণ করতে যে পানি দরকার, তা কেবল শীতলক্ষ্যা নদীতে মেলে। এ কারণে শীতলক্ষ্যার তীরঘেঁষা জনপদের তাঁতিদের নিপুণ হাতে যে জামদানি উৎপাদিত হয়, তার মান সবার সেরা। এ সূত্রেই জামদানি বাংলাদেশের ভৌগোলিক নির্দেশক (জিআই) পণ্য।

এর আনুষ্ঠানিক ও আইনি স্বীকৃতি মিলল গতকাল বৃহস্পতিবার। বাংলাদেশ ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্প করপোরেশনের (বিসিক) আবেদনের পর এক বছর গবেষণা শেষে এ নিবন্ধন দিয়েছে শিল্প মন্ত্রণালয়ের অধীন সংস্থা পেটেন্ট ডিজাইন ও ট্রেডমার্কস অধিদপ্তর (ডিপিডিটি)।

এ উপলক্ষে শিল্প মন্ত্রণালয়ে এক অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। এতে বিসিকের চেয়ারম্যান মুশতাক হাসান মুহ. ইফতেখারের হাতে নিবন্ধন সনদ তুলে দেন শিল্পমন্ত্রী আমির হোসেন আমু। অনুষ্ঠানে শিল্পসচিব মো. মোশাররফ হোসেন ভূঁইয়া ও ডিপিডিটির নিবন্ধক মো. সানোয়ার হোসেন উপস্থিত ছিলেন।

অনুষ্ঠানে জানানো হয়, নিবন্ধিত
হওয়ায় এখন জামদানিতে বাংলাদেশের জিআই পণ্যের লোগো ব্যবহার করে রপ্তানি করা যাবে। পাশাপাশি দেশে ক্রেতারা লোগো দেখে কিনলে ঠকার আশঙ্কা থাকবে না। নিবন্ধিত পণ্য হিসেবে বাংলাদেশে জামদানি শুধু অনুমোদিত উৎপাদকেরা মান বজায় রেখে উৎপাদন করতে পারবেন।

বাংলাদেশের ভৌগোলিক নির্দেশক পণ্যগুলোকে নিবন্ধন দিতে সরকার ২০১৩ সালে ভৌগোলিক নির্দেশক পণ্য (নিবন্ধন ও সুরক্ষা) আইন করেছে। ২০১৫ সালে এ আইনের বিধিমালা তৈরি হয়। এরপর জিআই পণ্যের নিবন্ধন নিতে আহ্বান জানায় ডিপিডিটি। প্রথম বিসিক জামদানির জন্য আবেদন করে নিবন্ধন পেয়েছে। এর পাশাপাশি মৎস্য অধিদপ্তর ইলিশের জন্য আবেদন করেছে।

অনুষ্ঠানে শিল্পমন্ত্রী বলেন, বিশ্বে বাংলাদেশের যে কয়টা পণ্য সুপরিচিত, জামদানি এর অন্যতম। জামদানিকে ভৌগোলিক নির্দেশক (জিআই) পণ্য হিসেবে নিবন্ধনের মাধ্যমে দেশীয় ঐতিহ্য সুরক্ষার পথে বাংলাদেশ এক ধাপ এগিয়ে গেল।

শিল্পসচিব মোশাররফ হোসেন ভূঁইয়া বলেন, জামদানিকে নিবন্ধন দেওয়ার আগে নিয়ম অনুযায়ী আপত্তি থাকলে তা জানাতে বলা হয়েছিল। তবে ভারত বা অন্য কোনো দেশ কোনো আপত্তি করেনি। ফলে এ নিয়ে ভারতের সঙ্গে কোনো দ্বন্দ্ব হবে না। তিনি বলেন, এটি বাঙালির ঐতিহ্যবাহী পণ্য মসলিনের একটি সংস্করণ। ভারতের জামদানি আর বাংলাদেশের জামদানির ফারাক অনেক।

ভারত উপাধ্যায় জামদানি নামের একটি জামদানির নিবন্ধন নিয়েছে। এ বিষয়ে জানতে চাইলে ডিপিডিটির নিবন্ধক সানোয়ার হোসেন প্রথম আলোকে বলেন, ভারত তার আইনে নিবন্ধন নিয়েছে। বাংলাদেশের জামদানির নিবন্ধ দেওয়া হয়েছে এ দেশের আইনে। তিনি বলেন, নিবন্ধনের পর সুরক্ষা চাইলে যেসব বাজারে জামদানি রপ্তানি হয়, সেসব দেশের মেধাসম্পদ সংস্থার কাছ থেকে বাংলাদেশকে নিবন্ধন নিতে হবে। তখন বাংলাদেশি জামদানি নাম দিয়ে ওই সব দেশে কেউ কোনো পণ্য বিক্রি করতে পারবে না।