দেশে করোনাভাইরাস দ্রুত রূপ পরিবর্তন করছে: বিসিএসআইআর

করোনাভাইরাস
প্রতীকী ছবি

বাংলাদেশে করোনা ভাইরাসটি অনেক দ্রুতগতিতে রূপ পরিবর্তন করছে। বিশ্বে করোনা ভাইরাসের রূপান্তরের হার ৭ দশমিক ২৩ শতাংশ, সেখানে বাংলাদেশে করোনা ভাইরাস রূপান্তরের হার ১২ দশমিক ৬০ শতাংশ।

বাংলাদেশ বিজ্ঞান ও শিল্প গবেষণা পরিষদের (বিসিএসআইআর) জিনোমিক রিসার্চ ল্যাবরেটরির এক গবেষক দল এই তথ্য জানিয়েছে। আজ রোববার সকালে এক সংবাদ সম্মেলনে করোনা ভাইরাস বিষয়ক এই পর্যবেক্ষণ তুলে ধরা হয়।

গবেষকেরা বলছেন, করোনা ভাইরাসে মোট ২৮টি প্রোটিন থাকে। এর মধ্যে একটি হচ্ছে স্পাইক প্রোটিন, যার মাধ্যমে বাহককে আক্রমণ করে। করোনার নমুনা বিশ্লেষণ করে তাঁরা দেখেছেন, স্পাইক প্রোটিনে ৬১৪ তম অবস্থানে অ্যাসপার্টিক এসিডের পরিবর্তন হয়ে গ্লাইসিন হয়েছে। এতে ‘জি৬১৪’ নম্বর ভ্যারিয়েন্টটি শতভাগ ক্ষেত্রে আধিপত্য বিস্তার করেছে। এই আধিপত্যের কারণে দেশে করোনা ভাইরাসের সংক্রমণ বেশি হচ্ছে।

দেশে এ পর্যন্ত ৩২৫টি করোনা ভাইরাসের পূর্ণাঙ্গ জীবন নকশা বের করা হয়েছে। এর মধ্যে বিসিএসআইআরের জিনোমিক রিসার্চ ল্যাবরেটরির গবেষকেরা ২৬৩টি করোনা ভাইরাসের পূর্ণাঙ্গ জীবন নকশা বের করেছেন। এই ২৬৩টি ভাইরাসের জিন গবেষণায় বিজ্ঞানীরা দেখেছেন, দেশের করোনা ভাইরাসগুলোর জিনোমিক পর্যায়ে ৭৩৭টি পয়েন্টে রূপান্তর (মিউটেশন) হয়েছে। এর মধ্যে অ্যামিনো এসিড পর্যায়ে ৩৫৮ নন-সিনোনিমাস অ্যামিনো এসিডে প্রতিস্থাপন ঘটেছে। এ ছাড়া স্পাইক প্রোটিনের জিনে ১০৩টি নিওক্লিটাইড রূপান্তরের (মিউটেশন) মধ্যে ৫৩টি নন-সিনোনিমাস অ্যামিনো এসিডে প্রতিস্থাপন ঘটেছে। এর মধ্যে ৫টি সম্পূর্ণ স্বতন্ত্র, যা বিশ্বের আর কোথাও পাওয়া যায়নি।

গবেষকেরা বলছেন, সারা বিশ্বে সব মিলিয়ে ৬ ধরণের করোনা ভাইরাস পাওয়া গিয়েছে। এর মধ্যে বাংলাদেশের ২৬৩টি করোনা ভাইরাস পর্যবেক্ষণ করে বিসিএসআইআরের গবেষকেরা ৪ ধরনের—২৪৩টি জিআর ক্লেড, ১৬টি জিএইচ ক্লেড, ৩টি জি ক্লেড এবং ১টি ও ক্লেড করোনা ভাইরাসের উপস্থিতি পেয়েছেন। এছাড়া করোনার নমুনাগুলোর শতভাগ ক্ষেত্রে মোট ৪টি মিউটেশনে পুনরাবৃত্তি লক্ষ্য করা গেছে। এসব পরিবর্তন দেশে করোনা ভাইরাস সংক্রমণের জন্য মূলত দায়ী।

জিনোমিক রিসার্চ ল্যাবরেটরির প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা মো. সেলিম খান অসুস্থতার কারণে অনুষ্ঠানে অনুপস্থিত ছিলেন। মুঠোফোনে তিনি প্রথম আলোকে বলেন, জি৬১৪ নম্বর ভ্যারিয়েন্টের আধিপত্য, নিওক্লিওটাইডে মিউটেশন, মিউটেশনের হার এবং চারটি মিউটেশনে পুনরাবৃত্তির কারণে বাংলাদেশে করোনা ভাইরাসটি বেশি মানুষকে সংক্রমিত করছে। দেশে করোনা ভাইরাস সংক্রমণের জন্য এগুলোই দায়ী। তবে এই বৈশিষ্ট্যগুলোর কারণেই এটি মহামারী আকারে এখনও মৃত্যুর কারণ হয়ে ওঠেনি।
দেশের করোনা ভাইরাসের গতিপথ কোন দিকে ও কতটা শক্তিশালী- জানতে চাইলে মো. সেলিম খান বলেন, করোনা ভাইরাসটি খুব দ্রুত পরিবর্তন হয়। এটি আরও রূপান্তরিত হচ্ছে। ভবিষ্যতে এর চরিত্র কেমন হবে বা শক্তিশালী হবে কিনা তা বলা মুশকিল। এর জন্য করোনা ভাইরাসের পূর্ণাঙ্গ জীবন নকশা উন্মোচনের গবেষণাটি চালিয়ে যেতে হবে।

সংবাদ সম্মেলনে প্রধান অতিথি হিসেবে ছিলেন বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রী স্থপতি ইয়াফেস ওসমান। তিনি বলেন, ‘করোনা ভাইরাসের জিনোম সিকোয়েন্সর কাজ করে আমরা এর সম্পর্কে আরও জানতে পারব। তাই করোনার জিনোম সিকোয়েন্সের কাজটি চলবে।’ সংবাদ সম্মেলনে সভাপতিত্বকালে গবেষণার ফলাফল তুলে ধরেন বিসিএসআইআর-এর চেয়ারম্যান মো. আফতাব আলী শেখ।

বাংলাদেশ থেকে ৩২৫টি করোনা ভাইরাসের পূর্ণাঙ্গ জীবন রহস্য বের করা হয়েছে। এগুলো জিনোম সিকোয়েন্সের উন্মুক্ত তথ্য-ভান্ডার জার্মানির গ্লোবাল ইনিশিয়েটিভ অন শেয়ারিং অল ইনফ্লুয়েঞ্জা ডাটা (জিসএআইডি) ও যুক্তরাষ্ট্রের ন্যাশনাল সেন্টার ফর বায়োটেকনলিক্যাল ইনফরমেশনে (এনসিবিআই) ইতিমধ্যে প্রকাশিত হয়েছে। বিসিএসআইআর ছাড়া আরও নয়টি সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠান করোনা ভাইরাসের জিন রহস্য উন্মোচনের গবেষণায় কাজ করছে।

গবেষকেরা বলছেন, করোনার জিন রহস্য বা জিন সিকোয়েন্স উন্মোচন হচ্ছে ভাইরাসটির পূর্ণাঙ্গ জীবন রহস্য বের করা। এতে করে করোনা ভাইরাসের গতি, প্রকৃতি, আচরণগত বৈশিষ্ট্য জানা যাচ্ছে। জিনের ভেতরেই সব তথ্য লুকানো থাকে। জিন রহস্য বের করার মাধ্যমে কোনো প্রাণী বা করোনা ভাইরাসের রূপান্তরের (মিউটেশন) ধারা বোঝা যায়।