দেশে করোনায় মৃত্যুর নতুন রেকর্ড, এক দিনেই ১৪৩

দেশে করোনায় মৃত্যু বাড়ছে।
ফাইল ছবি: প্রথম আলো

দেশে টানা পঞ্চম দিন করোনাভাইরাসে শতাধিক মানুষের মৃত্যু হয়েছে। গত ২৪ ঘণ্টায় (বুধবার সকাল ৮টা থেকে আজ বৃহস্পতিবার সকাল ৮টা পর্যন্ত) করোনায় মারা গেছেন ১৪৩ জন। গত বছরের ৮ মার্চ দেশে প্রথম করোনা ধরা পড়ার পর থেকে এখন পর্যন্ত এটাই ২৪ ঘণ্টায় সর্বোচ্চসংখ্যক মৃত্যুর রেকর্ড।  
এই ২৪ ঘণ্টায় করোনা শনাক্ত হয়েছে ৮ হাজার ৩০১ জনের। আজ বিকেলে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে ২৪ ঘণ্টার করোনা পরিস্থিতির তথ্য জানানো হয়েছে। গত ২৭ জুন করোনায় মারা যান ১১৯ জন। গত ২৪ ঘণ্টায় মৃত্যুর নতুন রেকর্ডের আগে এটি ছিল এক দিনে সর্বোচ্চ মৃত্যু।

সর্বোচ্চ মৃত্যুর রেকর্ডের আগের ২৪ ঘণ্টায় করোনায় মারা যান ১১৫ জন। এ সময় করোনা শনাক্ত হয় ৮ হাজার ৮২২ জনের। গত বছরের ৮ মার্চ দেশে প্রথম করোনা ধরা পড়ার পর থেকে এখন পর্যন্ত এটাই এক দিনে সর্বোচ্চসংখ্যক রোগী শনাক্তের রেকর্ড।
নতুনদের নিয়ে দেশে এ পর্যন্ত করোনা সংক্রমিত শনাক্ত রোগীর সংখ্যা দাঁড়িয়েছে মোট ৯ লাখ ২১ হাজার ৫৫৯। মোট মৃত্যু হয়েছে ১৪ হাজার ৬৪৬ জনের। সুস্থ হয়েছেন ৮ লাখ ২০ হাজার ৯১৩ জন। সর্বশেষ ২৪ ঘণ্টায় সুস্থ হয়েছেন ৪ হাজার ৬৬৩ জন।


শেষ ২৪ ঘণ্টায় সবচেয়ে বেশি ৪৬ জনের মৃত্যু হয়েছে খুলনা বিভাগে। ঢাকা বিভাগে মৃত্যু হয়েছে ৩৫ জনের। রাজশাহী বিভাগে ১৯ জন ও চট্টগ্রাম বিভাগে মারা গেছেন ১৫ জন। বাকিরা অন্য বিভাগের।

গত ২৪ ঘণ্টায় মোট ৩২ হাজার ৫৫ জনের নমুনা পরীক্ষা করা হয়। পরীক্ষার বিপরীতে রোগী শনাক্ত দাঁড়িয়েছে ২৫ দশমিক ৯০ শতাংশ।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মানদণ্ড অনুযায়ী, কোনো দেশে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আছে কি না, তা বোঝার একটি নির্দেশক হলো রোগী শনাক্তের হার। কোনো দেশে টানা দুই সপ্তাহের বেশি সময় পরীক্ষার বিপরীতে রোগী শনাক্ত ৫ শতাংশের নিচে থাকলে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আছে বলে ধরা যায়। সেখানে কয়েক দিন ধরে বাংলাদেশে রোগী শনাক্ত ২০ শতাংশের বেশি হচ্ছে।

২০১৯ সালের ডিসেম্বরে চীনের উহানে প্রথম নতুন করোনাভাইরাস সংক্রমণ দেখা দেয়। পরে তা সারা বিশ্বে ছড়িয়ে পড়ে। দেশে প্রথম করোনা সংক্রমণ শনাক্ত হয় গত বছরের ৮ মার্চ। এরপর ধীরে ধীরে বাড়তে থাকে সংক্রমণ। গত বছরের শেষ দিকে এসে সংক্রমণ কমতে থাকে। দেশে এ বছরের মার্চ থেকে নতুন করে করোনা সংক্রমণ ও মৃত্যু বাড়তে থাকায় টানা বিধিনিষেধ চলছে।


এবার করোনার ঊর্ধ্বমুখী প্রবণতা শুরু হয় গত ঈদুল ফিতরের পরপরই। ভারত সীমান্তবর্তী জেলাগুলোতে রোগী দ্রুত বাড়তে থাকে। পরে তা আশপাশের জেলায়ও ছড়িয়ে পড়েছে। এক মাসের ব্যবধানে দৈনিক শনাক্ত রোগীর সংখ্যা, মৃত্যু ও শনাক্তের হার কয়েক গুণ বেড়েছে।

বর্তমানে দেশের অধিকাংশ জেলা করোনার ভয়াবহতার ঝুঁকিতে রয়েছে। ১৪ থেকে ২০ জুন নমুনা পরীক্ষা ও রোগী শনাক্তের হার বিবেচনায় নিয়ে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার সাপ্তাহিক রোগতাত্ত্বিক বিশ্লেষণে বলা হয়েছে, বাংলাদেশের ৬৪ জেলার মধ্যে ৪০টিই সংক্রমণের অতি উচ্চ ঝুঁকিতে রয়েছে।


পরিস্থিতি উদ্বেগজনক হওয়ায় ২২ জুন থেকে ঢাকাকে সারা দেশ থেকে অনেকটা বিচ্ছিন্ন রাখার সিদ্ধান্ত নেয় সরকার। সেই প্রচেষ্টায় ঢাকার আশপাশের চারটি জেলাসহ মোট সাতটি জেলায় জরুরি সেবা ছাড়া সব ধরনের চলাচল ও কার্যক্রম ৩০ জুন মধ্যরাত পর্যন্ত বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছিল। তবে এরপরও করোনা সংক্রমণ বাড়তে থাকায় সোমবার সকাল থেকে সারা দেশে সব গণপরিবহন ও মার্কেট-শপিং মল বন্ধ করা হয়েছে। আজ বৃহস্পতিবার থেকে শুরু হয়েছে সর্বাত্মক লকডাউন, বন্ধ থাকবে সব সরকারি-বেসরকারি অফিসও। ৭ জুলাই পর্যন্ত এই লকডাউন চলবে বলে জানানো হয়েছে।