ধর্ষণের ঘটনায় ছাত্র ইউনিয়নের সমালোচনায় জোটসঙ্গী বিপ্লবী ছাত্র মৈত্রী

ছাত্র ইউনিয়নের এক নেতার বিরুদ্ধে ওঠা ধর্ষণের অভিযোগের ঘটনায় সংগঠনটির ভূমিকার সমালোচনা করেছে তাদের জোটসঙ্গী বিপ্লবী ছাত্র মৈত্রী। তারা বলেছে, ওই ঘটনায় ছাত্র ইউনিয়নের ভূমিকা দেশের প্রগতিশীল ছাত্র আন্দোলনকে প্রশ্নবিদ্ধ করেছে।

এদিকে ভবিষ্যতে ধর্ষণ ও নারী নিপীড়নের মতো ঘটনায় বিবৃতি দেওয়ার ক্ষেত্রে ছাত্র ইউনিয়নের কাছে ‘আরও দায়িত্বশীল’ ভূমিকা আশা করেছে ছাত্র মৈত্রী।

গতকাল বৃহস্পতিবার বিপ্লবী ছাত্র মৈত্রীর পক্ষ থেকে গণমাধ্যমে পাঠানো এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এসব কথা বলা হয়। সংগঠনের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সদস্য জাবির আহমেদ বিজ্ঞপ্তিটি পাঠান। বিপ্লবী ছাত্র মৈত্রী একসময় ছাত্র ইউনিয়নের সঙ্গে ‘প্রগতিশীল ছাত্রজোট’ নামের মোর্চায় ঐক্যবদ্ধ ছিল। এখন ‘প্রগতিশীল সংগঠনসমূহ’ ও ‘আট ছাত্রসংগঠন’–এর ব্যানারে ছাত্র ইউনিয়নের সঙ্গে বিভিন্ন কর্মসূচিতে অংশ নিতে দেখা যায় ছাত্র মৈত্রীকে।

২০ মার্চ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্র ইউনিয়নের নেতা আকিফ আহমেদের বিরুদ্ধে ধর্ষণের অভিযোগ করেন এক শিক্ষার্থী। পরে আকিফ এ বিষয়ে স্বীকারোক্তিমূলক পদত্যাগপত্র দিলে পরের দিন তাঁকে সংগঠন থেকে বহিষ্কার করা হয়। একই সঙ্গে অভিযোগকারী ভবিষ্যতে আইনি পদক্ষেপ নিতে চাইলে সর্বোচ্চ সহযোগিতার প্রতিশ্রুতি দেয় ছাত্র ইউনিয়ন।

তবে এ ক্ষেত্রে সংগঠনের প্যাডে কোনো বিজ্ঞপ্তি দেওয়া হয়নি। বিষয়টি ‘বাংলাদেশ ছাত্র ইউনিয়ন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় সংসদ’ নামের একটি ফেসবুক পেজে পোস্টের মাধ্যমে জানানো হয়। প্রথমে দেওয়া পোস্টের একটি অংশ নিয়ে অনেকে আপত্তি জানালে পোস্টটি মুছে সংশোধিত পোস্ট দেওয়া হয়। এ ঘটনায় সংগঠনের অবস্থান জানিয়ে আরও একটি পোস্ট করা হয়।

বিপ্লবী ছাত্র মৈত্রীর বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, ছাত্র ইউনিয়ন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখার ফেসবুক পেজ থেকে প্রথম যে বিবৃতি দেওয়া হয়, সেখানে ভিকটিমকে ব্লেম করার সুযোগ থাকায় ও সমালোচনার মুখে প্রথম বিবৃতির জন্য দুঃখ প্রকাশ করে দ্বিতীয় বিবৃতি দেওয়া হয়। এরপর আরেকটি বিবৃতি দেয় ছাত্র ইউনিয়ন। এই বিবৃতিতে প্রথম বিবৃতির বক্তব্যের বৈধতাকরণের প্রবণতা দেখা যায়। কিছু বাক্যচয়নের মধ্য দিয়ে আবারও ভিকটিম ব্লেমিংয়ের সুযোগ তৈরি করা হয়। এর ফলে এ ঘটনাকে কেন্দ্র করে বিশ্ববিদ্যালয়কেন্দ্রিক বিভিন্ন ফেসবুক গ্রুপ ও শিক্ষার্থীদের আলাপে ভিকটিমকে ব্লেম করা হচ্ছে।

বিজ্ঞপ্তিতে আরও বলা হয়, জানা গেছে, ধর্ষণের ঘটনাটি টিএসসির সাংস্কৃতিক ইউনিয়নের কক্ষে ঘটেছে। এই কক্ষে ধর্ষণের মতো ঘটনা আমাদের কাছে এটাই স্পষ্ট করে তোলে যে প্রগতিশীল সংগঠনে এসেও নারীরা আজ অনিরাপদ। আমরা যে পিতৃতান্ত্রিক সমাজবাস্তবতায় বাস করছি তাতে ধর্ষণের মতো নৃশংস ঘটনাগুলোতে আমরা বরাবর আক্রান্তকে দোষ দেওয়ার সংস্কৃতি প্রত্যক্ষ করেছি। বাংলাদেশে দিন দিন নারীর প্রতি সহিংসতার ঘটনা বাড়ছে। এই সহিংসতা রোধে সবচেয়ে অগ্রগামী থাকার কথা প্রগতিশীল ছাত্রসংগঠনগুলোর। প্রগতিশীল ছাত্রসংগঠন হিসেবে ছাত্র ইউনিয়ন তাদেরই কক্ষে, তাদের সংগঠনের অভ্যন্তরেই নারীকে নিরাপত্তা দিতে ব্যর্থ হয়েছে।

বিপ্লবী ছাত্র মৈত্রী আরও বলেছে, ভাষা আন্দোলনের অগ্নিগর্ভ থেকে জন্ম নেওয়া সংগঠন ছাত্র ইউনিয়ন দেশের গণতান্ত্রিক ও প্রগতিশীল আন্দোলনের অন্যতম শক্তি। গণতান্ত্রিক ও প্রগতিশীল বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠার লড়াইয়ে এই সংগঠনের আছে গৌরবময় ইতিহাস। কিন্তু সাংস্কৃতিক ইউনিয়নের কক্ষে ঘটে যাওয়া ধর্ষণের ঘটনায় ছাত্র ইউনিয়নের ভূমিকায় প্রশ্নবিদ্ধ হয়েছে দেশের প্রগতিশীল ছাত্র আন্দোলন।

এদিকে ধর্ষণের ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে যথাযথ পদক্ষেপ নিতে ‘ব্যর্থতা, অপরিণামদর্শিতা ও ভুক্তভোগীর প্রতি অপরাধের’ অভিযোগ তুলে গতকাল ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্র ইউনিয়নের নতুন কমিটির কার্যক্রম স্থগিত করেছে সংগঠনটির কেন্দ্রীয় কমিটির একাংশ। অভিযুক্ত নেতাকে ধর্ষক আখ্যা দিয়ে তাঁকে বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বহিষ্কারের দাবি জানিয়েছে তারা। যদিও বিশ্ববিদ্যালয় শাখা কমিটি এই স্থগিতাদেশ মানছে না।