ধলাইমুখে আবার জমল 'ধলাসোনা'

সিলেটের ভোলাগঞ্জে ধলাই নদের মুখে জমেছে ধলাসোনাখ্যাত পাথর। সম্প্রতি ছবিটি তুলেছেন আনিস মাহমুদ
সিলেটের ভোলাগঞ্জে ধলাই নদের মুখে জমেছে ধলাসোনাখ্যাত পাথর। সম্প্রতি ছবিটি তুলেছেন আনিস মাহমুদ

ওপারজুড়ে সবুজ পাহাড়ের বেষ্টনী। সেখান থেকে ঝরনার মতো ছড়া নেমে এসেছে এপারে। ছড়ার জলতরঙ্গে কোমর থেকে হাঁটুসমান স্বচ্ছ পানি। পাহাড়ের ছায়ায় সেই পানি সবুজ দেখায়। তার মধ্যে চিকচিক করছে সাদা পাথরের স্তূপ, লোকে বলে ‘ধলাসোনা’!

সিলেট সীমান্তের ধলাই নদের উৎসমুখের দৃশ্যপট এটি। ওপারে ভারতের মেঘালয় রাজ্যের পাহাড়ি অঞ্চল লুংলংপুঞ্জি ও শিলংয়ের চেরাপুঞ্জি। সারা বছর নদের পানি প্রবহমান থাকে। বৃষ্টিবহুল চেরাপুঞ্জির পাদদেশ থেকে বর্ষায় ঢলের পানির সঙ্গে পাহাড় থেকে পাথরখণ্ড এপারে নেমে আসে। ভেসে আসা এই পাথর উত্তোলিত পাথরের চেয়ে দামি। এটির কদরও বেশি। ব্যবহৃত হয় স্থাপত্যকাজে।

স্থানীয় লোকজন বলছেন, এবার পাহাড়ি ঢলের আগে ও পরে ধলাই নদের উৎসমুখে অবৈধ পাথর উত্তোলন যন্ত্র ‘বোমা মেশিন’ পুরোপুরি বন্ধ ছিল। টানা তিন মাস টাস্কফোর্সের অভিযান চলেছে। এর সুফল ধলাসোনা নামের এই পাথরের স্তূপ।

গত ১৭ জুলাই এখানে সর্বশেষ পাহাড়ি ঢল হয়েছে। এরপর সরেজমিনে দেখা গেছে, বিস্তীর্ণ প্রায় পাঁচ একর ভূমিতে সাদা পাথরের আস্তরণ। ছোট, মাঝারি আর বড় আকৃতির সব পাথর অবশ্য সাদা নয়। আছে কালো, খয়েরিও। সাদার মধ্যে ভিন্ন রঙের পাথর থাকায় সাদা পাথরগুলো আরও চকচক করছে। যেখানে পাথর জমেছে, সেই জায়গাটি সিলেটের কোম্পানীগঞ্জ উপজেলার ভোলাগঞ্জ পাথরকোয়ারির পার্শ্ববর্তী এলাকা। ধলাই নদের উৎসমুখে জমা পাথরের সাদা (ধলা) রং আর নদের নামের সঙ্গে মিলিয়ে লোকে এর নাম দিয়েছে ‘ধলাসোনা’।

পাহাড়ি ঢলে পাথর জমা হওয়ার পর থেকে তা সংরক্ষণ করা হচ্ছে। দেখভাল করছে কোম্পানীগঞ্জ উপজেলা প্রশাসন। একসময়ের ধু ধু চর এখন পাথরভূমি। বর্ডার গার্ড বাংলাদেশের (বিজিবি) বিশেষ ফাঁড়ি স্থাপন করে নজরদারি চলছে। আছে পুলিশের নৌ-টহল। বাংলাদেশ-ভারত সীমান্তের শূন্যরেখার পরে বাংলাদেশ রেলওয়ের রজ্জুপথের (রোপওয়ে) স্থাপনা। প্রবেশমুখে রেলওয়ে নিরাপত্তা বাহিনীরও (আরএনবি) পাহারা রয়েছে।

কোম্পানীগঞ্জের ইউএনও মুহাম্মদ আবুল লাইছ বলেন, ঢলের পরে সাদা পাথর জমেছে দেখে সংরক্ষণ করা হচ্ছে। এলাকাবাসী বলছেন, ১৯৯০ সালে এ রকম পাথর দেখা গিয়েছিল। সেগুলো সংরক্ষণ করা হয়নি। আবার প্রায় দুই যুগের বেশি সময়ের পর এভাবে পাথর জমেছে। এ কারণেই এলাকাবাসীর কাছে ধলাসোনা বলে সমাদৃত এই পাথরের স্তূপ সংরক্ষণের ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে।

গত মার্চ মাস থেকে সর্বশেষ মধ্য জুলাই পর্যন্ত মোট ১৩ দফা পাহাড়ি ঢল নেমেছে। উপজেলা প্রশাসন প্রাথমিকভাবে হিসাব করেছে ঢলের তোড়ে ওপার থেকে পাথরের অন্তত ১৩টি আস্তরণ পড়েছে। পাঁচ একর জায়গার ওপরে অন্তত ২০ ফুট পুরু পাথরের স্তর জমেছে।

পশ্চিম ইসলামপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান শাহ মোহাম্মদ জামাল উদ্দিন জানান, এবার আগের তুলনায় অনেক বেশি পাথর জমেছে। আগে প্রতিবারই জমা হওয়া ধলাসোনা লুটপাট হয়ে যেত।

স্থানীয় বাসিন্দা শাহ মোহাম্মদ জামাল বলেন, উপজেলা প্রশাসনের চেষ্টায় যেহেতু এত বছর পর পাথরের এই স্তূপ জমেছে, তাই এলাকাবাসী চাচ্ছেন পাথরগুলো সংরক্ষিত থাকুক। এ জায়গা ঘিরে পর্যটনকেন্দ্র গড়ে তোলা হোক।

এ ব্যাপারে সিলেটের জেলা প্রশাসক রাহাত আনোয়ার প্রথম আলোকে বলেন, অতীতে পাথর স্তূপ অরক্ষিত থাকায় লুটপাট হয়েছে। এবার আর পাথর লুট হতে দেওয়া হবে না। স্থানীয় প্রশাসনকে সংরক্ষণের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। এ স্থানটিকে পর্যটনবান্ধব করতে উদ্যোগ নেওয়া হবে।