ধামরাইয়ে আশ্রয়ণ প্রকল্পে গাদাগাদি করে বাস
টিনের তৈরি ছোট একটি কক্ষে পাশাপাশি দুটি চৌকি। দুই চৌকির মাঝে বেড়া। এখানেই স্ত্রী, দুই ছেলে ও পুত্রবধূদের নিয়ে আবুল হোসেনের পরিবারের বসবাস। ঢাকার ধামরাইয়ের সুতিপাড়া ইউনিয়নের ছোট কালামপুর আশ্রয়ণ প্রকল্পে আবুল হোসেনের মতোই গাদাগাদি করে থাকছে আরও ১১৯টি পরিবার।
আবুল হোসেন বলেন, ব্যারাক নির্মাণের পর তাঁকে ৩ নম্বর ব্যারাকের একটি কক্ষ বরাদ্দ দেওয়া হয়। এরপর স্ত্রী ও দুই ছেলে নিয়ে ওই কক্ষে বসবাস শুরু করেন তিনি। দুই ছেলে বিয়ে করায় পরিবারের সদস্যসংখ্যা এখন বেড়েছে। কিন্তু কক্ষের সংখ্যা বাড়েনি। তাই বেড়া দিয়ে একটি কক্ষেই গাদাগাদি করে থাকতে হচ্ছে তাঁদের।
ধামরাই উপজেলা সহকারী কমিশনারের (ভূমি) কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, সরকারি অর্থায়নে ছোট কালামপুর গ্রামে ১০০ একরের বেশি খাসজমির ওপর ২০০০ সালে আশ্রয়ণ প্রকল্পটি চালু করা হয়। গ্রামের নামানুসারে প্রকল্পের নাম দেওয়া হয় ‘ছোট কালামপুর আশ্রয়ণ প্রকল্প’। প্রকল্পে খেলার মাঠ, মসজিদ, কবরস্থান, সমবায় সমিতির কার্যালয়সহ টিনের তৈরি ১২টি ব্যারাক রয়েছে।
প্রতিটি ব্যারাকে ১০টি করে ছোট কক্ষ রয়েছে। ৮ শতাংশ জমিসহ এসব কক্ষের একেকটি বরাদ্দ দেওয়া হয় একেকটি ভূমিহীন পরিবারকে। পাঁচটি পরিবারের জন্য যৌথভাবে দুটি শৌচাগার ও একটি গোসলখানা নির্মাণ করে দেওয়া হয়। প্রতিটি ব্যারাকের জন্য টিউবওয়েল দেওয়া হয় একটি করে। কিন্তু গত ১৬ বছরে এসবের অনেক কিছুই নষ্ট হয়ে গেছে।
সম্প্রতি আশ্রয়ণ প্রকল্পে গিয়ে দেখা যায়, প্রতিটি ব্যারাকই জরাজীর্ণ। অনেক ব্যারাকের টিনের চাল আলগা হয়ে গেছে। টিউবওয়েল ও শৌচাগার নেই অনেক ব্যারাকেই। বাসিন্দারা পলিথিন দিয়ে শৌচাগার বানিয়েছেন। অনেকে টিউবওয়েলও স্থাপন করেছেন নিজেদের অর্থে। নড়বড়ে হয়ে পড়েছে সমিতির কার্যালয়টিও।
বাসিন্দারা জানালেন, দীর্ঘদিন ধরে তাঁরা নানা সমস্যার মধ্যে থাকলেও সরকারিভাবে তা সমাধানে কোনো উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে না। ১০ টাকা কেজি দরের চাল ছাড়া অন্যান্য সরকারি সুযোগ-সুবিধা পান না তাঁরা। বাসিন্দাদের অনেকেই বৃদ্ধ হলেও বয়স্ক ভাতা পান হাতে গোনা কয়েকজন।
১ নম্বর ব্যারাকের বাসিন্দা আয়শা বেগম বলেন, প্রতিটি ব্যারাকের চালের টিন ছিদ্র হয়ে গেছে। সামান্য বৃষ্টি হলেই ছিদ্র দিয়ে পানি পড়ে। বৃষ্টির পানি ঠেকাতে হাঁড়ি-পাতিল নিয়ে বসে থাকতে হয়। বিষয়টি স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যানসহ উপজেলা প্রশাসনকে জানানোর পরও কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে না।
৩ নম্বর ব্যারাকের বাসিন্দা আমেনা বেগম বলেন, তাঁদের পাঁচটি পরিবারের জন্য দুটি শৌচাগারসহ একটি গোসলখানা নির্মাণ করে দেওয়া হয়েছিল। বছর খানেক আগে শৌচাগারসহ গোসলখানাটি ভেঙে গেছে। এরপর থেকে তাঁরা পলিথিন দিয়ে শৌচাগার তৈরি করে নিয়েছেন।
২ নম্বর ব্যারাকের বাসিন্দা পূর্ণ চন্দ্র দাস বলেন, প্রতিটি পরিবারকে ৮ শতাংশ করে জমি দেওয়া হলেও তাঁদের দখলে রয়েছে ৩ থেকে ৪ শতাংশ করে। বাকি জমি তাঁরা ব্যবহার করতে পারেন না।
৩ নম্বর ব্যারাকের করিমন বেগমের স্বামী ফুলচান মারা গেছেন বছর পাঁচেক আগে। তাঁর ছেলেসন্তান নেই। জীবিকা নির্বাহ করেন মানুষের বাসায় কাজ করে। এরপরও তাঁকে বিধবা ভাতার কার্ড দেওয়া হয়নি।
জানতে চাইলে ধামরাইয়ের সহকারী কমিশনার (ভূমি) তাসলিমা মোস্তারী বলেন, ‘কয়েক মাস হয় আমি ধামরাইয়ে যোগদান করেছি। খোঁজখবর নিয়ে ছোট কালামপুর আশ্রয়ণ প্রকল্পের নানা সমস্যার কথা ঢাকার বিভাগীয় কমিশনারকে অবহিত করা হয়েছে। খুব শিগগির সেখানে অর্থ বরাদ্দ দেওয়া হবে।’