নওগাঁয় চুনাপাথরের খনি, নিচে খোঁজা হচ্ছে কয়লা

উত্তরের জেলা নওগাঁয় আনুমানিক ১০ হাজার কোটি (১০০ বিলিয়ন) টন মজুতসমৃদ্ধ অভাবনীয় বিশাল আকারের একটি চুনাপাথরের খনি আবিষ্কার করেছে বাংলাদেশ ভূতাত্ত্বিক জরিপ অধিদপ্তর (জিএসবি)। ভূগর্ভের ২ হাজার ২১৪ ফুট নিচে এ খনিস্তরের শুরু। তারও প্রায় ১০০ ফুট নিচে এর শেষ।
গতকাল বৃহস্পতিবার সকালে জিএসবি এ আবিষ্কারের নিশ্চিত খবর পায়। এরপর বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ গণমাধ্যমের কাছে এ খবর প্রকাশ করেন।
তবে এখন পর্যন্ত যে খবর অপ্রকাশিত তা হচ্ছে চুনাপাথরের ওই খনির নিচে একটি নতুন ভূ-কাঠামোয় (ফর্মেশন) কয়লা রয়েছে বলে ধারণা করছেন জিএসবির বিশেষজ্ঞরা। তাই সেখানে চুনাপাথরের স্তর ভেদ করে আরও গভীর কূপ খনন করে চলেছেন তাঁরা। লক্ষ্য, চুনাপাথরের নিচে কয়লাখনির সন্ধান লাভ।
জিএসবির মহাপরিচালক মো. নেহাল উদ্দিন প্রথম আলোকে বলেন, নওগাঁর পাশে জয়পুরহাটের জামালগঞ্জ কয়লাখনির ওপরেও চুনাপাথর পাওয়া গিয়েছিল। সেখানকার ভূ-কাঠামোর সঙ্গে নওগাঁয় আবিষ্কৃত চুনাপাথরের খনির ভূ-কাঠামোর যথেষ্ট সাদৃশ্য রয়েছে।
নেহাল উদ্দিন বলেন, ভূতাত্ত্বিক জরিপের ভিত্তিতে নওগাঁর বদলগাছি উপজেলার তাজপুরে তাঁরা যে কূপটি খনন করছেন, সেটি তিন হাজার ফুট বা তার চেয়েও বেশি গভীর করার পরিকল্পনা আগেই করে রেখেছেন। সে অনুযায়ীই কাজ চলছে। তাঁরা চুনাপাথরের স্তর অতিক্রম করে নতুন ভূ-কাঠামোটি স্পর্শ করতে চান। দেখতে চান সেখানে প্রকৃতপক্ষে কী আছে।
দেশে এর আগেও চুনাপাথরের খনি আবিষ্কার করেছে জিএসবি। এর মধ্যে সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য জয়পুরহাটের খনিটি। সেখানে মজুত আছে ১০ কোটি (১০০ মিলিয়ন) টন। কিন্তু এখন পর্যন্ত সরকার চুনাপাথর উত্তোলনে কোনো উদ্যোগ নেয়নি। যদিও বর্তমানে দেশে চুনাপাথরের চাহিদা বছরে প্রায় দুই কোটি মেট্রিক টন।
সংশ্লিষ্ট বিশেষজ্ঞরা বলেন, চুনাপাথরের ব্যবহার সবচেয়ে বেশি হয় সিমেন্ট কারখানায়। সিমেন্টের প্রধান উপাদানই হচ্ছে চুনাপাথর। দেশে এখন যতগুলো সিমেন্ট কারখানা আছে তার মধ্যে দু-তিনটি ছাড়া সবাই বিদেশ থেকে ক্লিংকার এনে তা গুঁড়া করে ব্যাগ ভরে বাজারজাত করছে। ক্লিংকারে চুনাপাথর মেশানোই থাকে।
আর দু-তিনটি সিমেন্ট কারখানা ভারত থেকে চুনাপাথর আমদানি করে তাদের কারখানায় সিমেন্ট তৈরিতে ব্যবহার করে। দেশের চুনাপাথর তোলা হলে তা সব সিমেন্ট কারখানাতেই ব্যবহার করা যেত।
জ্বালানি খাতের বিশেষজ্ঞরা বলছেন, চুনাপাথরের খনি ছাড়াও জামালগঞ্জ, দীঘিপাড়া, খালাসপীর ও বড়পুকুরিয়া কয়লাখনি আবিষ্কার করেছে জিএসবি। আরও কিছু গুরুত্বপূর্ণ খনিজ ও ভারী খনিজ (হেভি মিনারেল) আবিষ্কার করেছে জিএসবি। কিন্তু আবিষ্কৃত এসব খনিজ সম্পদের যেমন অর্থনৈতিক ব্যবহার হচ্ছে না, তেমনি প্রতিষ্ঠান হিসেবে জিএসবিও অনেকটাই অবহেলিত।