নকশা পড়ে সফল উদ্যোক্তা

শৈশব থেকে রান্নাঘরের সঙ্গে সখ্য ছিল তাঁর। স্বপ্ন ছিল খাবার নিয়ে কিছু একটা করার। প্রথম আলোর সাপ্তাহিক ক্রোড়পত্র ‘নকশা’ সেই স্বপ্নপূরণে পথ দেখিয়েছে তাঁকে। নকশা পড়েই এখন সফল উদ্যোক্তা ইসরাত জাহান।

সম্প্রতি বগুড়া শহরের অভিজাত জলেশ্বরীতলা এলাকার শহীদ আবদুল জব্বার সড়কে নানা পদের বিদেশি খাবারের আয়োজন নিয়ে চালু করেছেন অত্যাধুনিক এশিয়ান ফিউশন রেস্তোরাঁ অ্যান্ড কফি শপ ‘লকমা’। এই ব্যবসা পরিচালনায় তাঁকে সহযোগিতা করছেন স্বামী মইনুল ইসলাম স্বপন ও চিকিৎসক ছেলে রওনক ইবনে মঈন। শিগগিরই নিউইয়র্কে লকমার আরেকটি শাখা চালুর উদ্যোগ নিয়েছেন ইসরাত। নিউইয়র্কপ্রবাসী মেয়ে নুসরাত হাসনাত সেখানকার রেস্তোরাঁটি দেখভাল করবেন।
রেস্তোরাঁ ছাড়াও বগুড়ার শহীদ জব্বার সড়কে ইসরাতের আছে সুকন্যা ফ্যাশন হাউস, সুকন্যা বিউটি অ্যান্ড স্পা এবং সুকন্যা জেন্টস ব্লু স্যালন অ্যান্ড স্পা।
প্রায় শূন্য থেকেই আজ একজন সফল নারী উদ্যোক্তা হয়ে ওঠা ইসরাত জাহানের কয়েক কোটি টাকার পুঁজি খাটছে তাঁর একাধিক ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানে। প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে তাঁর প্রতিষ্ঠানে কাজ করছেন প্রায় ১৫০ জন কর্মী।

বগুড়া শহরের জলেশ্বরীতলায় শহীদ আবদুল জব্বার সড়কে লকমা রেস্তোরাঁয় বসে কথা হলো ইসরাত জাহানের সঙ্গে। বললেন, ‘শৈশব থেকেই স্বপ্ন ছিল নিজে কিছু করার। চাকরির ফাঁকে বাসায় কাপড়ের ওপর ফুল তোলা, ব্লক-বাটিকের কাজ ও বিভিন্ন রকমের রান্নাবান্না নিয়ে ব্যস্ত থাকতেন। পাশাপাশি নকশায় বিভিন্ন খাবারের রেসিপি খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে পড়তেন।

ইসরাত জাহান বলেন, ১৯৯৯ সালের নকশার একটি সংখ্যায় রান্নাবিদ রাহিমা সুলতানা রিতার রেসিপি ছাপা হয়। সেটি পড়ে প্রথম আলোতে যোগাযোগ করে রাহিমা সুলতানার নম্বর জোগাড় করেন। এরপর ঢাকায় গিয়ে তাঁর সঙ্গে দেখা করেন। রাহিমার পরামর্শে বগুড়ায় রান্নার প্রশিক্ষণ কর্মশালার আয়োজন করেন ইসরাত। সেই শুরু তাঁর রান্না শেখা। তারপর শেখেন ব্লকপ্রিন্ট, বাটিক ও পোশাকের নকশার কাজ।
ইসরাত বলেন, ‘নকশায় রেসিপি পাঠাতাম, ছাপাও হতো। পরিচিতদের কাছ থেকে বেশ প্রশংসা পেতাম। সবার উৎসাহে বগুড়ায় নিয়মিত রান্নার কোর্স চালু করি। সকাল-বিকেল দুই বেলায় রান্না শেখানোর ক্লাস নিতাম। প্রতি ব্যাচে ৭০–১০০ জন রান্না শিখতে আসতেন। ওই কোর্সে সাফল্যের পর বুটিক হাউস ও পারলার স্থাপনে প্রশিক্ষণ নিলাম। বিউটিফিকেশনের ওপর কয়েকটি কোর্স করে ফেললাম।’

এলাকায় নারীদের রূপচর্চায় অত্যাধুনিক বিউটি পারলার, পুরুষদের জন্য আলাদা জেন্টস পারলার এবং ফ্যাশন হাউস প্রতিষ্ঠাসহ বগুড়া শহরে নানামুখী ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান পরিচালনায় সফল ইসরাত অন্য নারীদের জন্য এক অনুপ্রেরণা হয়ে উঠেছেন। ইসরাত বাংলাদেশ উইমেন চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির সদস্য। মেকআপ, ত্বকের যত্ন, অ্যারোমা থেরাপি, হেয়ার কাটসহ নানা বিষয়ে ভারত, যুক্তরাষ্ট্রসহ নানা দেশে প্রশিক্ষণ নিয়েছেন। ২০০৫ সালে প্রাণ-প্রথম আলো জাতীয় আচার প্রতিযোগিতায় (মিষ্টি বিভাগ) দ্বিতীয় পুরস্কার পান তিনি। এ ছাড়া রূপচাঁদা রান্না প্রতিযোগিতায় ২০১৬ সালে আঞ্চলিক পর্যায়ে প্রথম রানারআপ হয়েছিলেন ইসরাত জাহান। বগুড়া লেডিস ক্লাব ও ইনার হুইল ক্লাবের সদস্য হয়ে সামাজিক কার্যক্রমেও যুক্ত তিনি।

ইসরাত জাহান বলেন, ‘উদ্যোক্তা হয়ে ওঠার পেছনে আমার অন্যতম প্রেরণা নকশা। এখনো প্রতি মঙ্গলবার নকশার জন্য অপেক্ষা করি।’