নতুন প্রধান বিচারপতি হাসান ফয়েজ সিদ্দিকী

হাসান ফয়েজ সিদ্দিকী

দেশের ২৩তম প্রধান বিচারপতি হিসেবে আপিল বিভাগের বিচারপতি হাসান ফয়েজ সিদ্দিকীকে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। সংবিধানের ৯৫(১) অনুচ্ছেদের ক্ষমতাবলে রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ এ নিয়োগ দেন। শপথ গ্রহণের তারিখ থেকে ওই নিয়োগ কার্যকর হবে। প্রধান বিচারপতির নিয়োগসংক্রান্ত প্রজ্ঞাপন আজ বৃহস্পতিবার জারি করেছে আইন মন্ত্রণালয়।

বিচারপতি হাসান ফয়েজ সিদ্দিকী বর্তমান প্রধান বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেনের স্থলাভিষিক্ত হচ্ছেন। বিচারপতি হাসান ফয়েজ সিদ্দিকী ২০১৫ সালের ৩০ এপ্রিল থেকে বাংলাদেশ জুডিশিয়াল সার্ভিস কমিশনের চেয়ারম্যান হিসেবে দায়িত্ব পালন করে আসছেন।

রাষ্ট্রপতির প্রেসসচিব মো. জয়নাল আবেদীন প্রথম আলোকে বলেন, শুক্রবার বিকেল চারটায় বঙ্গভবনে রাষ্ট্রপতি নতুন প্রধান বিচারপতি হাসান ফয়েজ সিদ্দিকীকে শপথ পাঠ করাবেন।

দেশের ২১তম প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহার (এস কে সিনহার) প্রথমে ছুটিতে যাওয়া, পরে ছুটির মেয়াদ বাড়িয়ে বিদেশ যাওয়া ও বিদেশ থেকে পদত্যাগের পর ২০১৮ সালের ৩ ফেব্রুয়ারি দেশের ২২তম প্রধান বিচারপতি হিসেবে শপথ নেন বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেন। সংবিধান অনুযায়ী ৬৭ বছর বয়স পর্যন্ত বিচারপতি থাকতে পারেন। এ হিসেবে আজ প্রধান বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেনের শেষ কর্মদিবস। এর মধ্য দিয়ে নতুন প্রধান বিচারপতিসহ আপিল বিভাগের বিচারপতির সংখ্যা চারে দাঁড়াল। অপর তিন বিচারপতি হলেন বিচারপতি মোহাম্মদ ইমান আলী, বিচারপতি মো. নূরুজ্জামান ও বিচারপতি ওবায়দুল হাসান।

বিচারপতি হাসান ফয়েজ সিদ্দিকী ১৯৫৬ সালের ২৬ সেপ্টেম্বর কুষ্টিয়ার খোকসা উপজেলার রমানাথপুর গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতকোত্তরের পাসের পর আইনে ডিগ্রি অর্জন করে আইন পেশায় যোগ দেন তিনি।

১৯৮১ সালে জেলা আদালত, ১৯৮৩ সালে হাইকোর্ট বিভাগ ও ১৯৯৯ সালে আপিল বিভাগের আইনজীবী হিসেবে তালিকাভুক্ত হন। বিচারপতি হাসান ফয়েজ সিদ্দিকীর বড় ভাইও আপিল বিভাগের বিচারপতি ছিলেন, যিনি গত ১৬ জুলাই অবসরে যান।

২০০১ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে বিচারপতি হাসান ফয়েজ সিদ্দিকীসহ ১১ জনকে হাইকোর্ট বিভাগের অতিরিক্ত বিচারক হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হয়। তাদের মধ্যে বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেন ও বিচারপতি মোহাম্মদ ইমান আলীকে ২০০৩ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে স্থায়ী করা হয়। এর আগে আরও সাত বিচারপতিকে স্থায়ী করা হয়নি। এ হিসাবে বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারের আমলে ১৬ জন স্থায়ী নিয়োগ বঞ্চিত হন। তখন অভিযোগ ওঠে, প্রধান বিচারপতির সুপারিশ থাকা সত্ত্বেও রাজনৈতিক বিবেচনায় তৎকালীন সরকারের পরামর্শে রাষ্ট্রপতি তাঁদের বাদ দেন। স্থায়ী নিয়োগবঞ্চিত ১৬ বিচারকের মধ্যে বিচারপতি হাসান ফয়েজ সিদ্দিকীসহ কয়েকজন স্থায়ী না করার বৈধতা নিয়ে ২০০৩ সালে পৃথক রিট করেন। এর প্রাথমিক শুনানি নিয়ে হাইকোর্ট রুল দেন। পরে নিয়োগবঞ্চিত অপর বিচারকেরা রিটে পক্ষভুক্ত হন, যা ১০ বিচারপতির মামলা হিসেবে পরিচিতি পায়।

রুলের চূড়ান্ত শুনানি নিয়ে ২০০৮ সালের ১৭ জুলাই হাইকোর্টের একটি বৃহত্তর বেঞ্চ ১০ বিচারককে স্থায়ী বিচারপতি হিসেবে নিয়োগ দিতে সরকারকে নির্দেশ দেন। একই সঙ্গে ২০০৩ সাল থেকে তাঁদের জ্যেষ্ঠতা দিতে নির্দেশ দেওয়া হয়। এই রায়ের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রপক্ষ ও হাইকোর্ট বিভাগে কর্মরত ১৯ বিচারপতি পৃথক আপিল করেন। ২০০৯ সালের ২ মার্চ আপিল বিভাগ হাইকোর্টের রায় বহাল রাখেন। তবে জ্যেষ্ঠতা শপথের দিন থেকে নির্ধারিত হবে বলে রায়ে বলা হয়। রায়ের পর ২০০৯ সালের ২৫ মার্চ হাইকোর্ট বিভাগের বিচারপতি হিসেবে নিয়োগ পান বিচারপতি হাসান ফয়েজ সিদ্দিকী। ২০১৩ সালের ৩১ মার্চ আপিল বিভাগের বিচারপতি হিসেবে নিয়োগ পান তিনি। তাঁর বিচারক পদের মেয়াদ ২০২৩ সালের ২৫ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত।