নাটোর-বনপাড়া সড়ক খানাখন্দে ভরা

রাজশাহী-ঢাকা মহাসড়কের নাটোর-বনপাড়া অংশের ১৮ কিলোমিটার সড়কের মধ্যে ১৭ কিলোমিটারেই অসংখ্য গর্ত সৃষ্টি হওয়ায় সড়কটি যানবাহন চলাচলের অনুপযোগী হয়ে পড়েছে।

আগে যেখানে মোটরযানে সড়কের এই অংশটুকু পার হতে সময় লাগত ২০ মিনিট, এখন সেখানে সময় লাগছে প্রায় এক ঘণ্টা। খানাখন্দের কারণে এই সড়কে প্রতিনিয়ত ঘটছে দুর্ঘটনা।

শুধু গত শুক্রবার ছয় ঘণ্টায় সকালেই সড়কের এই অংশে ২৭টি দুর্ঘটনা ঘটেছে। বেহাল সড়কের কারণে নাটোর, রাজশাহী ও চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলার সঙ্গে ঢাকার যোগাযোগ ব্যাহত হচ্ছে। এ ছাড়া উত্তর ও দক্ষিণাঞ্চলের মধ্যে যাতায়াতকারী যানবাহনেরও চলাচল ব্যাহত হচ্ছে।

নাটোর শহরের মাদ্রাসা মোড় থেকে বড়াইগ্রামের বনপাড়া গোলচত্বর পর্যন্ত ১৮ কিলোমিটার সড়ক রাজশাহী-ঢাকা মহাসড়কের অংশ। সড়কের এই অংশটুকু রংপুর-খুলনা ও রংপুর-পাবনা মহাসড়কেরও অংশ। ফলে নাটোর, রাজশাহী ও চাঁপাইনবাবগঞ্জ থেকে ঢাকায় চলাচলকারী সব যানবাহন এবং উত্তরাঞ্চল ও দক্ষিণাঞ্চলের বিভিন্ন জেলার মধ্যে চলাচলকারী যানবাহনের জন্য এই মহাসড়ক বেশ গুরুত্বপূর্ণ। সড়কে অসংখ্য ছোট-বড় গর্তের পাশাপাশি গত কয়েক দিনের টানা বৃষ্টিতে কিছু কিছু জায়গা দেবে গেছে। যানবাহন বিকল হয়ে প্রায়ই দুর্ঘটনা ঘটছে। গত ৫ ও ১৯ জুলাই মহাসড়কের এই অংশের আহম্মদপুর ও গাজির বিল এলাকায় তিনটি পৃথক দুর্ঘটনায় দুজন নিহত ও সাতজন আহত হয়েছে।

গত শুক্রবার সকাল ৯টা থেকে ১০টা পর্যন্ত এই প্রতিনিধি মহাসড়কের নাটোর মাদ্রাসা মোড় থেকে বনপাড়া গোলচত্বর পর্যন্ত ১৮ কিলোমিটার অংশ ঘুরে দেখেছেন। মাদ্রাসা মোড়ের টেলিফোন কার্যালয়ের সামনে রাস্তার কার্পেটিং পুরোটাই উঠে গেছে। সারা বছর ধরে এখানে পানি জমে থাকায় সড়কটি দেবে গেছে, সৃষ্টি হয়েছে অসংখ্য গর্তের। এখান থেকে কয়েক শ গজ যাওয়ার পর পূর্ব বাইপাস থেকে দত্তপাড়া পর্যন্ত সড়ক ভেঙেচুরে ছোট-বড় অসংখ্য গর্ত তৈরি হয়েছে। সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে সদর উপজেলার হয়বতপুর থেকে আহম্মদপুর সেতু পর্যন্ত। এই অংশে যানবাহন ঘণ্টায় ১০ থেকে ১২ কিলোমিটারের বেশি গতিতে যাতায়াত করতে পারছে না। সকালে বৃষ্টি হওয়ায় অধিকাংশ গর্ত পানিতে ভরে থাকায় গাড়ির চালকেরা খেয়াল করতে পারছিলেন না। ফলে আচমকা ঝাঁকুনিতে সড়কের এই অংশে ২৭টি বাস-ট্রাক বিকল হয়ে পড়ে থাকতে দেখা যায়। এলাকাবাসী ও দুর্ঘটনাকবলিত যানবাহনের চালকেরা জানান, শুক্রবার ভোর ৪টা থেকে সকাল ১০টা পর্যন্ত এসব বাস-ট্রাক বিকল হয়। এর মধ্যে দুটি ট্রাককে নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে কারবালা ও গলাকাটা নামক স্থানে রাস্তার পাশে খাদে পড়ে থাকতে দেখা যায়।

এর একটি ট্রাকের চালক মুনছুর রহমান বলেন, ‘প্রতি মুহূর্তে গাড়ি গর্তে পড়ার কারণে গাড়ি নিয়ন্ত্রণে রাখা যাচ্ছিল না। একপর্যায়ে স্টিয়ারিং ভেঙে আমার ট্রাক পাশের খাদে পড়ে যায়।’ খাদে পড়ে যাওয়া অপর একটি ট্রাকের চালকের সহকারী নাজমুল হোসেন জানান, তাঁরা পঞ্চগড় থেকে পাথর নিয়ে রূপপুর যাচ্ছিলেন। ট্রাকের চাকা বারবার গর্তে পড়ে যাওয়ায় এক্সেল ভেঙে গেছে। ফলে নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে ট্রাকটি রাস্তার পাশে পড়ে গেছে। ট্রাকটি উদ্ধার ও মেরামতে লক্ষাধিক টাকা খরচ হবে।’

বনপাড়া হাইওয়ে থানার ওসি সামসুন নূর বলেন, ‘সড়কটি জরাজীর্ণ হওয়ায় প্রতিদিন দুর্ঘটনা ঘটছে।’

সড়ক ও জনপথ বিভাগ নাটোরের নির্বাহী প্রকৌশলী আশরাফ আলী বেহাল মহাসড়কের নাটোর-বনপাড়া অংশের কথা স্বীকার করে বলেন, এই অংশের ১২ কিলোমিটার সড়ক মেরামতের জন্য জুন মাসের শুরুতে কার্যাদেশ দেওয়া হয়েছে। কিন্তু বৃষ্টির কারণে নয় কোটি টাকার এই কাজ শুরু করা যাচ্ছে না। বাকি অংশটুকুও সংস্কারের জন্য প্রস্তাব পাঠানো হয়েছে। অর্থ বরাদ্দ হলে দরপত্র আহ্বান করা হবে।