নারী শ্রমিকদের নিরাপদ কর্মপরিবেশের জন্য আচরণবিধি দরকার
নারী শ্রমিকদের জন্য অর্থনৈতিক ক্ষমতায়ন ও নিরাপত্তা খুব গুরুত্বপূর্ণ। এই দুটি বিষয়কে নিশ্চিত করতে একটি আচরণবিধি প্রণয়ন দরকার; যা পোশাক কারখানার নারী শ্রমিকদের সমতাপূর্ণ নিরাপদ কর্মপরিবেশ সৃষ্টির পাশাপাশি তাঁদের আত্মমর্যাদা বৃদ্ধি করবে।
আজ রোববার ‘পোশাক কারখানায় নারী শ্রমিকদের জন্য সমতাপূর্ণ এবং নিরাপদ কর্মপরিবেশ সৃষ্টিতে আচরণবিধি প্রণয়নে মাল্টি স্টেকহোল্ডার সংলাপ’ শীর্ষক আলোচনা সভায় বক্তারা এসব কথা বলেন। প্ল্যান ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশের সহায়তার রাজধানীর সিরডাপ মিলনায়তনে এর আয়োজন করে ইনসিডিন বাংলাদেশ।
বক্তারা বলেন, শ্রমিকেরা বিশেষকরে নারী শ্রমিকেরা বিভিন্ন সমস্যায় জর্জরিত। তাঁরা অর্থনীতির চাকা সচল রাখলেও নানাভাবে নির্যাতনের শিকার হন। আবার, চাকরি হারানোর ভয়ে কর্তৃপক্ষের কাছে সব সময় অভিযোগও দিতে পারে না। পাশাপাশি, তাঁদের টানা কয়েক ঘণ্টা কাজ করতে যায়, যা খুব পীড়াদায়ক।
এতে মূল বক্তব্য উপস্থাপন করেন ইনসিডিন বাংলাদেশের নির্বাহী পরিচালক এ কে এম মাসুদ আলী। তিনি বলেন, পোশাক কারখানার নারী শ্রমিকেরা কর্মস্থলের পাশাপাশি বসবাসস্থল এবং যাতায়াতের পথকেও অনিরাপদ বলে চিহ্নিত করেছেন। এ জন্য কর্মপরিবেশ নারীবান্ধব করার পাশাপাশি তাঁদের জীবনব্যবস্থা নিরাপদ করার প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে হবে। পাশাপাশি, শ্রমিকদের আত্ম উন্নয়নের সুযোগ দিয়ে কারখানা ব্যবস্থাপনায় কাজ করার সুযোগ দিতে হবে। এ জন্য একটি পরিপূর্ণ আচরণবিধি প্রয়োজন। তিনি আরও বলেন, শ্রম সম্পর্ক (শ্রমিক-ব্যবস্থাপক) উন্নয়নে গণমাধ্যমের একটি ভূমিকা আছে। এ জন্য গণমাধ্যমে নারী শ্রমিকদের নির্যাতনের চিত্রের পাশাপাশি তাঁদের সফলতা ও অর্জনের গল্পও তুলে ধরতে হবে। যা নারী শ্রমিকদের আত্মমর্যাদা বৃদ্ধি করে একটি পোক্ত সামাজিক অবস্থান নিশ্চিত করবে।
শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়-সম্পর্কিত সংসদীয় কমিটির সদস্য ইসরাফিল আলম বলেন, সংবিধান বা শ্রম আইনে নারী-পুরুষ শ্রমিকদের মধ্যে কোনো বৈষম্য নেই। কিন্তু সমাজের সৃষ্ট বিভিন্ন কারণে নারী শ্রমিকেরা বৈষম্যের শিকার হচ্ছেন। এ জন্য আমাদের দৃষ্টিভঙ্গি বদলাতে হবে। ইসরাফিল আলম আরও বলেন, পোশাক কারখানার মালিকদের মধ্যে যতটা ঐক্য আছে, কিন্তু শ্রমিক সংগঠনগুলোর মধ্যে নানা ধরনের কোন্দল। নিজেদের অধিকার প্রতিষ্ঠা ও অবস্থান শক্ত করতে শ্রমিক সংগঠনগুলোকে একসঙ্গে কাজ করতে হবে।
বিজিএমইএ এর সাবেক পরিচালক আরশাদ জামাল বলেন, ব্যক্তি পর্যায়ে বিনিয়োগ কমে যাচ্ছে। মানুষ এমন বিনিয়োগের দিকে ঝুঁকছে যেখানে শ্রমিকের বদলে স্বয়ংক্রিয় পদ্ধতিতে পণ্য উৎপাদন করা যায়। তাই আমাদের এটা নেই-সেটা নেই বলা বাদ দিয়ে মালিক (উদ্যোক্তা)-শ্রমিকদের একসঙ্গে কাজ করতে হবে; যাতে এই সেক্টরের উন্নতি হয়।
অনুষ্ঠানে বিভিন্ন সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তা, শ্রমিক সংগঠনের নেতা ও পোশাক শ্রমিকেরা উপস্থিত ছিলেন।