নিখোঁজের দুই বছর পর বাড়ি ফিরেছেন প্রতিবন্ধী শিপন

শিপন
শিপন

সুনামগঞ্জের মানসিক প্রতিবন্ধী এক যুবক শিপন আহাম্মেদ (২১) হারিয়ে যাওয়ার দুই বছর পর ফিরে পেয়েছেন তাঁর স্বজনদের। জয়পুরহাটের আক্কেলপুর পৌরশহরে রেলস্টেশন সড়কের পোল্ট্রি ফিড ব্যবসায়ী শাহিন গতকাল শুক্রবার শিপনকে তাঁর বাবা ও চাচার হাতে তুলে দিয়েছেন। শিপন আট মাস ধরে আক্কেলপুরেই অবস্থান করছিলেন। স্থানীয় ব্যবসায়ী শাহিন তাঁর দেখাশোনা করছিলেন।
শিপনের বাড়ি সুনামগঞ্জের জগন্নাথপুর উপজেলার নোয়াগাও গ্রামে। তিনি ওই গ্রামের দরিদ্র কৃষক মাহমুদ আলীর নয় সন্তানের মধ্যে তৃতীয়। দীর্ঘদিন পর গতকাল বাবা ও চাচাকে কাছে পেয়ে আবেগাপ্লুত হয়ে পড়েন শিপন। তাঁকে পরিবারের সদস্যদের কাছে পৌঁছে দিতে সহযোগিতা করেন সুনামগঞ্জের জগন্নাথপুর উপজেলার প্রথম আলোর সাবেক প্রতিনিধি অমিত দেব ও জয়পুরহাটের আক্কেলপুর প্রতিনিধি।
আক্কেলপুর পৌরশহরের রেলস্টেশন এলাকার স্থানীয় ব্যবসায়ীরা বলেন, শিপন চলতি বছরের এপ্রিল মাসে এখানে আসেন। দিনে ঘোরাঘুরি করে রাতে আক্কেলপুর প্রেসক্লাবসংলগ্ন ছমির উদ্দিন স্মৃতি মুক্তমঞ্চে ঘুমাতেন। বাসা-বাড়িতে গিয়ে খাবার চেয়ে খেতেন। নাম-ঠিকানা কিছুই বলতে পারতেন না। চলতি মাসে হঠাৎ করেই তিনি অসুস্থ হয়ে পড়েন। স্থানীয় পোলট্রি ফিড ব্যবসায়ী শাহিন তাঁর চিকিৎসা করান। এরপর থেকে শিপন ব্যবসায়ী শাহিনের আশ্রয়েই ছিলেন। সুস্থ হয়ে ওঠার পর থেকে শিপন তাঁর নাম-ঠিকানা বলতে পারছিলেন।
ব্যবসায়ী শাহিন গত বুধবার ছেলেটিকে সঙ্গে নিয়ে প্রথম আলোর স্থানীয় প্রতিনিধি রবিউল ইসলামের কাছে আসেন। তিনি শিপনের নাম ও ঠিকানা জানার পর সুনামগঞ্জের জগন্নাথপুর উপজেলার প্রথম আলোর সাবেক প্রতিনিধি অমিত দেবকে ফোন করে ঘটনাটি বলেন। অমিত ওই ঠিকানায় যোগাযোগ করে শিপনের পরিবারের সন্ধান পান। সেখান থেকে ছেলেটির বাবা প্রথম আলোর আক্কেলপুর প্রতিনিধির মুঠোফোনে ভিডিও কল করে তাঁর হারিয়ে যাওয়া ছেলেকে শনাক্ত করেন। এরপর গতকাল সকালে সিলেট থেকে ছেলেটির বাবা ও চাচা আক্কেলপুরে ছুটে আসেন। ব্যবসায়ী শাহিন স্থানীয় সাংবাদিকদের উপস্থিতিতে শিপনকে তাঁর স্বজনদের হাতে তুলে দেন।
শিপন আহাম্মদের বাবা মাহমুদ আলী বলেন, তাঁর ছেলে শিপন মানসিক প্রতিবন্ধী। তিনি ২০১৪ সালের নভেম্বরে সিলেট থেকে হারিয়ে যান। অনেক খোঁজাখুঁজির পরও তাঁকে না পেয়ে ওই সময় সিলেট কোতোয়ালি থানায় সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করেন তিনি। ছেলেকে কখনো আর ফিরে পাবেন, এমন আশা করেননি বলে জানান বাবা মাহমুদ আলী।
ব্যবসায়ী শাহিন হোসেন বলেন, শিপন আট মাস ধরে আক্কেলপুরে থাকলেও নাম-ঠিকানা কিছুই বলতে পারছিলেন না। অসুস্থ হওয়ার পর তিনি তাঁর চিকিৎসা করান। এরপর সুস্থ হয়ে শিপন তাঁর নাম-ঠিকানা মনে করতে পারেন।
বিদায় নেওয়ার সময় শিপন আহাম্মেদ বলেন, বাবার সঙ্গে বাড়িতে ফিরতে পেরে তাঁর খুব ভালো লাগছে।