নিজামীর বিরুদ্ধে ১৬ অভিযোগ
জামায়াতে ইসলামীর আমির মতিউর রহমান নিজামীর বিরুদ্ধে মুক্তিযুদ্ধকালে বুদ্ধিজীবী হত্যাকাণ্ডে সংশ্লিষ্টতাসহ মানবতাবিরোধী অপরাধের ১৬টি অভিযোগ রয়েছে। ২০১২ সালের ২৮ মে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১ তাঁর বিরুদ্ধে এই ১৬টি অভিযোগ গঠন করেন। এর মধ্য দিয়ে তাঁর বিরুদ্ধে মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলার বিচার শুরু হয়।
নিজামীর বিরুদ্ধে প্রথম অভিযোগ, ১৯৭১ সালের ৪ জুন পাবনা জেলা স্কুলের প্রধান শিক্ষক মাওলানা কছিমুদ্দিনকে অপহরণ করে নূরপুর পাওয়ার হাউসে পাকিস্তানি সেনাদের ক্যাম্পে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে নিজামীর উপস্থিতিতে তাঁকে নির্যাতন এবং ১০ জুন ইছামতী নদীর পাড়ে নিয়ে হত্যা করা হয়।
দ্বিতীয় অভিযোগ, একাত্তরের ১০ মে নিজামীর পূর্বপরিকল্পনা অনুসারে পাবনার দুটি গ্রামের প্রায় সাড়ে ৪০০ মানুষকে হত্যা ও ৩০-৪০ জন নারীকে ধর্ষণ করে পাকিস্তানি সেনা ও রাজাকাররা।
তৃতীয় অভিযোগ, ১৯৭১ সালের মে মাসের শুরু থেকে ১৬ ডিসেম্বর পর্যন্ত রাজধানীর মোহাম্মদপুরের শারীরিক শিক্ষা কলেজে পাকিস্তানি সেনা, রাজাকার ও আলবদর বাহিনীর ক্যাম্প ছিল। নিজামী ওই ক্যাম্পে নিয়মিত যাতায়াত করতেন ও মানবতাবিরোধী অপরাধের ষড়যন্ত্র করতেন।
চতুর্থ অভিযোগ, একাত্তরের ৮ মে নিজামী, রাজাকার ও আলবদর বাহিনীর সদস্যরা পাবনার করমজা গ্রামের নয়জনকে হত্যা করে এবং ঘরবাড়িতে আগুন দেয়। করমজা গ্রামের হাবিবুর রহমানকে নিজামীর পরিকল্পনায় হত্যা করা হয়।
পঞ্চম অভিযোগ, ১৯৭১ সালের ১৬ এপ্রিল নিজামীর সহযোগিতায় পাকিস্তানি সেনারা ঈশ্বরদী উপজেলার আড়পাড়া ও ভূতের বাড়ি গ্রামে ২১ জনকে হত্যা করে এবং ঘরবাড়ি লুণ্ঠন ও অগ্নিসংযোগ করে।
ষষ্ঠ অভিযোগ, ২৭ নভেম্বর নিজামীর নির্দেশে পাবনার ধুলাউড়ি গ্রামে রাজাকার ও পাকিস্তানি সেনারা অভিযান চালিয়ে ৫২ জন নারী-পুরুষ ও শিশুকে হত্যা করে।
সপ্তম অভিযোগ, ৩ নভেম্বর নিজামীর দেওয়া তথ্য অনুসারে বৃশালিখা গ্রামের সোহরাব আলীকে পাকিস্তানি সেনারা আটক ও হত্যা করে।
অষ্টম অভিযোগ, ৩০ আগস্ট নিজামী ঢাকার নাখালপাড়ার পুরোনো এমপি হোস্টেলে গিয়ে আটক রুমী, বদি, জালাল, আলতাফ মাহমুদকে হত্যার জন্য পাকিস্তানি সেনাদের প্ররোচনা দেন।
নবম অভিযোগ, নিজামীর দেওয়া তথ্য অনুসারে পাকিস্তানি সেনারা পাবনার বৃশালিখা গ্রাম চারদিক থেকে ঘিরে ৭০ জনকে হত্যা করে এবং ৭২টি বসতবাড়ি পুড়িয়ে দেয়।
দশম অভিযোগ, মুক্তিযুদ্ধকালে পাবনার সোনাতলা গ্রামের মুক্তিযোদ্ধা অনিল চন্দ্র কুণ্ডু প্রাণ বাঁচাতে ভারতে চলে যান। নিজামীর নির্দেশে রাজাকাররা অনিলের বাড়ি আগুনে জ্বালিয়ে দেয়।
১১ থেকে ১৪ নম্বর অভিযোগে নিজামীর বিরুদ্ধে মানবতাবিরোধী অপরাধে উসকানি দেওয়ার অভিযোগ আনা হয়েছে। এগুলোতে বলা হয়, একাত্তরের ৩ আগস্ট চট্টগ্রাম মুসলিম ইনস্টিটিউটে ইসলামী ছাত্রসংঘের সভায়, ২২ আগস্ট ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইসলামিক একাডেমি হলে আল মাদানীর স্মরণসভায়, ৮ সেপ্টেম্বর প্রতিরক্ষা দিবস উপলক্ষে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কলাভবনের সামনে ছাত্রসংঘের সভায় এবং ১০ সেপ্টেম্বর যশোরে রাজাকারদের প্রধান কার্যালয়ে এক সুধী সমাবেশে নিজামী উসকানিমূলক বক্তব্য দেন।
১৫তম অভিযোগে বলা হয়েছে, একাত্তরের মে মাস থেকে ১৬ ডিসেম্বর পর্যন্ত সাঁথিয়া পাইলট উচ্চবিদ্যালয়ের রাজাকার ক্যাম্পে নিজামী নিয়মিত যাতায়াত করতেন এবং রাজাকার সামাদ মিয়ার সঙ্গে মানবতাবিরোধী অপরাধের ষড়যন্ত্র করতেন।
১৬তম অভিযোগ হলো, ১৯৭১ সালের ডিসেম্বরে বিজয়ের উষালগ্নে দেশের বুদ্ধিজীবীদের ওপর ব্যাপক গণহত্যা চালায় আলবদর বাহিনী। ছাত্রসংঘ ও আলবদর বাহিনীর প্রধান হিসেবে ওই হত্যাকাণ্ডের দায় নিজামীর ওপর পড়ে।