নিজের সম্পদ বেহাত, হাজার কোটি টাকায় জমি কিনছে রেল

পিপিপি প্রকল্প ইজারার নামে রেলের দামি জমি অন্যরা ভোগ করছে। সারা দেশে ১৩ হাজার একরের বেশি জমি ইজারায়। বেদখলে সাড়ে তিন হাজার একর।

কারওয়ান বাজারে রেলের জায়গায় অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ অভিযান পরিচালনা করে রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ
ফাইল ছবি

মিলেনিয়াম হোল্ডিংস লিমিটেড নামে একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানকে ঢাকার কুড়িলে প্রায় দুই একর জমি বরাদ্দ দিয়েছে রেলওয়ে। বর্তমানে বাজারে যার মূল্য শতকোটি টাকার বেশি। প্রতিষ্ঠানটি সেখানে পাঁচতারা হোটেল ও শপিং মল নির্মাণ করবে। প্রথমত, এটি রেলের দামি জমি। দ্বিতীয়ত, এটি জলাধার। শুধু মিলেনিয়াম হোল্ডিংস নয়, সারা দেশে এভাবে রেলের জমি বেসরকারি খাতে ছেড়ে দেওয়া হচ্ছে নানা ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানের হাতে। এর বাইরে এককের পর একর রেলের জমি অবৈধভাবে দখল করে ভোগ করছে প্রভাবশালীরা।

একদিকে রেল নিজস্ব জমি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের হাতে ছেড়ে দিচ্ছে, অবৈধ দখলে থাকা জমিও উদ্ধার করতে পারছে না। অন্যদিকে নিজেদের অবকাঠামো তৈরির জন্য ব্যক্তিমালিকানাধীন জমি কিনছে রেল কর্তৃপক্ষ। সংস্থাটি এরই মধ্যে প্রায় ছয় হাজার কোটি টাকার জমি কেনার দুটি প্রকল্প হাতে নিয়েছে।

রেলের পড়ে থাকা কিংবা অবৈধ দখলে থাকা জমি চাইলে এর সদ্ব্যবহার সম্ভব। অথচ নিজেদের জমি ব্যবহার করে নতুন প্রকল্প বাস্তবায়ন করা যায় কি না, এই বিষয়ে রেল অতীতে কোনো সমীক্ষা করেনি। সরকারের রাজস্ব খাতের টাকায় নতুন জমি কেনার প্রকল্প নেওয়া হচ্ছে। এর অর্থ হচ্ছে কৃষিপ্রধান দেশের মানুষ নতুন করে আরও কিছু কৃষিজমি হারাতে যাচ্ছে। অথচ ব্যক্তিমালিকানাধীন এসব জমিতে চাষবাস হচ্ছে। কারও কারও হয়তো সামান্য কিছু জমি সম্বল। সরকারি প্রকল্প বাস্তবায়নের স্বার্থে তাঁকে বাধ্য হয়ে তা ছেড়ে দিতে হবে।

এই প্রক্রিয়ায় চট্টগ্রামে ইতিমধ্যে দুটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানকে জমি বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। এর মধ্যে সিআরবি এলাকায় হাসপাতাল নির্মাণের জন্য জমি দেওয়ার বিরোধিতা করে স্থানীয় মানুষ ও পরিবেশবাদীরা আন্দোলনে নেমেছেন। আরেকটি জমি সিআরবির পাশে হোটেল, শপিং মল বানানোর জন্য বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে।

রাজধানীর কুড়িলে হোটেল–শপিং মলের জন্য বরাদ্দ দেওয়া জমির পরিমাণ ১ দশমিক ৮৪ একর। এর এক পাশে রেললাইন এবং উড়ালসড়কের খিলক্ষেত–প্রগতি সরণি অংশ। অন্যপাশে নির্মাণাধীন ঢাকা উড়ালসড়ক। এখন সেখানে খিলক্ষেত, নিকুঞ্জসহ আশপাশের এলাকার বৃষ্টির পানি নিষ্কাশিত হয়। এখন জলাশয় ভরাটের কাজ চলছে। এর মধ্যে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের মেয়র আতিকুল ইসলাম গত ২৮ জানুয়ারি অভিযানে গিয়ে ইজারার কথা জানতে পারেন। পরে মিলেনিয়াম হোল্ডিংসের একটি সাইনবোর্ড ভেঙে দেয় সিটি করপোরেশন।

বিএনপি–জামায়াত জোট সরকারের আমলে হাতিরঝিলে হোটেল নির্মাণের জন্য মিলেনিয়াম হোল্ডিংসকে ১০ কোটি টাকার বিনিময়ে বিপুল পরিমাণ জমি বরাদ্দ দেওয়া হয়েছিল। সেখানে পরে বিজিএমইএ ভবন নির্মাণ এবং হাতিরঝিল প্রকল্প বাস্তবায়নের কারণে ওই বরাদ্দ বাতিল হয়। সম্প্রতি তাদের কুড়িলে জমি বরাদ্দ দেওয়া হয়।

অন্যদিকে গাজীপুরের ধীরাশ্রমে অভ্যন্তরীণ কনটেইনার টার্মিনাল (আইসিডি) নির্মাণে ২২২ একর জমি অধিগ্রহণ করার প্রকল্পটি রেল মন্ত্রণালয়ের অনুমোদন পেয়েছে। এখন এটি পরিকল্পনা কমিশনের অনুমোদনের অপেক্ষায় আছে। এতে মোট ব্যয় ধরা হয়েছে ৩ হাজার ৪৭১ কোটি টাকা।এই দুই প্রকল্পে মোট ব্যয় হবে ৬ হাজার ১৫৯ কোটি টাকা।

এই থেকে বোঝা যাচ্ছে, রেল তাদের জমি বেসরকারি কোম্পানিকে দেওয়ার আগে এলাকার মানুষের সুযোগ-সুবিধার কথা ভাবেনি। অথচ এই জমি কোনো এক সময় সাধারণ মানুষের কাছ থেকেই অধিগ্রহণ করেছে রেল।

মিলেনিয়াম হোল্ডিংসের বাইরে ২০১৪ সালের দিকে রেলের জমিতে হাসপাতাল, শপিং মল, পাঁচ তারকা হোটেল, মেডিকেল কলেজ, প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়, বহুতল বাণিজ্যিক ভবন নির্মাণ করে ব্যবসায় নামার উদ্যোগ নেয় রেলওয়ে। সরকারি-বেসরকারি যৌথ বিনিয়োগের (পিপিপি) এসব প্রকল্প বাস্তবায়ন করা হচ্ছে।

ইতিমধ্যে এ ধরনের ১২টি প্রকল্প সরকারের ক্রয়সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটির নীতিগত অনুমোদন পেয়েছে। চট্টগ্রামে একটি হাসপাতাল ও একটি শপিং মল নির্মাণে বেসরকারি প্রতিষ্ঠান নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। কমলাপুর রেলস্টেশন ঘিরে মাল্টিমোডাল হাব প্রকল্পে আগ্রহ দেখিয়ে জাপানি একটি কোম্পানি প্রাথমিক নকশা করেছে। বাকি প্রকল্পে বিনিয়োগকারী নিয়োগের প্রক্রিয়া চলছে। এর বাইরে আরও তিনটি প্রকল্প অনুমোদনের অপেক্ষায় রয়েছে।

এসব প্রকল্প বাস্তবায়নে ঢাকা-চট্টগ্রামসহ বড় শহরের প্রাণকেন্দ্রে প্রায় ২০০ একর নিষ্কণ্টক জমি চিহ্নিত করা হয়েছে। যার বাজারমূল্য কয়েক হাজার কোটি টাকা। প্রকল্প নেওয়ার সময় ধারণা দেওয়া হয়েছে—জমি দেবে রেল কর্তৃপক্ষ, আর অবকাঠামো বানাবে বেসরকারি প্রতিষ্ঠান। যৌথ মালিকানার কথা বলা হলেও শেষ পর্যন্ত এই জমি রেলের মালিকানায় থাকবে বলে কেউ বিশ্বাস করে না।

এই প্রক্রিয়ায় চট্টগ্রামে ইতিমধ্যে দুটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানকে জমি বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। এর মধ্যে সিআরবি এলাকায় হাসপাতাল নির্মাণের জন্য জমি দেওয়ার বিরোধিতা করে স্থানীয় মানুষ ও পরিবেশবাদীরা আন্দোলনে নেমেছেন। আরেকটি জমি সিআরবির পাশে হোটেল, শপিং মল বানানোর জন্য বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে।

রেলের নিজের জমি বেহাত

রেল কর্তৃপক্ষ দামি জমি ঘোষণা দিয়ে বেসরকারি প্রতিষ্ঠান ও প্রভাবশালীদের দেওয়ার প্রতিযোগিতায় নেমেছে। এর বাইরে সারা দেশে নীরবে কয়েক হাজার একর জমি অনানুষ্ঠানিকভাবে প্রভাবশালীদের দখলে রয়েছে। রেল কখনো কখনো উদ্ধার অভিযানের নাম দিয়ে লোকদেখানো তৎপরতা চালায়। আসলে দখলদারদের চাপ প্রয়োগ করে তাদের কাছ থেকে সুবিধা আদায় করাই এসব অভিযানের লক্ষ্য। নতুবা বছরের পর বছর অভিযান চালিয়েও অবৈধ জমি উদ্ধারে কোনো অগ্রগতি নেই কেন?

সরকারি নথি বলছে, সারা দেশে রেলওয়ের মোট জমি আছে প্রায় ৬২ হাজার একর। এর মধ্যে কাগজে–কলমে দখলে আছে ৫৮ হাজার ৬০৬ দশমিক ৫৭ একর। প্রায় ৩ হাজার ৬১৪ একর জমি বেদখলে।

তবে রেলের যেসব কর্মকর্তা জমিজমা সম্পর্কে খোঁজখবর রাখেন, তাঁদের ধারণা, অবৈধ দখলে থাকা জমির পরিমাণ আরও বহুগুণ বেশি। রেলের ভূসম্পত্তি বিভাগ টাকা খরচ করে অবৈধ দখলে থাকা জমি উদ্ধার করে নিজস্ব দখলে আছে বলে দেখায়। অবৈধ দখলদারদের কাছ থেকে আর্থিক সুবিধা নিয়ে দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তারা এগুলো নিজেদের দখলে থাকার কথা বলেন। আদতে রেলের কাজে লাগছে না বলে কেউ এসব জমির খোঁজ রাখেন না।

রেলের হিসাবে, সংস্থাটির মোট জমির মধ্যে ব্যবহৃত হচ্ছে ৩০ হাজার ৭৬৮ দশমিক ৫১ একর। আরও ১৩ হাজার একরের বেশি জমি দীর্ঘ ও স্বল্প মেয়াদে বিভিন্ন প্রভাবশালীর কাছে ইজারা দেওয়া হয়েছে। এর বাইরে ১৮ হাজার একরের বেশি জমি অব্যবহৃত। রেলের সূত্র বলছে, অব্যবহৃত জমির বেশির ভাগই অবৈধ দখলে আছে। এর মধ্যে কৃষিজমির পরিমাণই বেশি। ঢাকা, চট্টগ্রামসহ বড় শহরগুলোয় রেলের অব্যবহৃত জমি আছে। শহরের বাইরে রেলের বিস্তীর্ণ কৃষি ও জলাভূমিও আছে। ভবিষ্যতে প্রয়োজন হতে পারে, এই বিবেচনায় এসব জমি অধিগ্রহণ করা হয়েছিল।

ভুক্তভোগী এবং রেলেরও অনেক কর্মকর্তা বলেন, চাষি, কৃষক কিংবা গরিব মানুষের জমি অধিগ্রহণ করার পর এখন তা ফেলে রেখে প্রভাবশালীদের ভোগ করার সুযোগ দেওয়া হচ্ছে। রেলের যদি এসব জমি কাজেই না লাগে তাহলে তা এর মূল মালিকের কাছে ফিরিয়ে দিতে পারে। এর মাধ্যমে জমিগুলোর সদ্ব্যবহার হবে। কৃষি উৎপাদনও বাড়বে।

গাজীপুরে জমি কেনার প্রকল্প

নিজের জমি অন্যের দখলে রেখে নতুন করে জমি কিনতে নেওয়া দুটি প্রকল্পের একটি হচ্ছে—গাজীপুরের কালীগঞ্জের দাড়িয়াপাড়ায়। সেখানে রেলের ওয়ার্কশপ ও ট্রেনিং ইনস্টিটিউট করার লক্ষ্যে ৩৩১.৩১ একর জমি অধিগ্রহণ করা হবে। গত বছর ১২ আগস্ট রেলভবনে এই প্রকল্প প্রস্তাবের (ডিপিপি) ওপর সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে। পরে তা রেল মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছে। এই প্রকল্পে ব্যয় ধরা হয়েছে ২ হাজার ৬৮৮ কোটি টাকা।

জমি কেনার পর সেখানে ব্রডগেজ ইঞ্জিন, কোচ ও ওয়াগন মেরামতের কারখানা নির্মাণ করা হবে। পর্যায়ক্রমে সেখানে নির্মাণ করা হবে রেললাইন মেরামতের কারখানা এবং রেলওয়ে প্রশিক্ষণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউট। এসব কার্যক্রমের জন্য পরে আলাদা প্রকল্প নেওয়া হবে।

অন্যদিকে গাজীপুরের ধীরাশ্রমে অভ্যন্তরীণ কনটেইনার টার্মিনাল (আইসিডি) নির্মাণে ২২২ একর জমি অধিগ্রহণ করার প্রকল্পটি রেল মন্ত্রণালয়ের অনুমোদন পেয়েছে। এখন এটি পরিকল্পনা কমিশনের অনুমোদনের অপেক্ষায় আছে। এতে মোট ব্যয় ধরা হয়েছে ৩ হাজার ৪৭১ কোটি টাকা।এই দুই প্রকল্পে মোট ব্যয় হবে ৬ হাজার ১৫৯ কোটি টাকা।

রেলওয়ের ভূসম্পত্তি বিভাগের তথ্যমতে, ঢাকায় রেলের জমি আছে ১ হাজার ৩০০ একর। গাজীপুরে রেলের জমির পরিমাণ ১ হাজার ২২৮ একর। নরসিংদীতে ১ হাজার ৫৪০ একর। এ ছাড়া নীলফামারীর সৈয়দপুরে রেলের প্রায় ৮০০ একর জমি অবৈধ দখলে আছে। রাজবাড়ীতেও কয়েক শ একর জমি মানুষ অবৈধভাবে ভোগ করছেন।

সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা বলছেন, ওই দুটি নতুন প্রকল্পের জন্য গাজীপুরের আশপাশে রেলের জমিতে প্রকল্প বাস্তবায়ন হয়তো সম্ভব। নতুবা যেখানে পর্যাপ্ত জমি আছে, সেখানে এসব প্রকল্প বাস্তবায়ন করা যায়। কিন্তু সেটা না করে রেলের আগ্রহ নতুন প্রকল্প। আর প্রকল্প মানেই বিদেশভ্রমণ, কেনাকাটা, প্রশিক্ষণের নামে খরচের লম্বা খাতা।

জমি কেনার প্রকল্প নয়–ছয় জেনে এ ধরনের প্রকল্পে বিদেশি অর্থায়ন পাওয়া যায় না। এ জন্য পুরো টাকা রাজস্ব খাত থেকে খরচ করার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। অথচ রাজস্ব বাজেটের স্বল্পতায় রেললাইন, ইঞ্জিন-কোচ মেরামতই ঠিকমতো হচ্ছে না।

গাজীপুরেই কারখানা ও গবেষণা ইনস্টিটিউট হতে হবে—এমন কোনো বাধ্যবাধকতা নেই। অভ্যন্তরীণ কনটেইনার টার্মিনাল গাজীপুরের ধীরাশ্রমে করার বিষয়ে অনেক আগে থেকেই কাজ চলছে। রেলের অব্যবহৃত জমি কোথায় কী পরিমাণ আছে, সেটা ব্যবহার করা যায় কি না, এই বিষয়ে কেন সমীক্ষা করা হলো না? জমি কেনার পর কারখানা ও গবেষণাকেন্দ্র নির্মাণ করতে বিপুল টাকা লাগবে। কখন প্রকল্প হবে, এর কোনো নিশ্চয়তা নেই। এ সময় এসব জমি রেলের যাত্রীদের কোনো কাজেই লাগবে না। ফলে হাজার কোটি টাকায় কেনা জমি আবার অবৈধ দখলে চলে যাবে না—এর নিশ্চয়তা কে দেবে?

কারখানার জন্য জমি কেনার প্রকল্পের যৌক্তিকতা সম্পর্কে ডিপিপিতে বলা হয়েছে, রেলওয়ের মহাপরিকল্পনায় ২০৪৫ সাল নাগাদ রেলের কনটেইনার পরিবহনের পরিমাণ ৪ থেকে ৩০ শতাংশে উন্নীত করার লক্ষ্যমাত্রা ঠিক করা হয়েছে। ২০৭৫ সাল নাগাদ রেলের অধীনে ১১ হাজারের বেশি ব্রডগেজ ইঞ্জিন, কোচ ও মালবাহী ওয়াগন থাকবে। কিন্তু পূর্বাঞ্চলে ব্রডগেজ ইঞ্জিন-কোচ মেরামতের ব্যবস্থা নেই। এ জন্য মেরামতের জন্য কারখানা দরকার।

অন্যদিকে চট্টগ্রাম বন্দর থেকে প্রায় ৮০ শতাংশ কনটেইনারের গন্তব্য ঢাকামুখী। এর মাত্র ১০ শতাংশ রেলপথে আসে। এই কনটেইনারের ৩০ শতাংশ রেলের মাধ্যমে পরিবহন নিশ্চিত করার বিষয়টি রেলের মহাপরিকল্পনায় আছে। এ জন্যই অভ্যন্তরীণ কনটেইনার টার্মিনাল প্রকল্পের জমি দরকার।

রেলে এখন ৪১টি প্রকল্প চলছে। এসব প্রকল্পের ব্যয় ধরা হয়েছে ১ লাখ ৪২ হাজার কোটি টাকা। এর মধ্যে ৯১ হাজার কোটি টাকার বেশি বিদেশি ঋণ। আরও আটটি প্রকল্প অনুমোদনের অপেক্ষায় আছে।

সব প্রকল্প দরকারি কি না, এটা নিয়ে বিতর্ক আছে। জমি কেনার প্রকল্পগুলো এমনই অদরকারি প্রকল্প হিসেবে ব্যয়ের খাত বাড়াচ্ছে কি না, তা ভেবে দেখার দরকার।

দখল, উদ্ধার, আবার দখল

২০১১ সালে রেলপথ মন্ত্রণালয় গঠনের পর মন্ত্রণালয়ে দায়িত্ব পালন করা চারজন মন্ত্রী বেদখল জমি উদ্ধারে প্রতিশ্রুতি দেন। কিন্তু কাজের কাজ কিছু হয়নি।

রেলওয়ে ভূসম্পত্তি বিভাগের হিসাবে, জমি উদ্ধার কিংবা অবৈধ স্থাপনা সরানোর জন্য রেলের নিজস্ব কোনো যান-সরঞ্জাম নেই। উদ্ধার অভিযানের জন্য বুলডোজার ও সরঞ্জাম ভাড়া আনা হয়। দিনে একেকটি বুলডোজার (ছোট-বড় সাইজ) ৩০ হাজার থেকে ৪০ হাজার টাকা পর্যন্ত ভাড়া দিতে হয়। তা ছাড়া উচ্ছেদ অভিযানের জন্য শ্রমিক নিয়োগ করতে হয়।

অবৈধ জমি উদ্ধারের নামে সাজসরঞ্জাম নিয়ে কদিন পরপরই অভিযানে যায় রেল কর্তৃপক্ষ। কিন্তু উদ্ধার হওয়া জমি আয়ত্তে রাখতে পারে না।

রেলের হিসাবে, ২০১৫ থেকে ২০২০ সাল পর্যন্ত সংস্থাটি সারা দেশে ৬৩২টি অবৈধ দখলবিরোধী অভিযান পরিচালনা করে। এ সময় সোয়া লাখ স্থাপনা উচ্ছেদ করা হয়। এতে ব্যয় হয় ১ কোটি ৮৭ লাখ টাকা। যদিও কোটি টাকা খরচ করে উদ্ধার দেখানো এসব জমি পুনরায় বেদখলে চলে যাচ্ছে।