নিজ গ্রামে চিত্রশিল্পী মাহমুদুল হককে স্মরণ

বাগেরহাটের রামপাল উপজেলার শ্রীফলতলা গ্রামে চিত্রশিল্পী মাহমুদুল হকের স্মরণসভায় আলোচকেরা
ছবি: সংগৃহীত

শুধু একজন খ্যাতিমান চিত্রশিল্পী হিসেবে নয়, ব্যক্তিমানুষ হিসেবেও অনন্য ছিলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা অনুষদের সাবেক ডিন, জাতীয় জাদুঘরের সাবেক মহাপরিচালক মাহমুদুল হক। নিজের গ্রামকেও তিনি চেয়েছেন শিক্ষা ও প্রযুক্তিতে এগিয়ে নিতে। আজ সোমবার মাহমুদুল হকের নিজ গ্রাম বাগেরহাটের রামপাল উপজেলার শ্রীফলতলায় অনুষ্ঠিত এক স্মরণসভায় বক্তারা এসব কথা বলেন।

শ্রীফলতলা গ্রামে তথ্যপ্রযুক্তি নিয়ে কাজ করা বেসরকারি সংস্থা আমাদের গ্রাম প্রকল্প স্মরণসভার আয়োজন করে। আমাদের গ্রাম প্রকল্পের মূল সংস্থা বাংলাদেশ ফ্রেন্ডশিপ এডুকেশন সোসাইটির প্রতিষ্ঠাতা সভাপতিও ছিলেন মাহমুদুল হক।

স্মরণসভায় স্থানীয় আলোচকদের সঙ্গে ভার্চ্যুয়ালি যোগ দেন বিশিষ্টজনেরা। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা অনুষদের ডিন চিত্রশিল্পী অধ্যাপক নিসার হোসেন বলেন, ‘আমি মাহমুদুল হকের সরাসরি ছাত্র। শিল্পের জন্য বা ভালো কাজের জন্য তিনি কখনো পক্ষপাতিত্ব করতেন না। সব শিল্পীর সঙ্গেই ছিল তাঁর সখ্য। তাঁকে কোনো সংকীর্ণ দৃষ্টিতে বিচার করা যাবে না।’

শিল্পসমালোচক মঈনুদ্দিন খালেদ বলেন, মাহমুদুল হক অনেকটা নিভৃতে চলে গিয়েছিলেন। চিত্রশিল্পী হিসেবে তাঁর যথাযথ মূল্যায়ন আজও হয়নি। চিত্রশিল্পী মাহমুদুল হকের স্মৃতি ধরে রাখার জন্য স্মারকগ্রন্থ প্রকাশ করা প্রয়োজন।

স্মরণসভায় মাহমুদুল হকের জীবন ও শিল্পকর্ম নিয়ে ভার্চ্যুয়ালি আলোচনা করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা অনুষদের অধ্যাপক কার্টুনিস্ট শিশির ভট্টাচার্য্য, রবীন্দ্রসংগীতশিল্পী লিলি ইসলাম, কলকাতা থেকে শরদিন্দু ব্যানার্জি, কৃষ্ণা ব্যানার্জি, জাপান দূতাবাসের কর্মকর্তা কাজী বুশরা আহম্মেদ, রামপাল উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. কবীর হোসেন, প্রথম আলোর সাংবাদিক পল্লব মোহাইমেন ও বিএফইসের পরিচালনা পর্ষদের সদস্য মুসা ইব্রাহীম।

শ্রীফলতলায় আমাদের গ্রাম প্রকল্পের রিজাউল করিম সভাকক্ষে অনুষ্ঠিত এই স্মরণসভায় সভাপতিত্ব করেন মাহমুদুল হকের ছোট ভাই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা অনুষদের অধ্যাপক চিত্রশিল্পী মোস্তাফিজুল হক। তিনি বলেন, একদিকে ঢাকায় চিত্রশিল্পীদের যেকোনো সমস্যা সমাধানে এগিয়ে যেতেন মাহমুদুল হক, অন্যদিকে নিজের গ্রামে শিক্ষার আলো ছড়িয়ে দিতে কাজ করে গেছেন।

সভায় আমাদের গ্রাম প্রকল্পের পরিচালক রেজা সেলিম বলেন, আজকের যে ডিজিটাল বাংলাদেশ, তার আঁতুড়ঘর ছিল এই শ্রীফলতলা গ্রাম। মাহমুদুল হকের অনুপ্রেরণায় ১৯৯৫ সাল থেকে শ্রীফলতলায় আমাদের গ্রাম প্রকল্পের কাজ শুরু হয়। গ্রামে কম্পিউটার প্রশিক্ষণের ধারণার শুরুও তখন থেকে।

চিত্রশিল্পী মাহমুদুল হক
ছবি: সংগৃহীত

স্মরণসভায় আরও অংশ নেন আইনজীবী মো. ফজলুর রহমান, সমাজসেবী আহম্মেদ শেখ, শেখ বজলুর রহমান, আমাদের গ্রাম প্রকল্পের যুগ্ম পরিচালক স্বপন সেনগুপ্ত, খান জাহিদ হোসেন, তৌফিকুল ইসলাম, ডা. আইরিন আক্তার, কাকলী রানী হালদারসহ আমাদের গ্রাম প্রকল্পের কর্মীরা।

করোনায় আক্রান্ত হয়ে ১১ জানুয়ারি মারা যান মাহমুদুল হক। তাঁর জন্ম ১৯৪৫ সালে রামপালের শ্রীফলতলা গ্রামে। তিনি ১৯৬৮ সালে তৎকালীন সরকারি চারু ও কারুকলা কলেজ (এখন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা অনুষদ) থেকে বিএফএ এবং পরে জাপানের সুকুবা বিশ্ববিদ্যালয় এমএফএ ডিগ্রি লাভ করেন। ছাপচিত্রের ওপর জাপান থেকে দুই বছরের উচ্চতর প্রশিক্ষণ গ্রহণ করেন।

মাহমুদুল হক ১৯৬৯ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা ইনস্টিটিউটের শিক্ষক হিসেবে কর্মজীবন শুরু করেন। ২০১০ সালে তিনি অবসর গ্রহণ করেন। দেশে-বিদেশে শিল্পী মাহমুদুল হকের শিল্পকর্মের ৩৯টি একক এবং অনেক যৌথ প্রদর্শনী অনুষ্ঠিত হয়েছে। তিনি ২০১৯ সালে জাপানের সর্বোচ্চ বেসামরিক পুরস্কার অর্ডার অব দ্য রাইজিং সান লাভ করেন। এ ছাড়া দেশে ও বিদেশে অনেক পুরস্কার ও সম্মাননা পেয়েছেন প্রয়াত এই শিল্পী।