নির্বাচন অবাধ ও নিরপেক্ষ হওয়া বাঞ্ছনীয়

কাজী হাবিবুল আউয়াল

নির্বাচন কমিশন পুনর্গঠন করা হয়েছে। নতুন প্রধান নির্বাচন কমিশনার হয়েছেন সাবেক সচিব কাজী হাবিবুল আউয়াল। গত ২৯ আগস্ট তিনি প্রথম আলোকে একটি বিশেষ সাক্ষাৎকার দিয়েছিলেন। মূলত প্রজাতন্ত্রের কর্মকর্তা ও জনপ্রতিনিধিদের মধ্যকার সম্পর্ক, তাঁদের দায়বদ্ধতা ও জবাবদিহি নিয়ে তিনি কথা বলেছিলেন। প্রশ্ন করা হয়েছিল নির্বাচন নিয়েও। তিনি বলেছিলেন, ‘নির্বাচন অবাধ ও নিরপেক্ষ হওয়া বাঞ্ছনীয়। সংসদে পাতানো নয়, শক্তিশালী বিরোধী দল থাকা বাঞ্ছনীয়।’ সেই নির্বাচন অবাধ ও নিরপেক্ষ করার দায়িত্ব তিনিই নিয়েছেন। পাঠকদের জন্য সেই সাক্ষাৎকারটি আবার প্রকাশ করা হলো। সাক্ষাৎকারটি নিয়েছিলেন সোহরাব হাসান

প্রশ্ন:

প্রথম আলো: জনপ্রশাসনের প্রতিনিধি, যাঁরা সরকারি কর্মকর্তা হিসেবে পরিচিত, তাঁদের সঙ্গে জনপ্রতিনিধি তথা মন্ত্রী-সাংসদ ও অন্যান্য জনপ্রতিনিধির সম্পর্ক যেমন হওয়া উচিত? দুই পক্ষের মধ্যে যে আদর্শ কর্ম সম্পর্ক থাকা উচিত, সাম্প্রতিক কালে তার ব্যাপক ব্যত্যয় ঘটছে। এর কারণ কী?

কাজী হাবিবুল আউয়াল: নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিদের মর্যাদা পদবিভেদে সরকারি কর্মকর্তাদের ঊর্ধ্বে। জনপ্রশাসনের একজন স্থানীয় বা কেন্দ্রীয় পর্যায়ের কর্মকর্তা, ক্ষেত্রমতে বিষয়টি বিবেচনায় রেখে আচরণ করবেন, এটাই প্রত্যাশিত। রাজনৈতিক সরকারব্যবস্থায় সরকারি কর্মচারীদের অনেক ক্ষেত্রেই নির্বাচিত রাজনৈতিক ঊর্ধ্বতনদের প্রতি অধিক সহনশীল ও শ্রদ্ধাশীল হতে হয়। কিন্তু কোনো এক পক্ষ যদি অসহনীয় পর্যায়ের বাড়াবাড়ি বা অসদাচরণ করে থাকে, তখন প্রতিপক্ষের ধৈর্যচ্যুতি ঘটা অস্বাভাবিক নয়। বরিশালের ঘটনাটি বিরল, নিত্যনৈমিত্তিক নয়। সরকারি বা রাষ্ট্রীয় দায়িত্বে নিয়োজিত সরকারি আমলা বা জনপ্রতিনিধি, যেই হোন না কেন, নিজ নিজ দায়িত্ব ও ক্ষমতার সীমারেখা জানবেন ও মানবেন। তাহলেই এমন অনভিপ্রেত ঘটনা পরিহার করা সম্ভব।

প্রশ্ন:

প্রথম আলো: আপনি নিজে জনপ্রশাসনের উচ্চতর পদে ছিলেন। আপনার নিজের অভিজ্ঞতা থেকে জানতে চাই, জনপ্রতিনিধিরা প্রশাসনের ওপর অন্যায্য হস্তক্ষেপ করে থাকলে কীভাবে সামাল দেওয়া হয়? সেটি সংঘাতের শুরু না সুযোগের—আপনি নিজের অভিজ্ঞতা থেকে যদি বলেন।

কাজী হাবিবুল আউয়াল: নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিরা জনগণের অনেক কাছের। জনগণের সঙ্গে তাঁদের নিবিড় সম্পৃক্ততার বিষয়টি সরকারি কর্মকর্তাদের বুঝতে হবে। স্থানীয় জনগণের চাপে জনগণের হয়ে অনেক তদবির-সুপারিশ নিয়ে সাংসদ বা স্থানীয় সরকারের প্রতিনিধিরা সরকারি কর্মকর্তাদের দ্বারস্থ হন। বিষয়টিকে সহযোগিতা, সহমর্মিতা ও আনুকূল্যের মনোভাব নিয়ে দেখতে বাধা নেই, যদি সেটা আইন বা বিধিবিধানের ব্যত্যয়ে না হয়। আমি মনে করি, অন্যায্য হস্তক্ষেপ যে অন্যায্য বা বিধিবিধানের পরিপন্থী, সেটা বুঝিয়ে বললে জনপ্রতিনিধিরা সেটা বুঝতে পারেন। বিরল দু–চারটি ক্ষেত্রে তারপরও বাড়াবাড়ি হতে পারে। ওটাকে সিস্টেম লস হিসেবে ধরে নিতে হবে। বাড়াবাড়ি ন্যায়সংগতভাবে অগ্রাহ্য করা হলে সরকারি কর্মকর্তাদের আইনি সুরক্ষা থাকে।

প্রশ্ন:

প্রথম আলো: সম্প্রতি বরিশালে ইউএনওর বাসায় হামলার ঘটনাকে কেন্দ্র করে প্রশাসন ও জনপ্রতিনিধি তথা ক্ষমতাসীন দল মুখোমুখি অবস্থানে চলে আসে। পরবর্তীকালে আমরা দেখলাম পাল্টাপাল্টি মামলা হলো। ইউএনও ও ওসিকে বদলি করা হলো। পুরো বিষয়টিকে কীভাবে দেখছেন?

কাজী হাবিবুল আউয়াল: পুরো বিষয়টি ছিল অনাকাঙ্ক্ষিত। ভেতরের বিষয় আমার জানা নেই। বাহ্যিক দৃশ্যপট নাটকীয়। অনভিপ্রেত। রাজনীতি ও জনপ্রশাসনের ওপর জনগণের সম্মানবোধ ও আস্থা ক্ষুণ্ন হয়েছে। পুরো বিষয়টির বস্তুনিষ্ঠ ও নির্মোহ তদন্ত হওয়া বাঞ্ছনীয়। কেউ–বা উভয়ই কোনো না কোনোভাবে দায়ী সাব্যস্ত হলে ব্যবস্থা গ্রহণ, প্রতীকী হলেও আবশ্যক। ভবিষ্যতের জন্য সেটা নিবারক দৃষ্টান্ত হিসেবে কাজ করতে পারে।

প্রশ্ন:

প্রথম আলো: বরিশালে অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনার পর প্রশাসন ক্যাডারের পক্ষ থেকে একটি বিবৃতি দেওয়া হয়, যাতে বরিশালের মেয়র ও তাঁর অনুসারীদের ‘দুর্বৃত্ত’ বলে আখ্যায়িত করা হয়েছে। প্রশাসনিক কর্মকর্তারা এই ভাষায় কি বিবৃতি দিতে পারেন?

কাজী হাবিবুল আউয়াল: প্রশাসন ক্যাডারের বিবৃতির পুরোটা আমি পড়িনি। কোন প্রেক্ষাপট থেকে দুর্বৃত্ত বলা হয়েছে, তা তাঁরাই জানেন। তবে একজন আমলা, শাসক বা জনপ্রতিনিধি যে দুর্বৃত্তের মতো আচরণ কখনোই করতে পারেন না, তা–ও নয়। ইতিহাসের সেই রোম সম্রাট নিরো বা কালিগুলাকে দুর্বৃত্ত বললেও কম বলা হবে।

প্রশ্ন:

প্রথম আলো: অনেকেই অভিযোগ করেন, ২০১৮ সালের নির্বাচনের পর জনপ্রশাসন ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যদের মনোভাব বদলে গেছে। তাঁদের কেউ কেউ প্রকাশ্যে বলেছেন, ‘আমরাই আওয়ামী লীগকে ক্ষমতায় এনেছি।’ জনপ্রশাসনের সাবেক কর্মকর্তা হিসেবে বিষয়টি কীভাবে দেখছেন?

কাজী হাবিবুল আউয়াল: নির্বাচন অবাধ ও নিরপেক্ষ হওয়া বাঞ্ছনীয়। সংসদে পাতানো নয়, শক্তিশালী বিরোধী দল থাকা বাঞ্ছনীয়। এতে দ্বান্দ্বিকতার মধ্য দিয়ে গণতন্ত্রের সুশাসনচর্চা হয়, নিরবচ্ছিন্ন চর্চার মাধ্যমে আদর্শ রাজনৈতিক সংস্কৃতি গড়ে ওঠে, গণতন্ত্র সুসংহত হয়। রাজনীতিবিদেরা আরও প্রাজ্ঞ, বিচক্ষণ ও দায়িত্বশীল হয়ে জনগণের প্রকৃত আস্থা ও শ্রদ্ধাভাজন শাসক হতে পারেন। তৃতীয় শক্তির উদ্ভবের সম্ভাবনা তিরোহিত হয়।

প্রশ্ন:

প্রথম আলো: জনপ্রশাসনের কর্মকর্তা প্রজাতন্ত্রের সেবক। তাঁরা নির্দিষ্ট বিধিবিধানের অধীনে কাজ করেন। কোনো দলীয় বা অদলীয় সরকার যখন তাঁদের দিয়ে কোনো অন্যায় কাজ করাতে চায়, তখন তা অগ্রাহ্য করার কোনো আইনি সুরক্ষা কি তাঁদের আছে? যদি থাকে, তাহলে তাঁরা প্রয়োগ করেন না কেন? অতীতে বিএনপি ও এরশাদ সরকারের আমলে জনপ্রশাসনের কর্মকর্তাদের সম্মিলিতভাবে প্রতিবাদী ভূমিকায় দেখেছি।

কাজী হাবিবুল আউয়াল: পাবলিক সার্ভেন্ট কথাটির অর্থ গণভৃত্য। সংবিধানে ‘পাবলিক অফিসারকে’ ‘সরকারি কর্মচারী’ বলা হয়েছে। অহংবোধ থেকে ‘কর্মকর্তা’ শব্দটি আমলাদের সৃষ্টি। জনপ্রশাসনের কর্মকর্তাদের প্রকৃত অর্থেই নিজেদের জনগণের সেবক মনে করতে হবে। নিজেদের কর্ম, দায়িত্ব, ক্ষমতা, এখতিয়ার, ইত্যাদি সম্পর্কে ওয়াকিবহাল থাকতে হবে। সরকারি কর্মচারীরা অন্যায় চাপ বা আবদার প্রতিনিয়তই অগ্রাহ্য করছেন। পর্যাপ্ত সুরক্ষা রয়েছে। এরপরও চাপ অগ্রাহ্য করার কারণে কালেভদ্রে কোনো কোনো সরকারি কর্মচারীকে অন্যায্যভাবে বদলি হতে হয়েছে। বিড়ম্বিত হতে হয়েছে। এটা সিস্টেম লস হিসেবে মেনে নিতে হবে। এরশাদ সরকারের আমলে জনপ্রশাসনের কর্মকর্তাদের সম্মিলিত প্রতিবাদী ভূমিকা উত্তম উদাহরণ নয়। সেটা একাত্তরের স্বাধীনতাযুদ্ধ ছিল না। সরকারি কর্মকর্তাদের যখন তখন রাজনৈতিক আন্দোলনে প্রকাশ্যে সম্পৃক্ত হওয়া রাজনীতির ভবিষ্যতের জন্য কল্যাণকর নয়।

প্রশ্ন:

প্রথম আলো: আপনি আইনসচিব ছিলেন। আমাদের দেশে অনেক ভালো আইন হয়, কিন্তু তার বাস্তবায়ন হয় না। এর জন্য জনপ্রশাসন কতটা দায়ী আর রাজনৈতিক নেতৃত্বের কতটা দায়?

কাজী হাবিবুল আউয়াল: আইন কাগজে থাকে। প্রয়োগ বা বাস্তবায়ন মানুষের হাতে থাকে। প্রয়োগ বা বাস্তবায়নের দায়িত্বে নিয়োজিত সরকারি কর্মচারীরা যদি সংশ্লিষ্ট আইন সম্পর্কে সম্যক অবহিত না থাকেন, তাঁদের যদি প্রয়োজনীয় প্রশিক্ষণ না থাকে, আইন প্রয়োগে প্রশাসনিক বাধ্যবাধকতা ও জবাবদিহি না থাকে, আইন প্রয়োগে সরকারি কর্মচারীদের আন্তরিকতা ও সততা না থাকে, সরকারের রাজনৈতিক সদিচ্ছা না থাকে, তাহলে কাগজের আইন কাজির গরুর মতো খাতায় থাকবে, গোয়ালে থাকবে না।

প্রশ্ন:

প্রথম আলো: রাষ্ট্রের নিরাপত্তার জন্য হুমকি নয়, এমন যেকোনো সরকারি তথ্য সাংবাদিক বা যেকোনো নাগরিক সংগ্রহ করতে পারেন। তারপরও সরকার সাংবাদিকদের বিরুদ্ধে ১৯২৩ সালের সরকারি গোপনীয়তা আইন ও ২০১৮ সালের ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে মামলা করছে। এটি কি তথ্য অধিকার ও মানুষের মৌলিক অধিকারের পরিপন্থী নয়?

কাজী হাবিবুল আউয়াল: যেকোনো বা সব তথ্য রাষ্ট্রের নিরাপত্তার জন্য হুমকি হতে পারে না। সরকারি বা বেসরকারি কোনো তথ্য রাষ্ট্রের নিরাপত্তার জন্য হুমকি না হলে সংগ্রহ ও প্রচার করার অবাধ অধিকার সাংবাদিকদের থাকা প্রয়োজন এবং আইনত তা আছে। ১৯২৩ সালের সরকারি গোপনীয়তা আইনের প্রকৃত অর্থ ও বিধান সম্পর্কে অনেকেই সঠিক অবহিত নন। সম্প্রতি একজন সাংবাদিকের ক্ষেত্রে আইনটির অপপ্রয়োগ হয়েছিল। আইনের দোষ ছিল না। প্রয়োগে ত্রুটি ছিল। রাষ্ট্র ও সরকার এক নয়, এটাও সবাইকে বুঝতে হবে। সরকার এ ক্ষেত্রে আরও খানিকটা সহনশীল হলে ভালো হয়। ২০০৯ সালের তথ্য অধিকার আইন ও ২০১৮ সালের ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে থাকা সাংঘর্ষিক অবস্থান পরীক্ষা-নিরীক্ষা করা প্রয়োজন। আমরা প্রতিনিয়তই দেখতে পাচ্ছি, সংবাদকর্মীরা নিজেদের খরচে ও প্রয়াসে অনেক তথ্য উদ্‌ঘাটন ও প্রচার করে প্রকারান্তরে রাষ্ট্র, সরকার ও জনগণের কল্যাণ সাধন করছেন। হলুদ সাংবাদিকতার বাস্তবতাও আবার অস্বীকার করা যাবে না।

প্রশ্ন:

প্রথম আলো: সম্প্রতি প্রথম আলোর সাংবাদিক রোজিনা ইসলামের বিরুদ্ধে মামলা প্রসঙ্গে বলেছিলেন, সরকার গুপ্তচরবৃত্তি ও সরকারি গোপনীয়তাকে গুলিয়ে ফেলেছে। এ রকম ঘটনা অহরহ ঘটছে। এর প্রতিকার কী।

কাজী হাবিবুল আউয়াল: ১৯২৩ সালের সরকারি গোপনীয়তা আইন প্রথম বিশ্বযুদ্ধের পটভূমিতে প্রণীত। শত্রুরাষ্ট্রের নিকট যেন রাষ্ট্রীয় গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনার গোপন তথ্য সরবরাহ না হয়, সে লক্ষ্যেই গুপ্তচরবৃত্তি নিরোধক আইনটি প্রণীত হয়েছিল। যেকোনো সরকারি তথ্য ওই আইনের বিষয়বস্তু নয়। ২০০৯ সালের তথ্য অধিকার আইনে বলা আছে কী কী তথ্য সরবরাহ করা যাবে না। ফলে সরকারি গোপনীয় তথ্য বিষয়ে কার্যত তেমন কোনো সংশয় বিদ্যমান নেই। প্রতিকার হতে পারে আইনটি সহজ করে নতুনভাবে প্রণয়ন করা। তারপরও কোনো একটি আইনের কোনো বিধান প্রয়োগে ইচ্ছাকৃত বা অজ্ঞানতাবশত ত্রুটি হতে পারে। প্রশাসনিক হস্তক্ষেপের মাধ্যমে তাৎক্ষণিক নিরসন সম্ভব না হলে দ্রুত উচ্চ আদালতের শরণাপন্ন হওয়া যেতে পারে।

প্রশ্ন:

প্রথম আলো: প্রশাসনে নিজের অভিজ্ঞতার আলোকে ট্রাজেকটরি অব এ জুডিশিয়াল অফিসার নামে আপনি একটি বই লিখেছেন। এতে প্রশাসন, বিচারব্যবস্থা ও রাজনীতির সবলতা ও দুর্বলতাগুলো চিহ্নিত করেছেন। কিন্তু আপনারা যেখানে প্রশাসনকে রেখে এসেছেন, প্রশাসন সেখানে নেই বলেই অনেকের অভিযোগ। আপনিও কি তাই মনে করেন?

কাজী হাবিবুল আউয়াল: ১৯৮১ সাল থেকে সরকারে আমার কর্মজীবনের শুরু। আইন, বিচার ও প্রশাসন ছিল আমার কর্মের চারণক্ষেত্র। বইতে আমি বিভিন্ন আঙ্গিক থেকে আমার অভিজ্ঞতা বর্ণনা করেছি। আমি মনে করি না প্রশাসন আগের জায়গায় নেই। রাজনীতির চাকায় বাধা কালের যাত্রায় সরকারের অনুসৃত নীতির ধারাবাহিকতায় প্রশাসনে নীতিনৈতিকতায় সাময়িক কিছু পরিবর্তন হয়েই থাকে। কর্তার ইচ্ছায় কর্ম হওয়া কোনো নতুন বাস্তবতা নয়।

প্রশ্ন:

প্রথম আলো: জনপ্রশাসনের কর্মকর্তারা নানা অভিজ্ঞতা ও প্রশিক্ষণের মাধ্যমে উচ্চতর পদে আসীন হন। কিন্তু রাজনীতিকদেরও এ রকম কোনো প্রশিক্ষণ নেই। এতে প্রশাসন পরিচালনায় কোনো সমস্যা হয় কি না?

কাজী হাবিবুল আউয়াল: মাননীয় মন্ত্রী, সাংসদ ও মেয়রদের জন্য ওরিয়েন্টেশন কোর্স হতে পারে। সুপ্রিম কোর্টের বর্তমান বা সাবেক বিচারক, সাবেক বা বর্তমান অ্যাটর্নি জেনারেল, অডিটর জেনারেল, বিশিষ্ট আইনজীবী, সাবেক মন্ত্রিপরিষদ সচিব, সরকার ও রাষ্ট্রবিজ্ঞানের দেশি-বিদেশি বিশিষ্ট অধ্যাপকেরা সেখানে বক্তা হতে পারেন। এতে নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিরা নিজ নিজ কর্ম ও দায়িত্ব বিষয়ে মতবিনিময়ের মাধ্যমে আরও প্রাজ্ঞ ও অভিজ্ঞ হতে পারেন। আমলাদের সঙ্গে দূরত্ব ও দ্বন্দ্ব হ্রাসে এটা সহায়ক হতে পারে।

প্রশ্ন:

প্রথম আলো: রাজনীতিকদের দুর্নীতি নিয়ে যত আলোচনা হয়, সরকারি কর্মকর্তাদের দুর্নীতি নিয়ে তত আলোচনা হয় না। অথচ সম্প্রতি প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে দেখা যায়, কানাডায় যাঁরা বেগমপাড়ায় বাড়ি করেছেন, তাঁদের ৮০ শতাংশের মালিক সাবেক আমলা। একজন সাবেক আমলা হিসেবে আপনার মন্তব্য জানতে চাইছি।

কাজী হাবিবুল আউয়াল: পুঁজিবাদী অর্থনীতিতে দুর্নীতি স্বাভাবিক। রাজনীতিতে দুর্নীতি আছে। বিপুল অর্থ ছাড়া কারও রাজনীতি করা বিদ্যমান রাজনৈতিক পরিকাঠামোতে সম্ভব নয়। দুর্নীতির মাধ্যমে অর্থ আয় সম্ভব। কিন্তু রাজনীতিবিদেরা যা আয় করেন, তা আবার জনগণের পেছনেই ব্যয় করেন। আমলাদের দুর্নীতি ভয়াবহ। আত্মকেন্দ্রিক ভোগবাদিতার জন্য। সেবাগ্রহীতাদের জীবনকে তাঁরা দুর্বিষহ করে তোলেন। তবে সরকারের রাজনৈতিক সদিচ্ছা ও দৃঢ় অঙ্গীকারের অভাব আমলাদের দুর্নীতির জন্য বহুলাংশে দায়ী। আমলারা সংখ্যায় রাজনীতিবিদদের থেকে অনেক বেশি। রাজনীতিবিদেরা সাময়িক। আমলারা স্থায়ী। সরকারের ক্ষমতা আমলাদের নথিতেই আটকানো থাকে। ক্ষমতাই দুর্নীতির উৎস। তাই আমলাদের দুর্নীতি অধিক দৃশ্যমান। তবে সব রাজনীতিবিদ দুর্নীতিপরায়ণ নন। সব সরকারি কর্মচারীও দুর্নীতিপরায়ণ নন।

প্রশ্ন:

প্রথম আলো: আপনাকে ধন্যবাদ।

কাজী হাবিবুল আউয়াল: আপনাকেও ধন্যবাদ।