নির্বাচন কমিশন গঠনে অবশেষে আইন হচ্ছে

  • অনুসন্ধান কমিটির মাধ্যমে প্রধান নির্বাচন কমিশনার এবং নির্বাচন কমিশনার নিয়োগের প্রস্তাব।

  • কে এম নূরুল হুদার নেতৃত্বাধীন বর্তমান ইসির মেয়াদ শেষ হচ্ছে আগামী ১৪ ফেব্রুয়ারি।

নির্বাচন কমিশন

সংবিধানে আইনের মাধ্যমে নির্বাচন কমিশন (ইসি) গঠনের নির্দেশনা থাকলেও স্বাধীনতার ৫০ বছরেও তা হয়নি। অবশেষে সেই আইন করে ইসি গঠন হতে যাচ্ছে। এ জন্য গতকাল সোমবার আইনের খসড়া অনুমোদন দিয়েছে মন্ত্রিসভা। যাতে এখনকার মতো অনুসন্ধান কমিটির মাধ্যমে বাছাই করে প্রধান নির্বাচন কমিশনার এবং নির্বাচন কমিশনার নিয়োগের প্রস্তাব করা হয়েছে।

গতকাল সকালে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে জাতীয় সংসদ ভবনে অনুষ্ঠিত মন্ত্রিসভার বৈঠকে ‘প্রধান নির্বাচন কমিশনার এবং নির্বাচন কমিশনার নিয়োগ আইন, ২০২২ ’-এর খসড়া অনুমোদন দেওয়া হয়। পরে দুপুরে সচিবালয়ে সংবাদ সম্মেলন করে সভার সিদ্ধান্ত জানান মন্ত্রিপরিষদ সচিব খন্দকার আনোয়ারুল ইসলাম।

এরপর সন্ধ্যায় আইনমন্ত্রী আনিসুল হকের কাছে জানতে চাওয়া হয়েছিল আসন্ন নির্বাচন কমিশন এ আইনের মাধ্যমে গঠন হবে কি না। জবাবে তিনি মুঠোফোনে প্রথম আলোকে বলেন, হ্যাঁ, হবে।

আগামী ১৪ ফেব্রুয়ারি কে এম নূরুল হুদার নেতৃত্বাধীন বর্তমান ইসির মেয়াদ শেষ হচ্ছে। ১৫ ফেব্রুয়ারি নতুন কমিশনকে দায়িত্ব নিতে হবে। ইসি পুনর্গঠন নিয়ে গত ২০ ডিসেম্বর থেকে নিবন্ধিত রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে সংলাপ করে আসছিলেন রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ। সংলাপে বেশির ভাগ রাজনৈতিক দল ইসি গঠনে আইনের পক্ষে প্রস্তাব করে বলে গণমাধ্যমে খবরে বেরিয়েছে। গতকাল ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগের সঙ্গে সংলাপের মধ্য দিয়ে শেষ হয় রাষ্ট্রপতির এ সংলাপ। আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে ১০ সদস্যের একটি প্রতিনিধিদল গতকাল বিকেলে বঙ্গভবনে সংলাপে অংশ নেয়। তাঁরাও ইসি গঠনে আইনের প্রয়োজন আছে বলে মত দেন।

আইনের খসড়া অনুমোদন দিয়েছে মন্ত্রিসভা। আইনমন্ত্রী বললেন, নতুন ইসি আইন মেনে হবে।

যা আছে আইনের খসড়ায়

এর আগে সকালে মন্ত্রিসভার বৈঠকে আইনের খসড়া চূড়ান্তভাবে অনুমোদন দেওয়া হয়। এ বিষয়ে সচিবালয়ে মন্ত্রিপরিষদ সচিব খন্দকার আনোয়ারুল ইসলাম সাংবাদিকদের বলেন, সংবিধানের ১১৮(১) অনুচ্ছেদে একটি বিধান আছে। যেখানে বলা হয়েছে রাষ্ট্রপতি প্রধান নির্বাচন কমিশনার ও নির্বাচন কমিশনারদের নিয়োগ দিতে পারেন। তারই পরিপ্রেক্ষিতে এ আইন করা হচ্ছে। এটি একটি ছোট আইন।

মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, আইনের খসড়ায় আছে, প্রধান নির্বাচন কমিশনার ও নির্বাচন কমিশনার নিয়োগের জন্য রাষ্ট্রপতির কাছে সুপারিশ দিতে একটি অনুসন্ধান কমিটি গঠন করা হবে। রাষ্ট্রপতির অনুমোদন নিয়ে এ অনুসন্ধান কমিটি হবে। এ কমিটির দায়িত্ব ও কাজ হবে যোগ্য প্রার্থীদের নাম সুপারিশ করা। ছয় সদস্যের এ অনুসন্ধান কমিটির প্রধান হিসেবে থাকবেন প্রধান বিচারপতির মনোনীত আপিল বিভাগের একজন বিচারপতি। আর সদস্য হিসেবে থাকবেন প্রধান বিচারপতির মনোনীত হাইকোর্টের একজন বিচারপতি, মহাহিসাবনিরীক্ষক ও নিয়ন্ত্রক, সরকারি কর্ম কমিশনের চেয়ারম্যান এবং রাষ্ট্রপতির মনোনীত দুজন বিশিষ্ট নাগরিক। কমিটিকে সাচিবিক সহায়তা দেবে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ। কমিটি যোগ্য প্রার্থীদের নাম সুপারিশের পর সেখান থেকে রাষ্ট্রপতি প্রধান নির্বাচন কমিশনার ও নির্বাচন কমিশনার নিয়োগ দেবেন।

ওই পদগুলোতে নিয়োগের জন্য আইনের খসড়ায় যোগ্যতার কিছু শর্তও দেওয়া হয়েছে বলে জানান মন্ত্রিপরিষদ সচিব। তার মধ্যে আছে, প্রথমত বাংলাদেশের নাগরিক হতে হবে। দ্বিতীয়ত ন্যূনতম বয়স ৫০ বছর হতে হবে এবং তৃতীয়ত গুরুত্বপূর্ণ সরকারি, আধা সরকারি, বেসরকারি বা বিচার বিভাগীয় পদে ওই সব ব্যক্তিকে কমপক্ষে ২০ বছর কাজের অভিজ্ঞতা থাকতে হবে। এসব যোগ্যতা থাকলে প্রধান নির্বাচন কমিশনার বা নির্বাচন কমিশনার হতে পারবেন। তবে এ ২০ বছরের মধ্যে কোন পদে কত বছর থাকতে হবে, তার কিছু বলা নেই।

আর এসব পদে নিয়োগে অযোগ্যতা হিসেবে বলা হয়েছে, দেউলিয়া ঘোষণা হওয়া, বিদেশি রাষ্ট্রের নাগরিকত্ব থাকা বা আনুগত্য প্রকাশ করা (তবে দ্বৈত নাগরিক হলে হওয়া যাবে), নৈতিক স্খলন হলে এবং ফৌজদারি অপরাধে অন্যূন দুই বছরের কারাদণ্ডে দণ্ডিত হলে, আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে সাজাপ্রাপ্ত হলে এসব পদে নিয়োগ পাওয়া যাবে না। এ ছাড়া কেউ প্রধান নির্বাচন কমিশনার হিসেবে অবসরে গেলে আর সেই পদে নিয়োগ পাবেন না। তবে নির্বাচন কমিশনার হিসেবে অবসরে গেলে শুধু প্রধান নির্বাচন কমিশনার হিসেবে নিয়োগ দেওয়া যাবে।

আসন্ন নতুন নির্বাচন কমিশন গঠন আইনের মাধ্যমে হবে কি না, জানতে চাইলে মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, আজকে (গতকাল) অনুমোদন দেওয়া হলো, দু-এক দিন লাগবে আইন মন্ত্রণালয়ে যেতে। সেখানে হয়তো দুই দিন লাগবে। তিনি বলেন, ‘আশা করি বেশি সময় লাগবে না। কারণ, ছোট আইন। তাড়াতাড়িই হয়ে যাবে।’

বিশেষজ্ঞ মত

নির্বাচনী ব্যবস্থা এবং ইসি নিয়ে দীর্ঘদিন ধরে কাজ করছেন সুশাসনের জন্য নাগরিকের (সুজন) সম্পাদক বদিউল আলম মজুমদার। ইসি গঠন নিয়ে আইনের খসড়ার বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি প্রথম আলোকে বলেন, ইসি গঠনে আইন করা সাংবিধানিকভাবে বাধ্যবাধকতা রয়েছে। এটি আরও আগেই হওয়া উচিত ছিল। কিন্তু কয়েক মাস আগেই সরকারের একাধিক মন্ত্রীর পক্ষ থেকে বলা হয়েছিল এবার আইন করার মতো পর্যাপ্ত সময় নেই। এখন নতুন নির্বাচন কমিশন গঠনের এক মাস আগে তড়িঘড়ি করে আইন করা হচ্ছে। এখনো তিনি আইনের খসড়াটি দেখেননি। গণমাধ্যমে যতটুকু দেখেছেন, তাতে আগের ইসি নিয়োগে বৈধতা দেওয়া হয়েছে প্রস্তাবিত আইনে। তিনি বলেন, স্বচ্ছতার ভিত্তিতে একটি সত্যিকারের কার্যকর ইসি গঠন করতে হবে।