র‍্যাবের ওপর নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহারে যুক্তরাষ্ট্রকে চিঠি

এ কে আব্দুল মোমেন ও অ্যান্থনি ব্লিঙ্কেন
ফাইল ছবি

র‍্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র‍্যাব) ও সংস্থাটির সাবেক-বর্তমান সাত কর্মকর্তার বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞা পুনর্বিবেচনার জন্য মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্থনি ব্লিঙ্কেনকে অনুরোধ জানিয়েছেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আব্দুল মোমেন।

নতুন বছরের শুভেচ্ছা জানিয়ে অ্যান্থনি ব্লিঙ্কেনকে লেখা চিঠিতে আব্দুল মোমেন এ অনুরোধ জানান।

পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা আজ রোববার জানিয়েছেন, নববর্ষের শুভেচ্ছা জানিয়ে এ কে আব্দুল মোমেন চিঠি পাঠিয়েছেন অ্যান্থনি ব্লিঙ্কেনকে।

ভবিষ্যতে দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক জোরদারের আশাবাদ ব্যক্ত করার পাশাপাশি সন্ত্রাস-জঙ্গিবাদ দমন ও মাদকবিরোধী কর্মকাণ্ডে র‍্যাবের ভূমিকার কথা চিঠিতে উল্লেখ করেছেন আব্দুল মোমেন।

অ্যান্থনি ব্লিঙ্কেনকে পাঠানো আব্দুল মোমেনের চিঠিতে র‍্যাবের বিরুদ্ধে মার্কিন নিষেধাজ্ঞা পুনর্বিবেচনার বিষয়টি রয়েছে বলে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের একটি সূত্র প্রথম আলোকে নিশ্চিত করেছে।

গুরুতর মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগে র‍্যাব ও সংস্থাটির সাবেক-বর্তমান সাত কর্মকর্তার ওপর গত বছরের ১০ ডিসেম্বর নিষেধাজ্ঞা দেয় যুক্তরাষ্ট্র। আন্তর্জাতিক মানবাধিকার দিবসে পৃথকভাবে এই নিষেধাজ্ঞা দেয় যুক্তরাষ্ট্রের ট্রেজারি ডিপার্টমেন্ট (রাজস্ব বিভাগ) ও পররাষ্ট্র দপ্তর।

নিষেধাজ্ঞার আওতায় আসা কর্মকর্তাদের মধ্যে র‍্যাবের সাবেক মহাপরিচালক বেনজীর আহমেদ রয়েছেন। তিনি এখন বাংলাদেশ পুলিশের মহাপরিদর্শক (আইজিপি)। বেনজীর আহমেদের ওপর যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশে নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে দেশটির পররাষ্ট্র দপ্তর। পাশাপাশি যুক্তরাষ্ট্রের ট্রেজারি ডিপার্টমেন্টের নিষেধাজ্ঞার আওতায়ও পড়েছেন তিনি।

এ ছাড়া র‍্যাবের বর্তমান মহাপরিচালক (ডিজি) চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুন, অতিরিক্ত মহাপরিচালক (অপারেশন্স) খান মোহাম্মদ আজাদ, সাবেক অতিরিক্ত মহাপরিচালক (অপারেশন্স) তোফায়েল মোস্তাফা সরোয়ার, সাবেক অতিরিক্ত মহাপরিচালক (অপারেশন্স) মো. জাহাঙ্গীর আলম ও সাবেক অতিরিক্ত মহাপরিচালক (অপারেশন্স) মো. আনোয়ার লতিফ খানের ওপরও নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে মার্কিন ট্রেজারি ডিপার্টমেন্ট।

এদিকে যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দপ্তর পৃথক এক ঘোষণায় বেনজীর আহমেদ এবং র‍্যাব-৭-এর সাবেক অধিনায়ক মিফতাহ উদ্দীন আহমেদের ওপর সে দেশে প্রবেশে নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে। ২০১৮ সালের মে মাসে কক্সবাজারের টেকনাফে পৌর কাউন্সিলর একরামুল হককে বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ডের মধ্য দিয়ে গুরুতর মানবাধিকার লঙ্ঘনে সম্পৃক্ততার জন্য এ দুজনের বিরুদ্ধে এ ব্যবস্থা নেওয়ার কথা জানানো হয়েছে।

যুক্তরাষ্ট্রের এই পদক্ষেপে বাংলাদেশ অসন্তোষ জানিয়েছে। ঢাকায় মার্কিন রাষ্ট্রদূত আর্ল মিলারকে গত ১১ ডিসেম্বর পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে তলব করে এ অসন্তোষের কথা জানান পররাষ্ট্রসচিব মাসুদ বিন মোমেন।

এ কে আব্দুল মোমেন মার্কিন এ নিষেধাজ্ঞাকে ‘দুঃখজনক’ বলে অভিহিত করেন।

র‍্যাবের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, র‍্যাব মানবাধিকার লুণ্ঠন করে না, মানবাধিকার রক্ষা করে চলে।

যুক্তরাষ্ট্রের নিষেধাজ্ঞার ঘোষণার পর দুই দেশের মধ্যে নানা পর্যায়ে যোগাযোগ শুরু হয়। বাংলাদেশ এ সিদ্ধান্তে বিচলিত হলেও বহুমাত্রিক সম্পর্ক এগিয়ে নেওয়ার বিষয়ে জোর দিচ্ছে।

আইন, স্বরাষ্ট্র ও পররাষ্ট্রমন্ত্রীকে বিষয়টি নিয়ে আলোচনা করে একটি জবাব দেওয়ার দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে।

গত ১৫ ডিসেম্বর সন্ধ্যায় মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্থনি ব্লিঙ্কেন ফোন করেছিলেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী আব্দুল মোমেনকে। তাঁদের সেই ফোনালাপে সম্পর্ক এগিয়ে নেওয়ার পাশাপাশি ভবিষ্যতে কোনো সিদ্ধান্ত নেওয়ার আগে বাংলাদেশকে অবহিত করার অনুরোধ করেছিলেন বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী।