নিয়ম ভেঙে শতাধিক নিয়োগের অভিযোগ, তদন্তে ইউজিসি

যাত্রার শুরুতেই নিয়োগ নিয়ে অনিয়মের অভিযোগ উঠেছে সিলেট মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ে। বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের (ইউজিসি) অনুমোদিত পদের চেয়েও শতাধিক কর্মকর্তা-কর্মচারীকে নিয়ম ভেঙে অস্থায়ীভাবে নিয়োগ দিয়েছে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। আর এসব নিয়োগে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের শীর্ষ কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে আত্মীয়করণ, স্বজনপ্রীতি, আর্থিক লেনদেনসহ বিভিন্ন রকম অনিয়মের অভিযোগ উঠেছে।

এসব অভিযোগ খতিয়ে দেখতে রোববার একটি তদন্ত কমিটি গঠন করেছে ইউজিসি। ইউজিসির সদস্য অধ্যাপক বিশ্বজিৎ চন্দের নেতৃত্বে গঠিত তিন সদস্যের এই কমিটির সদস্যরা হলেন ইউজিসির সচিব ফেরদৌস জামান ও উপপরিচালক মৌলি আজাদ (সদস্যসচিব)। ইউজিসির সচিব ফেরদৌস জামান প্রথম আলোকে বলেন, তাঁরা খুব শিগগির তদন্তের কাজে সিলেটে যাবেন।

অন্যদিকে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের স্বাস্থ্যশিক্ষা ও পরিবারকল্যাণ বিভাগের একটি সূত্র জানিয়েছে, এই স্নাতকোত্তর চিকিৎসা প্রতিষ্ঠানটি নিয়ে ওঠা কয়েকটি অভিযোগ তারাও খতিয়ে দেখছে।

দেশের চতুর্থ এই মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের যাত্রা ২০১৮ সালে। এখনো শুরু হয়নি নিজস্ব ক্যাম্পাস নির্মাণের কাজ। শুরু হয়নি শিক্ষা কার্যক্রমও। এ অবস্থায় অস্থায়ী ভিত্তিতে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে ১৭৪ জন কর্মকর্তা-কর্মচারী।

এই বিপুলসংখ্যক জনবলের বসার জায়গাও নেই অস্থায়ী কার্যালয়ে। এঁদের মধ্যে অনেককে অর্থের বিনিময়ে এবং স্বজনপ্রীতির মাধ্যমে নিয়োগ দেওয়ার অভিযোগ সম্প্রতি বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রকাশিত হয়েছে। নিয়োগপ্রাপ্তদের মধ্যে উপাচার্য ও ভারপ্রাপ্ত রেজিস্ট্রারের নিকটাত্মীয় রয়েছে বলেও খবর বেরিয়েছে।

বিশ্ববিদ্যালয়টির ভারপ্রাপ্ত রেজিস্ট্রার নঈমুল হক চৌধুরী অবশ্য প্রথম আলোর কাছে দাবি করেন, যাঁরা নিয়োগের সুযোগ পাননি, তাঁরাই এসব অভিযোগ করছেন।

ইউজিসির অনুমোদিত পদের চেয়ে অতিরিক্ত নিয়োগের বিষয়ে নঈমুল হক চৌধুরী বলেন, স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় বেতন-ভাতা খাতে একটি তহবিল দিয়েছে। সেখান থেকেই সিন্ডিকেট অনুমোদিত পদগুলোর জন্য এই টাকা ব্যবহার করা হয়েছে।

২০১৮ সালের অক্টোবর প্রতিষ্ঠিত হয় স্নাতকোত্তর চিকিৎসা প্রতিষ্ঠান সিলেট মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়। ওই বছরের নভেম্বর উপাচার্য হিসেবে নিয়োগ পান এমএজি ওসমানী মেডিকেল কলেজের তৎকালীন অধ্যক্ষ মোর্শেদ আহমদ চৌধুরী। সম্প্রতি বিশ্ববিদ্যালয়টিকে ‘বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়’ নামকরণের নীতিগত সিদ্ধান্ত নিয়েছে বিশ্ববিদ্যালয়ের সিন্ডিকেট।

বর্তমানে সিলেট নগরীর চৌহাট্টা এলাকায় অস্থায়ী ক্যাম্পাসে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনিক কার্যক্রম চলছে। তবে বিশ্ববিদ্যালয়ের স্থায়ী ক্যাম্পাস নির্মাণে নগরীর উপকণ্ঠে দক্ষিণ সুরমা এলাকায় ৮০ একর ভূমি অধিগ্রহণ করা হয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয়টিতে ভারপ্রাপ্ত রেজিস্ট্রারের দায়িত্ব পালন করছেন শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক কর্মকর্তা নঈমুল হক চৌধুরী।

ইউজিসি ও বিশ্ববিদ্যালয় সূত্রে জানা গেছে, ইউজিসি থেকে বিশ্ববিদ্যালয়টিতে প্রথম শ্রেণি থেকে চতুর্থ শ্রেণি মিলিয়ে রাজস্ব খাতে ১১৩টি পদে জনবল নিয়োগ দেওয়ার অনুমোদন দেওয়া হয়। উন্মুক্ত নিয়োগ বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে এসব পদে নিয়োগ দিতে বলে নির্দেশ দিয়েছিল ইউজিসি। এ ছাড়া ইউজিসির সিদ্ধান্ত অনুযায়ী বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে অস্থায়ী নিয়োগে নিষেধাজ্ঞা আছে। কিন্তু বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ এ পর্যন্ত মোট ১৭৪ জনকে নিয়োগ দিয়েছে। এর মধ্যে ইউজিসির অনুমোদিত পদের বিপরীতে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে ৬৪টি পদে। বাকি শতাধিক পদে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে অস্থায়ী ভিত্তিতে। আর এই অস্থায়ীভাবে নিয়োগ দিতে গিয়েই অনিয়মগুলো হয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে।