নীল-লেজ সুইচোরা

নীল-লেজ সুইচোরা। ছবিটি রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের উদ্ভিদ উদ্যান থেকে সম্প্রতি  তোলা l ছবি: লেখক
নীল-লেজ সুইচোরা। ছবিটি রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের উদ্ভিদ উদ্যান থেকে সম্প্রতি তোলা l ছবি: লেখক

হবিগঞ্জের সাতছড়ি জাতীয় উদ্যানের খানিকটা আগে চান্দুপর চা-বাগানের সামনে এসে অটোরিকশা থেকে নামলাম। চা-বাগানের বিপরীত পাশে উঁচু একটি গাছের নিচে এসে দাঁড়ালাম। বিকেলে এই টিলার কাছে নিচু জমিতে বনমোরগ নেমে আসে। হঠা ই কক-কক-কক ডাক শুনে এদিক-ওদিক খুঁজতে লাগলাম। কিন্তু চালাক এই পাখিগুলোর লাল টুকটুকে ঝুঁটির দেখাও পেলাম না। সামনের ন্যাড়া টিলাটির গায়ে অসংখ্য ছোট ছোট গর্ত দেখতে পেলাম। লক্ষ করলাম, যে উঁচু গাছটির নিচে দাঁড়িয়ে আছি, তার ওপর দিকের মরা ডালগুলোতে সরু, লম্বা ঠোঁট ও লেজের কয়েকটি পাখি বসে আছে। কিছুক্ষণ পরপর ওরা উড়ে গিয়ে শূন্য থেকে চম কার ভঙ্গিমায় পোকা ধরে আবার গাছের ডালে বসে পোকাগুলো খাচ্ছে। ডাল থেকে একটি পাখি উড়ে গিয়ে টিলার গায়ের গর্তে ঢুকে গেল। এই গর্তগুলো আসলে ওদেরই বাসা।

সুন্দর এই পাখিগুলোকে এরপর এ দেশের বহু জায়গায় দেখেছি। সর্বশেষ এ বছরের জুলাই মাসে বাচ্চাকাচ্চাসহ দেখা হলো রাজশাহীর মোহনপুরে।

এরা এ দেশের আবাসিক পাখি ‘নীল-লেজ সুইচোরা’। ইংরেজি নাম Blue-tailed Bee-eater। Meropidae পরিবারের পাখিটির বৈজ্ঞানিক নাম merops philippinus.

প্রাপ্তবয়স্ক নীল-লেজ সুইচোরার দৈর্ঘ্য ৩০ সেন্টিমিটার ও ওজন ৩৮-৫০ গ্রাম। নীল-সবুজ পালকের পাখিটির পেছনের অংশ ও লেজ নীল। চোখে কাজল টানা। গলা খয়েরি, বুকের ওপরটা বাদামি, পেট আপেলের মতো সবুজ। কোমর, লেজ ও লেজের তলা নীল। লেজের আগায় লম্বা নীল সুই-পালক রয়েছে। চোখ লালচে বাদামি থেকে গাঢ় লাল। সরু ও লম্বা কালো ঠোঁটটি নিচের দিকে বাঁকানো। পা ও পায়ের পাতা কালচে বাদামি। স্ত্রী-পুরুষ দেখতে একই রকম। অপ্রাপ্তবয়স্ক পাখির দেহের রং অনুজ্জ্বল ও ফ্যাকাশে।

নীল-লেজ সুইচোরা সচরাচর দৃশ্যমান আবাসিক পাখি। সুন্দরবনসহ দেশের প্রতিটি বিভাগের নদী-খাল-জলাশয়ের পাড়ের খোলা বালুময় এলাকা এবং সিলেট ও চট্টগ্রাম বিভাগের টিলা ও পাহাড়ি এলাকায় বাস করে। ছোট দলে বিচরণ করে। পানির সামান্য ওপর দিয়ে ওড়ে। বালুময় নদীতট বা গাছের শাখা থেকে উড়ে গিয়ে ছোঁ মেরে উড়ন্ত গঙ্গাফড়িং, বোলতা, মৌমাছি, মথ প্রভৃতি পোকামাকড় ধরে খায়। প্রায় সময়ই পানিতে ডুব দিয়ে গোসল করতে দেখা যায়। আর এভাবেই এরা দেহকে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখে। সচরাচর গভীরভাবে গলা কাঁপিয়ে পিউ-পিউ-পিউ স্বরে ডাকে।

মার্চ-জুন প্রজননকাল। এ সময় পাহাড়ের গায়ে বা নদী ও খালপাড়ে প্রায় ২ মিটার লম্বা সুড়ঙ্গ খুঁড়ে বাসা বানায়। ডিম পাড়ে ৫-৬টি। ডিমের রং সাদা। ফোটে ২১-২৬ দিনে। ২০-২৭ দিনের আগে বাচ্চারা উড়তে শেখে না। আয়ুষ্কাল প্রায় ৬ বছর।