পঞ্চগড়ে চা-বাগানে দুই বাঘ, রক্ষার উদ্যোগ বন বিভাগের
পঞ্চগড় সদর উপজেলার মুহুরীজোত এলাকায় একটি পরিত্যক্ত চা-বাগানে দুটি চিতা বাঘ অবস্থান করছে বলে দাবি করেছেন এলাকাবাসী। গত বুধবার বিকেলে ওই চা-বাগানে বাঘের আক্রমণে একটি গরু মারা যাওয়ার পরএলাকার কয়েক হাজার মানুষের মধ্যে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। বাঘ দুটি রক্ষার উদ্যোগ নিয়েছে বনবিভাগ।
পঞ্চগড় সদর উপজেলার মুহুরীজোত এলাকায় একটি পরিত্যক্ত চা-বাগানে একাধিক বাঘ অবস্থান করছে বলে দাবি করেছেন এলাকাবাসী। গত বুধবার বিকেলে ওই চা-বাগানে বাঘের আক্রমণে একটি গরু মারা যাওয়ার পর মুহুরীজোত, উষাপাড়া, বাদিয়াগছ, সাহেবীজোত এলাকার কয়েক হাজার মানুষের মধ্যে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে।
পরিত্যক্ত চা-বাগানটিতে একাধিক চিতাবাঘ অবস্থান করছে বলে স্থানীয় লোকজনের মাধ্যমে জেনেছি। তবে এখানে মা–সহ বাচ্চা বাঘও রয়েছে বলে কেউ কেউ বলেছেন। সম্ভবত এসব বাঘ ভারত থেকে এসেছে। আমরা সেখানে গিয়ে বাঘের পায়ের চিহ্নও পেয়েছি।
স্থানীয় সূত্র জানায়, প্রায় তিন মাস ধরে দুটি চিতাবাঘ চা-বাগানসহ লোকালয়ে বিচরণ করছে। তবে এ ঘটনায় স্থানীয় লোকজনকে আতঙ্কিত না হয়ে সচেতন থেকে সাবধানে চলাচল করতে বলেছেন উপজেলা প্রশাসন ও বন বিভাগের কর্মকর্তারা। ওই বাগান থেকে জীবিত অবস্থায় বাঘ ধরার পরিকল্পনা করছে বন বিভাগ। এর অংশ হিসেবে বৃহস্পতিবার দুপুরে দিনাজপুর বিভাগীয় বন কর্মকর্তা আবদুর রহমান ও পঞ্চগড় সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. আরিফ হোসেন ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন।
এ বিষয়ে আবদুর রহমান বলেন, ‘পরিত্যক্ত চা-বাগানটিতে একাধিক চিতাবাঘ অবস্থান করছে বলে স্থানীয় লোকজনের মাধ্যমে জেনেছি। তবে এখানে মা–সহ বাচ্চা বাঘও রয়েছে বলে কেউ কেউ বলেছেন। সম্ভবত এসব বাঘ ভারত থেকে এসেছে। আমরা সেখানে গিয়ে বাঘের পায়ের চিহ্নও পেয়েছি। এখন এই বাঘকে জীবিত অবস্থায় ধরতে আমরা ঢাকায় কথা বলেছি। ইতিমধ্যে ঢাকা থেকে প্রয়োজনীয় সরঞ্জামসহ একটি টিম পঞ্চগড়ের উদ্দেশে রওয়া দিয়েছে।’
স্থানীয় লোকজনের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, সদর উপজেলার সাতমেরা ইউনিয়নের মুহুরীজোত এলাকায় মালিকানা নিয়ে দুই ব্যক্তির মধ্যে দ্বন্দ্বের জেরে প্রায় দুই বছর ধরে পরিত্যক্ত অবস্থায় পড়ে রয়েছে প্রায় চার একর আয়তনের এই চা-বাগান। এতে পরিচর্যার অভাবে চা-বাগানটি জঙ্গলে পরিণত হয়েছে। প্রায় তিন মাস ধরে ওই চা-বাগানের আশপাশে মাঝেমধ্যে দুটি চিতাবাঘ দেখা যাচ্ছিল। চিতাবাঘ দুটি দিনের বেলা চা-বাগানে অবস্থান করে আর রাতে লোকালয়ে বিচরণ করে। দুই মাস আগে মুহুরীজোত এলাকার হাবিবুর রহমান নামের এক ব্যক্তির একটি ছাগল হারানোর পর তাঁদের সন্দেহ আরও বেড়ে যায়। সবশেষ গত বুধবার বিকেলে চা-বাগানের পাশের উষাপাড়া এলাকার আবুল কালাম নামের এক কৃষকের একটি গরু বাঘের আক্রমণে মারা যায়। পরে স্থানীয় লোকজন পুলিশ ও বন বিভাগকে খবর দিলে বুধবার গভীর রাতে স্থানীয় লোকজনকে সচেতনভাবে নিজ বাড়িতে অবস্থানের জন্য মাইকিং করেন বন বিভাগের কর্মকর্তারা।
মুহুরীজোত এলাকার আবদুর রাজ্জাক (৪২) বলেন, ‘৭ আগস্ট সন্ধ্যা সাড়ে সাতটার দিকে স্থানীয় দশমাইলবাজার থেকে পঞ্চগড়-বাংলাবান্ধা মহাসড়ক দিয়ে পায়ে হেঁটে আমরা কয়েকজন বাড়িতে ফিরছিলাম। এ সময় বাড়ির কাছাকাছি প্রায় আড়াই ফুট উঁচু ও চার ফুট লম্বা একটি বাঘ মহাসড়ক পার হয়ে চা–বাগানের দিকে যাচ্ছিল। পরে আমাদের ডাকে স্থানীয় লোকজন জড়ো হয়ে টর্চলাইট দিয়ে খোঁজাখুঁজি করেও বাঘটি ধরতে পারেননি।’
উষাপাড়া এলাকার আবুল কাশেম বলেন, ‘বুধবার বিকেলে আমি চা-বাগানের ভেতরের ছোট রাস্তা দিয়ে পাঁচটি গরু নিয়ে বাড়ি ফিরছিলাম। বাগান থেকে বেরিয়ে দেখি আমার একটি গরু নেই। পরে আমার ছেলে কাওসারকে নিয়ে চা-বাগানের ভেতরে গিয়ে দেখি একটি বাঘ আমার গরুটিকে মেরে তার ওপর বসে আছে। এ সময় আমরা চিৎকার দিলে বাঘটি গরুটির একটি পা কামড়ে ধরে টানতে থাকে। পরে আমরা বাঁচার জন্য একসঙ্গে অনেক চায়ের গাছ ধরে শব্দ করে ঝাঁকুনি দিলে বাঘটি গরুটির পা ছেড়ে চলে যায়।’
পঞ্চগড় সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. আরিফ হোসেন বলেন, ‘আমরা জেলা প্রশাসকের নিদের্শনায় বিষয়টি গুরুত্ব দিয়ে দেখছি। আমরা বাঘের পায়ের ছাপসহ এই এলাকায় বাঘ আছে, এমন কিছু আলামত পেয়েছি। তবে বন বিভাগের কর্মকর্তারা ইতিমধ্যে তাঁদের টিম নিয়ে কাজ শুরু করেছেন।’