চলতি বছর থেকেই পঞ্চম শ্রেণি শেষে প্রাথমিক শিক্ষা সমাপনী পরীক্ষা উঠিয়ে দেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়েছে বলে জানিয়েছেন প্রাথমিক ও গণশিক্ষামন্ত্রী মোস্তাফিজুর রহমান। তিনি বলেছেন, এ বছরের নভেম্বরেই অষ্টম শ্রেণি শেষে প্রাথমিক শিক্ষা সমাপনী পরীক্ষা হবে।
গতকাল মঙ্গলবার সচিবালয়ে মন্ত্রী সাংবাদিকদের এ কথা বলেন। তিনি বলেন, ‘আমি নিশ্চিত হয়েই বলছি, এ বছর থেকেই পঞ্চম শ্রেণি শেষে প্রাথমিক শিক্ষা সমাপনী পরীক্ষা আর থাকবে না। একেবারে অষ্টম শ্রেণি শেষে হবে এ পরীক্ষা। শিগগিরই এ সিদ্ধান্ত আনুষ্ঠানিকভাবে অনুমোদনের জন্য মন্ত্রিসভায় পাঠানো হবে।’ তিনি বলেন, অষ্টম শ্রেণি শেষে অনুষ্ঠেয় সমাপনী পরীক্ষার নাম প্রাথমিক স্কুল সার্টিফিকেট (পিএসসি) হবে কি না, তা ঠিক করবে মন্ত্রিসভা।’
পঞ্চম শ্রেণির সমাপনী পরীক্ষা বাদ দেওয়ায় পঞ্চম শ্রেণি শেষে (ষষ্ঠ থেকে অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত) যে প্রাথমিক বৃত্তি দেওয়া হতো সেটি থাকবে কি না, সে বিষয়ে এখনো সিদ্ধান্ত হয়নি বলে জানিয়েছেন মন্ত্রী।
মন্ত্রণালয়ের একজন কর্মকর্তা প্রথম আলোকে বলেন, তাঁদের যুক্তি হলো, প্রাথমিক স্তর যেহেতু অষ্টম শ্রেণি হয়ে গেছে, সুতরাং প্রাথমিক বৃত্তিও অষ্টম শ্রেণির সমাপনী পরীক্ষার ভিত্তিতেই হওয়া উচিত। কারণ, যেহেতু এখন পঞ্চম শ্রেণি শেষে আর জাতীয়ভাবে পরীক্ষা হবে না, তাই কিসের ভিত্তিতে বৃত্তি দেওয়া হবে, তা নিয়ে জটিলতার সৃষ্টি হবে।
গত সোমবার রাতে প্রাথমিক ও গণশিক্ষাসচিব হুমায়ুন খালিদ প্রথম আলোকে বলেছিলেন, প্রাথমিক ও গণশিক্ষামন্ত্রী তাঁকে নির্দেশ দিয়েছেন, এ বছর থেকেই পঞ্চম শ্রেণি শেষে সমাপনী পরীক্ষা বাতিলের জন্য মন্ত্রিসভায় যেন প্রস্তাব পাঠানো হয়।
মন্ত্রণালয় সূত্র বলেছে, মন্ত্রী সোমবার সরকারের শীর্ষ মহলের সঙ্গে এ বিষয়ে কথা বলেন। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে কথা বলেই এই সিদ্ধান্ত হয়েছে কি না, জানতে চাইলে মন্ত্রী বলেন, ‘আমরা যা বলি বা কর্তব্য পালন করি, তা যথাযথ কর্তৃপক্ষের অনুমোদন নিয়েই করি।’
গত ১৮ মে প্রাথমিক শিক্ষাকে অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত করে সরকার। এরপর প্রাথমিক শিক্ষা মন্ত্রণালয় নীতিগতভাবে সিদ্ধান্ত নিয়েছিল, হাতে সময় কম থাকায় শেষবারের মতো এ বছর পঞ্চম শ্রেণি শেষে সমাপনী পরীক্ষা নেওয়া হবে। এই সিদ্ধান্ত জানার পর এ বছর থেকেই পঞ্চম শ্রেণির সমাপনী পরীক্ষা বাতিলের দাবিতে অভিভাবকেরা কিছুদিন ধরে বিভিন্ন বিদ্যালয়ের সামনে মানববন্ধন, সংবাদ সম্মেলনসহ বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করছেন। এ ছাড়া এ বছর থেকেই কেন পঞ্চম শ্রেণি শেষে সমাপনী পরীক্ষা বাতিল করা হবে না, তা নিয়ে রুল জারি করেছেন আদালত। এ পরিপ্রেক্ষিতে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় নতুন সিদ্ধান্ত নিল।
প্রাথমিক ও গণশিক্ষামন্ত্রী বলেন, যেহেতু প্রাথমিক শিক্ষা অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত হয়ে গেল, সুতরাং প্রাথমিকে দুটি পরীক্ষার কোনো প্রয়োজন নেই।
‘প্যানেলভুক্ত সবাই নিয়োগ পাবেন’: প্রাথমিক ও গণশিক্ষামন্ত্রী সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে বলেন, বেসরকারি রেজিস্টার্ড প্রাথমিক বিদ্যালয়ের জন্য প্যানেলভুক্ত প্রার্থীদের সবাই ধীরে ধীরে প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শিক্ষক হিসেবে নিয়োগ পাবেন।
কয়েক দিন আগে জাতীয় সংসদেও মন্ত্রী ঘোষণা দেন, প্যানেলভুক্ত ২৬ হাজার জনের সবাই নিয়োগ পাবেন।
আদালতের নির্দেশে সবাইকে নিয়োগ দেওয়ার কথা থাকলেও নিয়োগ কার্যক্রম শুরু করতে গিয়ে প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর দেখতে পায়, শূন্যপদের জটিলতায় সবাইকে একসঙ্গে নিয়োগ দেওয়া সম্ভব নয়। এ নিয়ে নিয়োগবঞ্চিত প্রার্থীরা আন্দোলনে নামেন। গতকালও তাঁরা প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর ঘেরাও কর্মসূচি পালন করেন।