যৌনপল্লির মেয়েদের গান শেখান তিনি

গাইতে গাইতে পেরিয়ে গেল অনেক বছর। জনপ্রিয় ধারার সংগীতে নিজেকে আটকে রাখেননি শিল্পী ঋদ্ধি বন্দ্যোপাধ্যায়। সম্প্রতি সংগীতজীবনের দুই দশক পূর্ণ করলেন তিনি। গান গাওয়া, লেখালেখি ছাড়াও যৌনপল্লির কিশোরীদের গান শিখিয়ে সামাজিক দায়িত্ব পালন করছেন এই ‘পঞ্চকবির কন্যা’।
নিয়মিত বাংলাদেশে যাতায়াত করেন ঋদ্ধি বন্দ্যোপাধ্যায়। গান করেন বিভিন্ন মঞ্চে। চট্টগ্রামের সংগঠন রক্তকরবীতে কর্মশালা করান। শেষবার দেশে এসে বলছিলেন সাম্প্রতিক সময়ে পঞ্চকবিকে নিয়ে নিজের কাজের কথা। বিষয়ভিত্তিক লেখালেখি করেন তিনি। রজনীকান্ত সেনকে নিয়ে লিখেছেন। শিগগিরই প্রকাশিত হবে অতুলপ্রসাদ সেনকে নিয়ে তাঁর লেখা বই। বাংলাদেশ থেকে পঞ্চকবির গানের অ্যালবামও প্রকাশিত হবে শিগগিরই।
কলকাতার সোনাগাছির যৌনপল্লির মেয়েদের গান শেখানো প্রসঙ্গে সোমবার ঋদ্ধি বন্দ্যোপাধ্যায় প্রথম আলোকে বলেন, ‘এ আমার সামাজিক দায়িত্ব। সেখানকার ১৫ থেকে ২৫ বছর বয়সী মেয়েদের সপ্তাহে এক দিন গান করাই। ভালোও লাগে, দায়িত্ব পালন করাও হয়। শুধু তা-ই নয়, জেলখানার নারী কয়েদিদের গান শেখাচ্ছি। তাঁদের নিয়ে ব্যতিক্রম একটি কাজ করার পরিকল্পনা আছে।’
কলকাতায় পঞ্চকবির গান কতটা জনপ্রিয়? জানতে চাইলে ঋদ্ধি বলেন, নতুন প্রজন্ম শুনতে শুরু করেছে। তাদের সামনে তাদের মতো করে উপস্থাপন না করলে, কেন শুনবে তারা? একটি গান লেখার পেছনের গল্পটা যদি বলা হয়, তাহলে গানের প্রতি আগ্রহ তৈরি করা যায়। অনুষ্ঠানগুলোতে আমি সেটিই করি। ধরা যাক, ‘সারা সকালটি বসে বসে’ গানটির কথা। দ্বিজেন্দ্রলাল রায়ের বয়স যখন ১৯ বছর, বিয়ে করেছিলেন ১২ বছরের এক কিশোরীকে। সেটেলমেন্ট অফিসার ছিলেন তিনি। সকালে বেরিয়ে যেতেন, ফিরতেন সারা দিন পর। তাঁর বউ সারা দিন বসে বসে বকুলের মালা গাঁথত, স্বামী বাড়িতে ফিরলে পরিয়ে দিত। তখনই এ গান লেখা।
পঞ্চকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, দ্বিজেন্দ্রলাল রায়, অতুলপ্রসাদ সেন, রজনীকান্ত সেন ও কাজী নজরুল ইসলামের গান করেন ঋদ্ধি। টপ্পা, ঠুমরি, নিধু বাবুর গান, বাংলা নাটকের গানও করেন। অনেকে ছবি করার প্রস্তাব দিয়েছিলেন করা হয়নি। গান করাটাই তাঁর কাছে সহজ, সেটাই করেছেন। সারা পৃথিবীতে পঞ্চকবিকে ছড়িয়ে দেওয়া তাঁর লক্ষ্য।
সংগীতজীবনের দুই দশক পূর্তি উপলক্ষে কাল মঙ্গলবার সন্ধ্যায় কলকাতার হো চি মিন সরণির আইসিসিআরের অবনীন্দ্রনাথ ঠাকুর গ্যালারিতে গান করবেন ঋদ্ধি। গান শুনতে যাবেন সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়, নবনীতা দেবসেনসহ আরও অনেক অতিথি। পঞ্চকবির গান ছাড়াও গাইবেন বিনোদিনী, আশ্চর্যময়ী, আঙ্গুরবালার মতো শিল্পীদের গান। অনুষ্ঠানটির আয়োজন করেছে ইন্ডিয়ান কাউন্সিল ফর কালচারাল রিলেশন্স।