পদ্মা সেতুর পরামর্শক নিয়োগে যে দুর্নীতির কথা বলা হয়, তা ভুল

পদ্মা সেতু
ফাইল ছবি

পদ্মা সেতু প্রকল্পে পরামর্শক নিয়োগে দুর্নীতি হয়নি বলে মন্তব্য করেছেন এই প্রকল্পের বিশেষজ্ঞ দলের প্রধান অধ্যাপক শামীম জেড বসুনিয়া। তিনি বলেছেন, ‘(বিশ্বব্যাংকের অভিযোগ অনুযায়ী) প্রথম পরামর্শক নিয়োগে (অনিয়মের ক্ষেত্রে) যুক্ত ছিল ৩০০ কোটি টাকা। পরে দেখা গেল, এ দুর্নীতির কথা পুরোপুরি ভুল।’

রাজধানীর রমনায় ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশন মিলনায়তনে আজ শনিবার দুপুরে এক সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে শামীম জেড বসুনিয়া এ কথা বলেন। প্রবীণ প্রকৌশলীদের সংবর্ধনা দিতে এই অনুষ্ঠান আয়োজন করে ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশন বাংলাদেশ (আইইবি)।

অনুষ্ঠানে সম্মানিত অতিথির বক্তব্যে শামীম–উজ–জামান বসুনিয়া বলেন, পদ্মা সেতু নির্মাণে একটা চ্যালেঞ্জ ছিল কারিগরি। ভূমি অধিগ্রহণ, সেতু নির্মাণ, রাস্তা, পাইলিং থেকে শুরু করে সব কটি কাজই চ্যালেঞ্জের। তবে সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

শামীম-উজ-জামান বসুনিয়া বলেন, যেদিন বিশ্বব্যাংক বলেছে, পরামর্শক নিয়োগে এখানে একটা কারচুপি হয়েছে, তখনই তিনি এর বিরোধিতা করেন। বিশ্বব্যাংক চিঠি দিয়ে জানিয়েছিল, এটা (অর্থায়ন) আর সম্ভব নয়। এরপর এই সেতু যে করতে হবে, সেটি ছিল প্রধানমন্ত্রীর একক সিদ্ধান্ত।

পদ্মা সেতুর পরামর্শক নিয়োগে দুর্নীতি প্রসঙ্গে শামীম–উজ–জামান বসুনিয়া আরও বলেন, মূল সেতু নির্মাণের খরচ ১২ হাজার ৪০০ কোটি টাকা। এর মধ্যে ১১ হাজার কোটি টাকার বেশি দেওয়া হয়েছে। এই প্রকল্পে নদীশাসনের (রিভার ট্রেনিং) জন্য খরচ হচ্ছে ৮ হাজার ৭০০ কোটি টাকা, দুই দিকে সংযোগ সড়ক ও সার্ভিস এরিয়ার জন্য ১ হাজার ৯০০ কোটি টাকা এবং জমি অধিগ্রহণ বাবদ ৪ হাজার ৮০০ কোটি টাকা। আর ভ্যাট, ট্যাক্স, বিলসহ অন্যান্য খরচ ৩ হাজার কোটি টাকা।

বিশেষজ্ঞ দলের এই প্রধান বলেন, ‘পদ্মা সেতু প্রকল্পে পরামর্শক নিয়োগে দুর্নীতির একটা কথা উঠেছিল। এখানে প্যাকেজ পাঁচটি—সেতু নির্মাণ, নদীশাসন, জাজিরা অংশের সংযোগ সড়ক নির্মাণ, মাওয়া অংশের সংযোগ সড়ক নির্মাণ ও দুই পাশের সার্ভিস এরিয়া। তিনি বলেন, সেতু নির্মাণ ও নদীশাসনের জন্য একটা পরামর্শক এবং বাকি তিনটি কাজের জন্য আরেকটি পরামর্শক লাগে।’ তিনি বলেন, ‘প্রথম যখন পরামর্শক প্রতিষ্ঠান নেওয়া হলো, তখন সেই কাজে (যুক্ত ছিল) সোয়া ৩০০ কোটি টাকা। যে কথাটি বিশ্বব্যাংক বলে, সেটার সঙ্গে যুক্ত মাত্র ৩০০ কোটি টাকা। এই কথার পর অনেক কিছু হয়েছে। পরে দেখা গেল, এই দুর্নীতির কথা পুরোপুরি ভুল।’

অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন কৃষিমন্ত্রী আব্দুর রাজ্জাক। তিনি বলেন, শুধু পদ্মা সেতু নয়, বাংলাদেশের উন্নয়নে প্রকৌশলীরা অনেক ভূমিকা রেখেছেন। তাঁরা প্রধানমন্ত্রীকে সাহস দিয়েছেন, সহযোগিতা করেছেন। নিজস্ব অর্থায়নে ৩০ হাজার কোটি টাকা খরচ করে পদ্মা সেতু করা হয়েছে। তিনি আরও বলেন, এর চেয়ে গর্বের আর কী হতে পারে।এটা জাতির বড় অর্জন। দেশের উন্নয়নকাজে প্রকৌশলীদের দরকার। প্রকৌশলীদের কাজের কোনো অভাব হবে না।

অনুষ্ঠানের বিশেষ অতিথি আইইবির সভাপতি মো. নুরুল হুদা বলেন, উন্নয়নের রোল মডেলে প্রথম কাতারের সৈনিক হলেন প্রকৌশলীরা। দেশে যেসব মেগা প্রকল্প হচ্ছে, এসব বাস্তবায়ন করছেন দেশের বিশেষজ্ঞ প্রকৌশলীরা।

আইইবির চেয়ারম্যান মোল্লা মোহাম্মদ আবুল হোসেনের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে বক্তব্য দেন আওয়ামী লীগের বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিবিষয়ক সম্পাদক মো. আবদুস সবুর, আইইবির সহসভাপতি মো. নূরুজ্জামান, সাধারণ সম্পাদক কাজী খায়রুল বাশার প্রমুখ। অনুষ্ঠানে ৩৮৬ প্রবীণ প্রকৌশলীকে সংবর্ধনা দেওয়া হয়।