পদ্মা সেতু চালুর লক্ষ্য আগামী বছরের মার্চে

যানবাহন চলাচলের জন্য আগামী বছরের মার্চে পদ্মা সেতু চালু করার পরিকল্পনা নিয়ে এগোচ্ছে সরকার। সেতু চালুর সম্ভাব্য দুটি তারিখ বিবেচনায় আছে। একটি হলো ২৬ মার্চ স্বাধীনতা দিবস। আরেকটি ১৭ মার্চ বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মবার্ষিকী। সেতু বিভাগ সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।

গত বছরের ১০ ডিসেম্বর সর্বশেষ স্প্যান বসানোর মধ্য দিয়ে ৬ দশমিক ১৫ কিলোমিটার দীর্ঘ পদ্মা সেতুর পুরোটা দৃশ্যমান হয়। এর ফলে মুন্সিগঞ্জের মাওয়া ও শরীয়তপুরের জাজিরাকে যুক্ত করেছে পদ্মা সেতু। সেতু কর্তৃপক্ষ বলেছে, গত ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত সব মিলিয়ে প্রকল্পের কাজের অগ্রগতি ৮৪ দশমিক ৫০ শতাংশ। এর মধ্যে মূল সেতুর কাজ এগিয়েছে ৯২ দশমিক ৫০ শতাংশ।

সেতু চালুর বিষয়ে সেতু বিভাগের সচিব মো. বেলায়েত হোসেন গত বুধবার প্রথম আলোকে বলেন, ‘আগামী বছরের জুনের মধ্যে কাজ শেষ হবে—এটাই সিদ্ধান্ত। সে ক্ষেত্রে সরকারের পক্ষ থেকে তারিখ ঠিক করা হবে। তবে মার্চে চালুর পরিকল্পনা আছে।’

এর আগে মূল সেতুর ঠিকাদার চায়না মেজর ব্রিজ ইঞ্জিনিয়ারিং কোম্পানির (এমবিইসি) সঙ্গে চুক্তি অনুসারে প্রথমে ২০১৮ সালের ডিসেম্বরে সেতুটি চালুর সময়সীমা ঠিক করা হয়েছিল। এরপর ২০১৯, ২০২০ ও ২০২১ সালের ডিসেম্বরে চালুর ঘোষণা দেওয়া হয়। সর্বশেষ সরকারি ঘোষণায় আগামী বছর জুনের মধ্যে পদ্মা সেতু চালুর কথা বলা হয়েছে।

সেতু বিভাগের কর্মকর্তারা জানান, সরকার বিভিন্ন সময় সেতু চালুর তারিখ ঘোষণা করলেও ঠিকাদারের পক্ষ থেকে বরাবরই সেই সম্ভাবনা নাকচ করা হয়েছে। কারণ হিসেবে নদীভাঙন, সময়মতো জমি বুঝিয়ে না দেওয়া, নকশা সংশোধন ও করোনা সংক্রমণ পরিস্থিতিসহ নানা সমস্যার কথা বলেছে তারা। তবে এখন ঠিকাদারের প্রতিশ্রুতি, সরকারের চাওয়া ও কাজের অগ্রগতি—সব কাছাকাছি এসে মিশেছে। ফলে আগামী মার্চে সেতু খুলে দেওয়া সম্ভব হবে বলেই তাদের বিশ্বাস।

আগামী বছরের জুনের মধ্যে কাজ শেষ হবে—এটাই সিদ্ধান্ত। সে ক্ষেত্রে সরকারের পক্ষ থেকে তারিখ ঠিক করা হবে। তবে মার্চে চালুর পরিকল্পনা আছে।
সেতু বিভাগের সচিব মো. বেলায়েত হোসেন

সরকার চাইছে আগামী মার্চে সেতু চালু করতে। আর মূল সেতুর ঠিকাদার এমবিইসি বলছে, আগামী বছর ২৩ এপ্রিলের মধ্যে তারা কাজ শেষ করতে পারবে। পরামর্শক প্রতিষ্ঠান কোরিয়া এক্সপ্রেসওয়ে করপোরেশনের প্রতিবেদন বলছে, মূল সেতুর কাজ পরিকল্পনামতো এগোলেও নদীশাসনের কাজ কিছুটা পিছিয়ে রয়েছে।

তবে সেতু বিভাগের কর্মকর্তারা বলছেন, নদীশাসনের কাজ কিছু বাকি থাকলেও সেতু যানবাহন চলাচলের জন্য খুলে দিতে সমস্যা
হবে না।

কোন কাজ কতটা এগোল

পদ্মা সেতু দ্বিতলবিশিষ্ট। এর ওপর দিয়ে চলাচল করবে যানবাহন। আর নিচতলা দিয়ে যাবে ট্রেন। ২ হাজার ৯১৭টি কংক্রিটের স্ল্যাব বসিয়ে যানবাহনের পথ তৈরি করার কথা। গতকাল পর্যন্ত স্ল্যাব বসেছে ২ হাজার ৪৩টি। সব মিলিয়ে ৪ দশমিক ৩১ কিলোমিটার পথ তৈরি হয়েছে। আরও ১ দশমিক ৮৪ কিলোমিটার পথ তৈরি করতে হবে। গত বছর স্ল্যাব বসাতে দুটি দল কাজ করছিল। এখন চারটি দল এ কাজ করছে।

২ হাজার ৯৫৯টি স্ল্যাব বসিয়ে রেলপথ তৈরি করার কথা। এ পর্যন্ত বসেছে ২ হাজার ৪০১টি। রেলপথ তৈরিতে বিশেষ গার্ডার (স্ট্রিনজার) ব্যবহার করা হয়। নদীভাঙনের কারণে গত বছর রেলের ১৯২টি বিশেষ গার্ডার (স্ট্রিনজার) ভেসে গিয়েছিল। গার্ডারগুলো লুক্সেমবার্গ থেকে এসেছে জানিয়ে কর্মকর্তারা বলেছেন, চট্টগ্রাম বন্দর থেকে আজ সোমবার সেগুলো মাওয়ায় পৌঁছানোর কথা।

কর্মকর্তারা বলছেন, বিশেষ গার্ডারগুলো চলে আসায় রেলপথ তৈরির কাজে আর বাধা থাকল না। অন্য কাজ দ্রুত করতে স্ল্যব বসানোর জনবল বাড়ানো হয়েছে।

প্রকল্প পরিচালক মো. শফিকুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, এ বছর কাজের গতি ভালো। আর সময় বাড়ানোর প্রয়োজন হবে না।

প্রকল্পের মেয়াদ বৃদ্ধি

পদ্মা সেতু প্রকল্পের মেয়াদ শেষ হচ্ছে আগামী জুনে। সে কারণে প্রকল্পের মেয়াদ দুই বছর বাড়ানোর প্রস্তাব করেছে সেতু বিভাগ। তবে এ দফায় সময় বাড়লেও ব্যয় বাড়ছে না। নতুন করে সময় বৃদ্ধির যৌক্তিকতা হিসেবে করোনা পরিস্থিতি এবং গত বছর বন্যায় নদীভাঙনে কাজের গতি কমে যাওয়ার কথা বলা হয়েছে।

সময় বৃদ্ধির প্রস্তাব অনুমোদন পেলে প্রকল্পের মেয়াদ বেড়ে দাঁড়াবে ২০২৩ সালের জুন পর্যন্ত। তবে সেতু বিভাগের প্রস্তাবে বলা হয়েছে, সেতুর নির্মাণকাজের মেয়াদ বাড়বে এক বছর। অর্থাৎ আগামী জুনের মধ্যে কাজ শেষ হবে। সেতুর রক্ষণাবেক্ষণ ও দেনা–পাওনা মেটাতে ঠিকাদারের জন্য বাড়তি এক বছর রাখা হয়েছে।

এখন পর্যন্ত পদ্মা সেতুর ব্যয় ধরা আছে ৩০ হাজার ১৯৩ কোটি টাকা। ২০০৭ সালে পদ্মা সেতু প্রকল্প নেওয়া হয়। তখন ব্যয় ধরা হয়েছিল ১০ হাজার ১৬২ কোটি টাকা। কাজ শেষ করার কথা ছিল ২০১৫ সালে। এরপর তিনবার প্রকল্পের মেয়াদ বাড়ানো হয়েছে।