পদ্মা সেতু পূর্ণতা পাওয়ার পথে

পদ্মা সেতুর ভায়াডাক্টে (ডাঙার অংশ) পিচঢালাই করা হয়েছে
ছবি: সংগৃহীত

পদ্মা সেতু এখন পূর্ণতা পাওয়ার পথে। গতকাল বুধবার সেতুর ভায়াডাক্টে (ডাঙার অংশ) ৬০ মিটারের মতো এলাকা পিচঢালাই করা হয়েছে। ৩০ অক্টোবরের মধ্যে মূল সেতুতে পিচঢালাই শুরু হবে। এ কাজ আগামী এপ্রিলের মধ্যে শেষ করার সময়সীমা বেঁধে দেওয়া আছে। তবে এর আগেই পিচঢালাই শেষ হবে বলে প্রকল্পসংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা মনে করছেন।

পদ্মা সেতুর স্টিলের কাঠামোর (স্পেন) ওপর কংক্রিটের স্ল্যাব বসিয়ে যানবাহন চলার প্রাথমিক পথ তৈরি করা হয়। এখন এর ওপর ১০০ মিলিমিটার পুরো পিচঢালাই হবে। এরপরই সেতুর উপরিভাগের কাজ শেষ হয়ে যাবে। তখন আলোকসজ্জা, সাইড ওয়ালসহ কিছু কাজ বাকি থাকবে।

আগামী বছরের জুন মাসের মধ্যে সেতুটি যানবাহন চলাচলের জন্য উন্মুক্ত করে দেওয়ার কথা জানিয়েছে সরকার। সেপ্টেম্বর পর্যন্ত পদ্মা সেতু প্রকল্পের মোট অগ্রগতি ৮৭ দশমিক ৭৫ শতাংশ। মূল সেতুর কাজ এগিয়েছে ৯৪ দশমিক ৫ শতাংশ। অন্যদিকে, নদীশাসনের কাজের অগ্রগতি ৮৪ দশমিক ৭৫ শতাংশ। সেতু বিভাগের কর্মকর্তারা বলছেন, মূল সেতুর কাজ আগামী জুনের মধ্যেই শেষ হয়ে যাবে। নদীশাসনের কাজ কিছু বাকি থাকতে পারে। তবে এর জন্য যানবাহন চলাচলে সেতু চালু করতে কোনো বাধা নেই।

প্রকল্পসংশ্লিষ্ট সূত্র বলছে, পিচঢালাইয়ের কাজে দুটি পর্ব আছে। প্রথম পর্বে কংক্রিটের পথের ওপর চার মিলিমিটারের পানিনিরোধক স্তর বসানো হচ্ছে, যা ওয়াটারপ্রুফ মেমব্রেন নামে পরিচিত। এটি অনেকটা প্লাস্টিকের আচ্ছাদনের মতো। ইংল্যান্ড ও ইতালি থেকে এই আচ্ছাদন এসেছে। তারপর পাথর, সিমেন্ট ও বিটুমিন দিয়ে কয়েক স্তরের পিচঢালাই হবে। সব মিলিয়ে পুরু হবে প্রায় ১০০ মিলিমিটার।

প্রকল্পের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট একজন কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করে বলেন, পানিনিরোধক আচ্ছাদনও একবারে বসানো হচ্ছে না। চার স্তরে এই আচ্ছাদন দেওয়া হবে। শেষ স্তরের আচ্ছাদন দেওয়ার ৪৮ ঘণ্টার মধ্যেই চূড়ান্ত পিচঢালাই করতে হবে। সেভাবেই প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে। ওই কর্মকর্তা আরও জানান, ৭ নভেম্বর থেকে পিচঢালাইয়ের কাজ শুরুর কথা ছিল। কিন্তু তা এগিয়ে নেওয়া হয়েছে।

পিচঢালাইয়ের কাজ চলছে
ছবি: সংগৃহীত

আজ বৃহস্পতিবার সেতু বিভাগের সচিব মো. আবু বকর ছিদ্দীক এবং পদ্মা সেতু প্রকল্পের পরিচালক মো. শফিকুল ইসলাম প্রকল্প এলাকা পরিদর্শনে যাচ্ছেন। তাঁরা মূল সেতুতে পিচঢালাইয়ের কাজ শুরুর প্রস্তুতি ও ভায়াডাক্টে পিচঢালাইয়ের কাজ দেখে পরবর্তী নির্দেশনা দেবেন।

জানতে চাইলে শফিকুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, ভায়াডাক্টে পানিনিরোধক আচ্ছাদন বসানো হবে না। এ জন্য সেই অংশে আগে পিচঢালাই শুরু হয়েছে। মূল সেতুতে দু–এক দিনের মধ্যেই পিচঢালাই শুরু হবে। জাজিরা প্রান্তে প্রথম পিচঢালাই হবে।

সেতু বিভাগ সূত্র বলছে, গত ১৩ জুলাই বঙ্গোপসাগরের সন্দ্বীপ চ্যানেলে পদ্মা সেতু প্রকল্পের মালামালবাহী একটি জাহাজ ডুবে যায়। এর মধ্যে প্রায় ১ হাজার ২০০ মেট্রিক টন লোহার মালামাল ছিল। মালামালের মূল্য ১৮ কোটি টাকার মতো। শুরুতে ডুবে যাওয়া জাহাজ থেকে মালামাল উদ্ধারে চেষ্টা চালানো হয়। কিন্তু সফল হওয়া যায়নি। এ কারণে পদ্মা সেতুর রেলপথের পাশে হাঁটার পথ তৈরি ও গ্যাস পাইপলাইন বসানোর কাজে ব্যাঘাত ঘটছে। এটাকে দুশ্চিন্তার কারণ মনে করছেন প্রকল্প কর্মকর্তারা। তাঁরা বলছেন, করোনা মহামারির কারণে বিশ্বব্যাপী মালবাহী জাহাজ পরিবহন কমে গেছে। নতুন করে এসব মালামাল আনতে অনেক সময় লেগে যেতে পারে। প্রয়োজনে কার্গো বিমানে মালামাল আনার বিষয়েও আলোচনা চলছে।

পিচঢালাইয়ের কাজ চলছে
ছবি: সংগৃহীত

গত বছরের ১০ ডিসেম্বর সর্বশেষ স্প্যান বসানোর মধ্য দিয়ে ৬ দশমিক ১৫ কিলোমিটার দীর্ঘ পদ্মা সেতুর পুরোটা দৃশ্যমান হয়। এর ফলে মুন্সিগঞ্জের মাওয়া ও শরীয়তপুরের জাজিরাকে যুক্ত করেছে পদ্মা সেতু।

এর আগে মূল সেতুর ঠিকাদার চায়না মেজর ব্রিজ ইঞ্জিনিয়ারিং কোম্পানির (এমবিইসি) সঙ্গে চুক্তি অনুসারে প্রথমে ২০১৮ সালের ডিসেম্বরে সেতুটি চালুর সময়সীমা ঠিক করা হয়েছিল। এরপর ২০১৯, ২০২০ ও ২০২১ সালের ডিসেম্বরে চালুর ঘোষণা দেওয়া হয়। সর্বশেষ সরকারি ঘোষণায় আগামী বছর জুনের মধ্যে পদ্মা সেতু চালুর কথা বলা হয়েছে।

এখন পর্যন্ত পদ্মা সেতুর ব্যয় ধরা আছে ৩০ হাজার ১৯৩ কোটি টাকা। ২০০৭ সালে পদ্মা সেতুর প্রকল্প নেওয়া হয়। তখন ব্যয় ধরা হয়েছিল ১০ হাজার ১৬২ কোটি টাকা। কাজ শেষ করার কথা ছিল ২০১৫ সালে। এরপর তিনবার প্রকল্পের মেয়াদ বাড়ানো হয়েছে।